শ্রীগৌরসুন্দরের অকৃত্রিম তুলসী-সেবন লীলা
চৈঃ ভাঃ অঃ ১৫৪-১৬১
তুলসীর
ভক্তি এবে শুন মন দিয়া।
যেরূপে
কৈলেন লীলা তুলসী লাইয়া ॥
এক
ক্ষুদ্র-ভাণ্ডে দিব্য মৃত্তিকা
পুরিয়া।
তুলসী
দেখেন সেই ঘটে আরোপিয়া ॥
প্রভু
বলে,-“আমি তুলসীরে না দেখিলে।
ভাল
নাহি বাসে যেন মৎস্য বিনে জলে।
যবে
চলে সংখ্যা-নাম করিয়া গ্রহণ।
তুলসী
লইয়া অগ্রে চলে একজন ॥
পশ্চাতে
চলেন প্রভু তুলসী দেখিয়া।
পড়িয়ে
আনন্দধারা শ্রীঅঙ্গ বহিয়া ॥
সংখ্যা-নাম
লইতে যে স্থানে প্রভু বৈসে।
তথায়
রাখেন তুলসীরে প্রভু পাশে ॥
তুলসীরে
দেখেন, জপেন সংখ্যা-নাম।
এ
ভক্তিযোগের তত্ত্ব কে বুঝিবে
আন ॥
পুনঃ
সেই সংখ্যা-নাম সম্পূর্ণ করিয়া।
চলেন
ঈশ্বর সঙ্গে তুলসী লইয়া ॥
তুলসী মাহাত্ম্য
দৃষ্টাস্পষ্টাতথা
ধ্যাতা কীৰ্ত্তিতা নমিতা শ্রুতা।
রোপিতা সেবিতা নিত্যং পূজিতা তুলসী শুভা॥
নবধা
তুলসীং নিত্যং যে ভজস্তি দিনে দিনে।
যুগকোটী
সহস্রাণি তে বসন্তি হরিগৃহে ॥ (স্কন্দ পুরাণ)
তুলসী সর্বমঙ্গলময়ী প্রত্যহ তুলসীর দর্শন, স্পর্শন, ধ্যান, গুণকীর্তন, প্রণাম, গুগ শ্রবণ, রোপণ, জলসেচনাদি দ্বারা সেবন ও পূজা করলে সবরকমের কল্যাণ লাভ করা যায় । এই প্রকার নটি বিধির মাধ্যমে তুলসী সেবা করলে সহস্ৰকোটা যুগ পর্যন্ত বিষ্ণুলোকে বাস করা যায়। তুলসীর দর্শনে পাপ ও রোগ নাশ হয়, স্পর্শের ফলে শরীর শুদ্ধ হয়, জল সিঞ্চনে ভয় দূর হয়, রোপণ করার ফলে ভগবদ্ভক্তি লাভ হয় এবং শ্রীকৃষ্ণচরণে অর্পণ করার ফলে পূর্ণভগবৎ-প্রেম লাভ করা যায়, সেই তুলসীদেবীর চরণে সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি।(স্কন্ধপূরাণ)
তুলসী আরতি
প্রাতঃকালে,
মঙ্গলারতির পরে
(সন্ধ্যাকালে সন্ধ্যারতির আগে) সমবেত সকল ভক্তমণ্ডলী অবশ্যই
তুলসী বন্দনা করবেন এবং তুলসীদেবীকে প্রদক্ষিণ করবেন। প্রথমে তিনবার তুলসী
প্রণাম মন্ত্র উচচারণ সহকারে প্রণাম নিবেদন করতে হয়।
তুলসী প্রণাম মন্ত্রঃ
(ওঁ) বৃন্দায়ে তুলসী দৈব্যে প্রিয়ায়ৈ কেশবস্য চ।
বিষ্ণুভক্তি প্রদে দেবী সত্যবত্যৈ নমো নমঃ ॥
তারপর ভক্তবৃন্দতুলসী
আরতী কীৰ্ত্তন করেন,
তখন পূজারী ধুপ, ঘৃতপ্রদীপ ও পুস্পার্ঘ্য সহকারে
তুলসীদেবীর উদ্দেশ্যে আরতী নিবেদন করেন। আরতী উপকরণাদি নিবেদনের
সময়ে পূজারী একটি আসনের উপরে দাঁড়িয়ে বাম হস্তে
ঘন্টা বাজিয়ে আরতী উপকরণাদি তুলসী
দেবীকে নিবেদন করবেন এবং প্রতিটি উপকরণ তুলসীদেবীকে নিবেদনের
পরে সমবেত ভক্তদের উদ্দেশ্যে চক্রাকারে তিনবার ঘুরিয়ে নিবেদন করবেন। তুলসী
আরতীর কীৰ্ত্তন শেষ হয়ে গেলে, সমবেত ভক্তমণ্ডলী তিনবার অথবা চারবার
তুলসীদেবীকে প্রদক্ষিণ করবেন।
Read more
একাদশী পালন নিয়ম এখানে চাপ দিন
শ্রীতুলসী আরতি কীর্তন
তুলসী প্রদক্ষিণ মন্ত্রঃ
যানি
কানি চ পাপানি ব্রহ্মহত্যাদিকানি চ।
তানি
তানি প্রণশ্যত্তি প্রদক্ষিণ পদে পদে।
যখন
মানুষ শ্ৰীমতী তুলসীদেবীকে প্রদক্ষিণ করতে থাকে, তখন প্রতি পদক্ষেপে তার কৃত সকল
পাপকর্ম,
এমন কি ব্রহ্মহত্যার
পাপও বিনষ্ট হয়ে যায়।
আরোও জানুনঃ
ঘুমনা আসার কারণ ও প্রতিকারঃ এখামে চাপ দিন
মস্তিষ্ক ঠিক ঠান্ডা রাখার উপায়ঃ এখামে চাপ দিন
চুলের যত্ন কিভাবে নিতে হয়ঃ এখামে চাপ দিন
তারপরে
বাঁ হাতে পঞ্চপাত্র ধারণ করে তা থেকে ডান হাত দিয়ে শ্রীমতী তুলসীদেবীকে জল সিঞ্চন
করতে হয়।
তুলসী জলদান মন্ত্রঃ
(ওঁ) গোবিন্দৰল-ভাং দেবীং ভজচৈতন্যকারিণীম।
স্নাপয়ামি জগদ্ধাত্রীং কৃষ্ণভক্তি প্রদায়িনীম্ ।
নামহট্ট পরিচয় তুলসী চয়ন মন্ত্রঃ
(ওঁ) তুলস্যমৃতজন্মাসি সদা ত্বং কেশবপ্রিয়া।
কেশবার্থে চিনো্মি ত্বাং বরদা ভব শোভনে ॥
হে তুলসী, অমৃত থেকে আপনার জন্ম। আপনি নিয়ত ভগবান
শ্রীকেশবের অতীব প্রিয়। এখন শ্রীকেশবের পূজার উদ্দেশ্যে আপনার পত্র ও মঞ্জরী আমি
সংগ্রহ করছি কৃপা করে আমাকে বরদান করুন।
ক্ষমা প্রার্থনা মন্ত্রঃ
চরণোদ্ভতবদুঃখং চ যদ হৃদি তব বৰ্ততে।
তৎ ক্ষমস্ব ভগম্মতব বৃন্দাদেবী নমোহস্তুতে ॥
হে তুলসী দেবী আপনাকে
আমার সশ্রদ্ধ প্রণতি জানাই । হে জগন্মাতা, আপনার পত্র মঞ্জরী চয়ন কালে যদি আপনার হৃদয়ে
দুঃখের উদ্ভব করে থাকি,
তবে কৃপা করে আমাকে
ক্ষমা করুন।
তুলসী সম্পর্কে বিধি-নিষেধ
সকালে সূর্যোদয়ের আগে
কিংবা সন্ধায় সূর্যাস্তের পরে, এবং দ্বাদশী তিথিতে কখনও তুলসীপত্র চয়ন করতে নেই। আগের কিংবা সকালে তোলা তুলসীপত্র শুকিয়ে
গেলেও, তা শ্রীবিগ্রহ অর্চনায়
ব্যবহার করা চলে ।
সকল ভক্তের উচিৎ
কয়েকটি তুলসী গাছ রাখা। তবে খুব সতর্কতার সাথে এগুলোয় যত্ন করতে হবে। কারণ
তুলসী কৃষ্ণ প্রেয়সী। তুলসী গাছগুলো এমন জায়গায় রাখতে হবে যাতে মানুষ অথবা পশু তার
উপর দিয়ে হেঁটে যেতে না পারে, তাকে দুমড়ে মুচড়ে দিতে না পারে । মঞ্জরী গুলো কচি সময় হাত দিয়ে (নখ
দিয়ে নয়) ভেঙ্গে দিলে গাছটি অত্যন্ত সুস্থ ও সবল ভাবে বেড়ে উঠবে। শ্রীমতী তুলসীদেবীর
যাতে কোনও প্রকার ব্যথা সৃষ্টি না হয়, সেই বিষয়ে বিশেষ যত্নবান হতে হজত ডান হাত দিয়ে তার পত্র
চয়ণের সময়ে বামহাত দিয়ে শাখাটিকে ধরে রাখতে হয় যাতে সেটি ভেঙ্গে না যায় ।
তুলসী পত্র চয়ণের শেষে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হয়।
আরোও জানুনঃ
পিঠ ব্যথাঃ উপশম ও ঘরোয়া চিকিৎসা←এখানে চাপ দিন
কাঁধ এবং বাহুতে ব্যথার কারণ ও পরামর্শ←এখানে চাপ দিন
বুকে ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা←এখানে চাপ দিন
শুধুমাত্র বিষ্ণুতত্ত্ব
বিগ্রহসমূহ ও চিত্রপটসমূহের প্রতি তুলসী চরণে নিবেদন করা যায়। এমনকি রাধারাণী, গুরু অথবা বৈষ্ণবের
চরণে তুলসী নিবেদন করা যায় না। ভগবানকে ভোগ নিবেদনের সময়
প্রত্যেক সামগ্রীতে একটি করে তুলসী পাতা বা মঞ্জরী দিতে হয় ।
তুলসী কাষ্ঠমালা ধারণ বিধি
মা
শব্দের অর্থ আমাকে,
লা ধাতুর অর্থ দান করা
। হে হরি বল-ভে! তুমি তুলসী কাষ্ঠ নির্মিতা বৈষ্ণবের প্রিয়া, আমি তোমাকে কণ্ঠে ধারণ করিতেছি। আমাকে শ্রীকৃষ্ণ সেবা দান কর । এই তুলসী
মালা যজ্ঞসূত্রের ন্যায় সর্বদাই ধারণ করিয়া রাখিতে হয় ।
তুলসীকাষ্ঠমালাঞ্চ কণ্ঠস্থাং বহতে তু যঃ
অপ্যশৌচোহপ্যানাচারো মামেবৈতি ন সংশয় ॥
যিনি
সদাচার গ্রহণ করতঃ তুলসী কাষ্ঠের মালা ধারণ করেন, তিনি যদি কখনও কোন কারণ বশত অশুচি বা অনাচারী
হইয়া থাকেন,
আমাকেই প্রাপ্ত হইবেন, ইহাতে কোন সংশয় নাই।
তুলসীকাষ্ঠমালান্তু প্রেতরাজস্য দূতকাঃ।
দস্ট্রা নশ্যন্তি দূরেণ বাতোদ্ধ তং যথা দলম্ ॥
তুলসীকাষ্টমালাভিভূষিতা ভ্রমতে যদি।
দুঃস্বপ্নং দুর্নিমিত্তঞ্চ ন ভয়ং শস্ত্রজং কচিৎ॥
যমরাজের দৃত সকল তুলসী কাষ্ঠেরমালা দেখিয়া দূর হইতে বায়বিচলিত পত্রের ন্যায় পলায়ন করে। যদি তুলসী কাষ্ঠের মালা ধারণ করিয়া কেহ ভ্রমণ করে, তাহা হইলে তাহার কোথাও দুঃস্বপ্ন, দুর্ঘটনা ও শস্ত্র জন্য ভয় থাকে না।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন