দীক্ষা কী- দীক্ষা গ্রহণের যুক্তি: ভক্ত ও ভক্তিযোগ

দীক্ষা মন্ত্র, দীক্ষা কি, দীক্ষা নেওয়ার নিয়ম, দীক্ষা নিলে কি হয়, দীক্ষা শব্দের অর্থ কি, দীক্ষা অর্থ, দীক্ষা কেন নিতে হয়, দীক্ষিত অর্থ, দীক্ষা ও সাধনা, শিক্ষা ও দীক্ষা,

উত্তর : পারমার্থিক শ্রীগুরুদেব করুণাপূর্বক মায়া কবলিত জীবকে যে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে দিব্যজ্ঞান দান করেন বদ্ধ জীব গুরু কৃষ্ণ পাদপদ্মে আত্মসমর্পণ করে তাকে দীক্ষা বলে। শ্রীল জীব গোস্বামী পাদ উল্লেখ করেছেন, দিব্য জ্ঞানং যতো দদ্যাৎ কুর্যাৎ পাপস্য সংক্ষয়ম তস্মাৎ দীক্ষেতি সা প্রোক্তা দেশিকৈস্তত্ত্ব কোবিদৈ: (ভক্তি সন্দর্ভ-২৮৩) যা থেকে অপ্রাকৃত দিব্য জ্ঞানের উদয় হয় এবং পাপের সর্বতোরূপে ক্ষয় হয়, তত্ত্বশাস্ত্রবিৎ পণ্ডিতেরা তাকেই দীক্ষা বলে বর্ণনা করেছেন।

পারদের সংস্পর্শে রাসায়নিক ক্রিয়ার প্রভাবে কাঁসা যেমন সোনায় পরিণত হয়। তেমনি যথাযথভাবে দীক্ষা গ্রহণের ফলে মানুষ ব্রাহ্মণোচিত সমস্ত গুণাবলি অর্জন করেন। শ্রীগুরু পাদপদ্ম আশ্রয় করে, শ্রীগুরু নির্দেশে পারমার্থিক কার্যকলাপে জীবন উৎসর্গে মানুষ পরম সিদ্ধি লাভ করে। পারমার্থিক সদগুরু বৈষ্ণবের কাছে দীক্ষা গ্রহণ জীবনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অবৈষ্ণবোপদিষ্টেন মন্ত্রেণ নিরয়ৎ ব্ৰজেৎ” (::বি-/১৪৪ অবৈষ্ণবের উপদিষ্ট মন্ত্র গ্রহণ করলে নরকে গতি হয়।

আরোও পড়ুন
পাপ পরিত্রাণ : স্বর্গ - নরক
শ্রীমদ্ভগবদগীতায় আলোচ্য বিষয়

শিব পার্বতীকে বলেছেন হে দেবী শিষ্যের বিত্তধন অপহারক বহুগুরু এই জগতে আছে। কিন্তু শিষ্যের দুঃখনাশক একজন সদগুরু দুর্লভ। তাই দীক্ষা গ্রহণ করার পূর্বে একজন আদর্শ সদগুরুর সমীপবর্তী হতে হবে, যিনিই পারেন একজন আশ্রিত শিষ্যের যথাযথ তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে তাকে জন্মমৃত্যুর এই সংসার চক্র থেকে উদ্ধার করতে। মুন্ডক উপনিষদে আছে তদ্বিজ্ঞানার্থং গুরু মেববিগচ্ছেৎ, সমিৎপানি শ্ৰোত্ৰিয়ং ব্রহ্মনিষ্ঠম ভগবৎ তত্ত্ব বিজ্ঞান লাভ করার জন্য মঙ্গলাকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি উপহার হস্তে বেদ তাৎপর্য জ্ঞানী কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা দগুরুর কাছে কায় মন বাক্যে গমন করবেন।

 ভক্তি কী ? কিভাবে ভক্তিযােগে যুক্ত হওয়া যায়? – ভক্ত ও ভক্তিযোগ

উত্তর : ভগবানকে ভালোবাসাই ভক্তি। হৃষীকেন হৃষীকেশ সেবনং ভক্তি উচ্যতে _ অর্থাৎ আমাদের ইন্দ্রিয় দিয়ে ইন্দ্রিয়ের অধীশ্বর শ্রীকৃষ্ণের সেবা করার নামই ভক্তি। আমাদের ইন্দ্রিয় যখন ভগবানের সেবায় নিয়োজিত হয় তখন ভক্তির উদয় হয়। চোখ যখন ভগবানের শ্রী বিগ্রহ দর্শন করে আনন্দ পায়, জিহ্বা যখন কৃষ্ণ প্রসাদ আস্বাদন এবং কৃষ্ণ নাম নিয়ে আনন্দ পায়, কান যখন হরিকথা, ভগবানের নাম, রুপ, যশ ইত্যাদির বর্ণনা শ্রবণ করে তাতে আসক্ত হয় তখন বুঝতে হবে যে ভক্তিতে আসক্তি বাড়ছে ভক্তি সকলের হৃদয়েই রয়েছে। কেবল তাকে জাগ্রত করতে হয়।

ভক্তি এর অর্থ, এটাকে ভক্তি গীত, ভক্তি ও অতিভক্তি, ভক্তি ও বিশ্বাস, ভক্তি কাকে বলে,
সাধু সঙ্গ, নাম কীর্তন, ভাগবত শ্রবণ, মথুরা বাস, শ্রীমূর্তির শ্রদ্ধায় সেবন সকল সাধন শ্রেষ্ঠ এই পঞ্চ অঙ্গ, কৃষ্ণ প্রেম জন্মায় এই পাঁচের অল্প সঙ্গ ভক্তদের সঙ্গ করা, ভগবানের দিব্য নাম কীর্তন করা, শ্রীমগবত শ্রবণ করা, মথুরা বাস, শ্রদ্ধা সহকারে শ্রীমূর্তির সেবা করা, এই পাঁচটি সাধন অঙ্গ সমস্ত সাধন অঙ্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। এই পাঁচের অল্প প্রভাবেই কৃষ্ণ প্রেমের উদয় হয়
আরোও জানুনঃ
পিঠ ব্যথাঃ উপশম ও ঘরোয়া চিকিৎসাএখানে চাপ দিন
কাঁধ এবং বাহুতে ব্যথার কারণ ও পরামর্শএখানে চাপ দিন
বুকে ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসাএখানে চাপ দিন

                                            ভক্তি বিনা কোন সাধন দিতে নারে ফল
সব ফল দেয় ভক্তি স্বতন্ত্র প্রবল
অজা গলস্তন ন্যায় অন্য সাধন,
অতএব হরি ভজে বুদ্ধিমান জন।

ছাগলের গলায় অনেক সময় স্তনের ন্যায় বের হয়। তখন ছাগ শিশু যদি গলস্তন চুষে তবে দুধ পাবে না। ঠিক তেমনি ভক্তি অনুশীলন ছাড়া অন্য কোনো সাধন পদ্ধতি দ্বারা ভগবানকে পাওয়া যায় না, প্রীতির আদানপ্রদান ঘটে না।

পত্রং পুষ্পং ফলং তোয়ং যো মে ভক্ত্যা প্রযচ্ছতি।।
তদহং ভক্তি উপহৃতমশ্লাপি প্রতাত্মনঃ।। (গীতা-/২৬)

অর্থাৎ যদি কেউ আমাকে প্রেম ভক্তি সহকারে ফল জল অর্পণ করে সেই প্রীতি পূর্ণ উপহার আমি গ্রহণ করি।

সমস্ত খাদ্যদ্রব্য ভগবান থেকেই এসেছে। তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ তবুও কোনো জীব। যদি ভালোবেসে ক্ষুদ্র উপহারও ভগবানকে প্রীতিবশত দেন তাহলে ভক্তদত্ত দ্রব্য তিনি গ্রহণ করেন। এটি যেন গঙ্গা জলে গঙ্গা পূজা করার তো ভালোবাসার অর্থ হচ্ছে সক্রিয় সেবা। কেউ যদি বলে আমি আপনাকে ভালোবাসি কিন্তু আপনার জন্য আমি কিছুই করতে পারছি না। তাহলে সেটা ভালোবাসা নয়। কিছু উপহার দেওয়া, ত্যাগ স্বীকার করা, উৎসর্গ করা এগুলো মধ্য দিয়েই ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।

ভক্তি করতে হলে তিনটি জিনিস চাই। সেবক, সেব্য এবং সেবা। অর্থাৎ সেবা করার জন্য একজন, সেবা গ্রহণ করার জন্য একজন আর সেব্যের সাথে যুক্ত হওয়ার যে পন্থা তাই হচ্ছে সেবা। গব্যৎ সেবাকেই ভক্তি যো বলে। ইন্দ্রিয়কে নির্মল করে প্রিয়তমের যে সেবা তার ভক্তি বলে। সেবা করার ৯টি পন্থার কথা শাস্ত্রে আছে। () শ্ৰবণ () কীর্ত () স্মরণ () বন্দন () পাদসেবন () অর্চন () দাস্য () সখ্য () আত্মনিবেদন এগুলোকে একত্রে নববিধ ভক্তি বলে

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর কপায় সুদুর্লভ ভক্তি আমাদের নিকট সুলভ হয়েছে।গোলকেরও প্রেম ধন হরিনাম সংকীর্তন সেই সংকীর্তন যজ্ঞ তিনি অত্যন্ত কৃপা করে কলিহত জীবদের দ্বারে দ্বারে দিয়ে গেছেন। একমাত্র না। চোখে কম দেখা, কানে কম শোনা, হাঁটাচলায় সমস্যা যখন আয়নায় নিজের দিকে তাকানো হয় তখন পূর্বের স্মৃতি রোমন্থন করা ছাড়া কিছুই করার থাকে না। চতুর্থ সমস্যা মৃত্যু। মৃত্যু কেউ না চাইলেও আসে। এতদিন যাদের সাথে তার বন্ধন ছিল সবাইকে ছেড়ে তাকে চলে যেতে হয়। মৃত্যুকালীন যে কষ্ট তাও ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। গলায় গড় গড় শব্দ করে, শ্বাস নিতে কষ্ট হয়, চোখগুলো ভেতর থেকে বের হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। নানাবিধ ভয়, বিকট মূর্তি দর্শন হয়। এই চর্তুবিধ সমস্যাই প্রকৃত সমস্যা এবং তা এড়ানো কোনো উপায় নেই। অন্যান্য সমস্যাগুলো কৃত্রিম। এগুলো মানুষের দ্বারা সৃষ্ট।

আরোও জানুনঃ 
মানসিক চাপ, অশান্তি দূর করার উপায়:এখানে ক্লিক করুন 
ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার:এখানে ক্লিক করুন 
মস্তিষ্ক ঠিক রাখার উপায়:এখানে ক্লিক করুন 

কিন্তু জন্ম, মৃত্যু, জড়া, ব্যাধি মানুষের সৃষ্ট নয়। এগুলো দেহগত। যতক্ষণ আমরা দেহ ধারণ করব ততক্ষণই এই সমস্যা থাকবে। তাই যদি দেহ ধারণ না করা হয় তবেই এই সমস্যার সমাধান হবে। মনুষ্য দেহ দুর্লভ। কেননা অন্যান্য শরীরে ভগবানকে স্মরণ করা, সেবা করা, প্রার্থনা করা যায় না। মনুষ্য দেহ পেয়ে যদি কেউ ভগবদধাম প্রাপ্তির তো কার্য করে তবে  ভগবদগীতায় ভগবান বলেছেন মামুপেত্য তু কৌন্তেয় পূর্নজন্ম বিদ্যতে কেউ যদি আমার ধামে আসে তবে আর পুনর্জন্ম হয় না। আর যদি জন্ম না হয়। তবে জন্ম, মৃত্যু, জড়া, ব্যাধির সমস্যার সমাধান হয়। এছাড়া আর কোনো উপায়ে এই সমস্যার সমাধান হবে না। তাই যদি আমরা ভগবদ্ ভজন কা ভগবানের দিব্য নাম জপ, কীর্তন করি তবে ভগবান কৃপা পরবশ হয়ে আমাদের তার সনাতন ধামে নিয়ে যাবেন। যেখানে গেলে আর দুঃখকষ্টের জড় জগতে ফিরে আসতে হয় না।

পুজা অর্চনা নিয়ম জানতে এখানে ক্লিক করুন- 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন