শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু: কলিযুগে শ্রীচৈতন্য

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু : কলিযুগে শ্রীচৈতন্য
আজকের আলোচনায় আমরা জানতে পারবো, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কে ? কেন তাকে অগতির গতি মহাদয়ালু বলা হয়? কেন শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভু রূপে অবতীর্ণ হলেন ? ইত্যাদি আরোও অনেক। উপরিক্ত প্রশ্ন গুলোর উত্তর ক্রমান্বয়ে উত্তর ধারায় বর্ণনা করা হবে।
উত্তর
:
নন্দসুত বলি যারে ভাগবতে গাই,
সেই কৃষ্ণ অবতীর্ণ চৈতন্যগোসাঞি” (শ্রী চৈ:: আদি-/)

নন্দ মহারাজের পুত্ররূপে শ্রীমদ্ভাগবতে যার বর্ণনা করা হয়েছে সেই শ্রীকৃষ্ণ এখন শ্রীচৈতন্য (মহাপ্রভু) গোসাইরূপে অবতীর্ণ হয়েছেন। কেন শ্রীকৃষ্ণ চৈতন্য মহাপ্রভু রূপে অবতীর্ণ হলেন? এর তিনটি কারণ রয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে

শ্রী রাধায়াঃ প্রণয়মহিমা কীদৃশো বানয়ৈবা

স্বাদ্যো যেনাদ্ভুতমধুরিমা কীদৃশো বা মদীয়ঃ

সৌখ্যঞ্চাস্যা মদনুভবতঃ কীদৃশং বেতি লোভা

ত্তদ্ভাবাঢ্যঃ সমজনি শচীগৰ্ভসিন্ধৌ হরীন্দুঃ

(চৈ::আদি-/২৩০, শ্রীস্বরূপ দামোদর গোস্বমীকৃত কড়চার উক্তি)

 

অর্থাৎ শ্রী রাধার প্রেমের মহিমা কী রকম, প্রেমের দ্বারা শ্রীরাধা আমার যে দ্ভু মাধুর্য আস্বাদন করেন, সেই মাধুর্যই বা কী রকম এবং আমার মাধুর্য আস্বাদন করে শ্রীরাধা যে সুখ অনুভব করেন, সেই সুখই বা কি রকম এই সমস্ত বিষয়ে জানার লো হওয়ায় স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ শ্রীরাধার ভাব কান্তি গ্রহণ করে শ্রীচৈতন্য রূপে শচী মায়ের গর্ভসিন্ধুতে আবির্ভূত হয়েছেন। এই রাধারাণী কে?

রাধা কৃষ্ণপ্রণয়বিকৃতিত্রাদিনীশক্তিরস্মা।

দেকাত্মনাবপি ভুবি পুরা দেহভেদং গতৌ তৌ

চৈতন্যাখং প্রকটমধুনা তদ্বয়ঞ্চৈক্যমমাপ্তং

রাধাভাবদ্যুতিসুবলিতং নৌমি কৃষ্ণস্বরূপ

(চৈঃচ:আদি-/৫৫, শ্রীস্বরূপ দামোদর গোস্বমীকৃত কড়চার উক্তি)

 অর্থাৎ শ্রীরাধিকা শ্ৰীকষ্ণের প্রণয়ের বিকার স্বরূপা। সুতরাং শ্রীমতী রাধারাণী শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী (আনন্দদায়িনী) শক্তি। এই জন্য শ্রীমতী রাধারাণী শ্রীকৃষ্ণ একাত্ম হলেও তারা অনাদিকাল থেকে গোলোকে পৃথক দেহ ধারণ করে আছেন। এখন সেই দুই চিন্ময় দেহ পুনরায় একত্রে যুক্ত হয়ে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য নামে প্রকট হয়েছেন। এই বর্ণনা থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, রাধারাণী শ্রীকৃষ্ণ একই।

আরোও জানুনঃ 
মানসিক চাপ, অশান্তি দূর করার উপায়:এখানে ক্লিক করুন 
ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার:এখানে ক্লিক করুন 
মস্তিষ্ক ঠিক রাখার উপায়:এখানে ক্লিক করুন 

আত্মা দুটি পৃথক দেহ ধারণ করেছেন, আবার এই দুটি পৃথক দেহ একত্রিত হয়ে শ্রীচৈতন্যরূপে কলি যুগে নবদ্বীপে অবতীর্ণ হয়েছেন। সুতরাং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু রাধাকৃষ্ণের মিলিত তনু। ভগবানকে উপলব্ধি করা যায় ব্রহ্ম, পরমাত্মা ভগবান এই তিন রূপে। উপনিষদে যাকে নির্বিশেষ ব্রহ্মরূপে বর্ণনা করা হয়েছে মহাপ্রভুর অঙ্গকান্তি। যোগশাস্ত্রে যোগীরা যে পুরুষকে অন্তর্যামী পরমাত্মা বলে তিনিও মহাপ্রভুর অংশ বৈভব। ত্ত্ববিচারে যাকে ষড়ৈশ্বর্যপূর্ণ ভগবান বলা তিনিও শ্রীকৃষ্ণচৈতন্যেরই অভিন্ন স্বরূপ। এই জগতে শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য থেকে ভিন্ন পরতত্ত্ব আর কিছু নেই। যেহেতু চৈতন্য মহাপ্রভু রাধাকৃষ্ণের মিলিত প্রকাশ সেহেতু তিন এবং স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অভিন্ন।

শ্রীচৈতন্য দেব, শ্রী চৈতন্যদেবের মৃত্যু রহস্য, শ্রী চৈতন্যদেব কেন বিখ্যাত, শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ, শ্রীচৈতন্য নিত্যানন্দ প্রভু নিত্যানন্দ, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রভু নিত্যানন্দ, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর মৃত্যু রহস্য, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর লীলা,
দ্বিতীয় কারন চিরকাল নাহি করি প্রেমভক্তি দান, ভক্তি বিনা জগতের নাহি অবস্থান (চৈ::আদি-/১৪) ভগবান তাঁর কোনো অবতারে প্রেম ভক্তি দান করেন না। কিন্তু প্রেম ভক্তি না পেলে জীব পূর্ণতা প্রাপ্ত হয় না। সেই মহামূল্যবান প্রেমভক্তি দান করার জন্যই শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু রূপে অবতীর্ণ হয়েছেন। পাঁচ প্রকার মুক্তি রয়েছে সাষ্টি-ভগবানের তো ঐশ্বর্য লাভকরা, সারূপ্য-ভগবানের তো রূপ প্রাপ্ত হওয়া, সামীপ্য-ভগবানের পার্যদত্ব লাভ করা, সালোক্য-ভগবানের লোকে বাস করা, সাযুজ্য-ভগবানের দেহে লীন হওয়া। কিন্তু প্রেম ভক্তি এতই মূল্যবান যে এই মুক্তি সকলও প্রেমের নিকট অতি তুচ্ছ। এর দ্বারা ভক্ত ভগবানের মধ্যে এক অপ্রাকৃত রসের আদানপ্রদান হয়। ভক্ত ভগবানের সেবা করে পরম পরিতৃপ্তি লাভ করে।

সত্য, ত্রেতা, দ্বাপর, কলি এই চারটি যুগ নিয়ে এক দিব্যযুগ। এই রূপ একাত্তর দিব্যযুগে এক মন্বন্তর এই রূপ চৌদ্দ মন্বন্তরে ব্রহ্মার এক দিন। ব্রহ্মার একদিনে ১৪ জন মনু রাজত্ব করেন। এখন সপ্তম মন্বন্তর চলছে এবং বৈবস্বত নামক মনু এর পরিচালনা করছেন। স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ব্রহ্মার একদিবসে একবার প্রকট বিহার করেন। তাহলো অষ্টবিংশ চতুর্যুগে দ্বাপরের শেষে ৪৩২,০০,০০,০০০ বছর সমন্বিত ব্রহ্মার একদিনের মধ্যে ছয়জন মনুর আবির্ভাব তিরোভাব হয়, তারপর ৭ম মনুর সময়ে ভগবান কৃষ্ণ স্বয়ং এই পথিবীতে আসেন। যে দ্বাপরে কৃষ্ণ ভগবান আসেন ঠিক তার পরের কলি যুগে চৈতন্য মহাপ্রভু পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। যেহেতু কৃষ্ণ ছাড়া কেউ কৃষ্ণ প্রেম দিতে পারেন না তাই কৃষ্ণ কৃষ্ণচৈতন্য রূপে কলি যুগে অবতীর্ণ হয়েছেন।

তৃতীয় কারণঃ

যুগধর্ম প্রবর্তাইমু নাম-সংকীর্তন, চারি ভাব-ভক্তি দিয়া নাচামু ভুবন

আপনি করিমু ভক্তভাব অঙ্গীকারে, আপনি আচরি ভক্তি শিখাইমু সবারে

আপনি না কৈলে ধর্ম শিখান না যায়, এই ' সিদ্ধান্ত গীতা-ভাগবতে গায়

য্যদাচরতি শ্ৰেষ্ঠস্তত্তদেবেতরো জনঃ যৎ প্রমাণং কুরুতে লোকস্তদনুবর্ততে

এতভাবি' কলিকালে প্রথম সন্ধ্যায়, অবতীর্ণ হৈলা কৃষ্ণ আপনি নদীয়ায়

চৈতন্যসিংহের নবদ্বীপে অবতার, সিংহগ্রীব, সিংহবীর্য, সিংহের হুঙ্কার

সেই সিংহ বসুক জীবের হৃদয় কন্দরে, কলুষ-দ্বিরদ নাশে যাহার হুঙ্কারে।

প্রথম লীলায় তাঁর বিশ্বম্ভর নাম, ভক্তিরসে ভরিল, ধরিল ভূতগ্রাম

শেষলীলায় ধরে নামশ্রীকৃষ্ণচৈতন্য”, শ্রীকৃষ্ণ জানায়ে সব বিশ্ব কৈল ধন্য।

সংকীর্তন প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণচৈতন্য, সংকীর্তন যজ্ঞে তারে ভজে সেই ধন্য

সেই ' সুমেধা, আর কুবুদ্ধি সংসার, সর্ব যজ্ঞ হৈতে কৃষ্ণনামযজ্ঞ সার

ভাগবত ভারতশাস্ত্র, আগম, পুরাণ চৈতন্য-কৃষ্ণ-অবতারে প্রকট প্রমান।

প্রত্যক্ষ দেখহ নানা প্রকট প্রভাব, অলৌকিক কর্ম, অলৌকিক অনুভাব

দেখিয়া না দেখে যত অভক্তের গণ, উলুকে না দেখে যেন সূর্যের কিরণ ।।(চৈ: :)

 

শ্রীকৃষ্ণের নাম মহিমা সম্বন্ধে শিক্ষা প্রদান করে তিনি সমস্ত জগৎকে ধন্য করেছেন। যিনি সংকীর্তন যজ্ঞে মহাপ্রভুকে ভজনা করেন তিনিই সুমেধা সম্পন্ন। তিনি যে কৃষ্ণঅবতার তার অনেক প্রমাণ ভাগবত, মহাভারত, আগম পুরাণে রয়েছে। প্রত্যক্ষেও আমরা তার অনেক অলৌকিক কর্ম প্রভাব দেখতে পাই। এসব দেখেও না দেখার তো থাকে যত অভক্তগণ। ঠিক যেমন পেঁচা কখনও সূর্যের কিরণ দেখতে পায় না।

আরোও জানুনঃ
কাশি দূর করার উপায়: এখানে ক্লিক করুন
ঘুমনা আসার কারণ ও প্রতিকারঃ এখানে ক্লিক করুন
চুলকানি - চর্মরোগ উপশমঃ এখানে ক্লিক করুন

শ্রীমদভাগবতমে ১১//৩১ তম শ্লোকে করভাজন মুনি কলিযুগের মানুষ কীভাবে শাস্ত্র নির্দেশ অনুসারে কৃষ্ণভক্তি করবে এবং কে ভগবান রূপে আবির্ভূত হবেন, তার বর্ণনা করে বলেছেন, কৃষ্ণবর্ণং ত্বিষাহকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গস্ত্ৰপার্ষদ, যজ্ঞৈঃ সংকীর্তনপ্রায়ৈর্যজন্তি হি সুমেধসঃ অর্থাৎ যে পরমেশ্বর ভগবান কৃষশব্দাংশ দুটি নিরন্তর উচ্চারণ করেন, কলিযুগের বুদ্ধিমান মানুষেরা তার উপাসনার নিমিত্তে সমবেতভাবে নাম সংকীর্তন করে থাকেন। যদিও তার গাত্র বর্ণ কৃষ্ণ নয়, তবুও তিনিই কৃষ্ণ। তিনি সর্বদা তার পার্ষদ, সেবক, সংকীর্তন রূপ অস্ত্র ঘনিষ্ঠ সহচর পরিবৃত থাকেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু সর্বক্ষণ কৃষ্ণ নাম কীর্তন করেন, তার গায়ের রং গৌর বর্ণ, তিনি সর্বদা নিত্যানন্দ প্রভু, অদ্বৈতপ্রভু, গদাধর পন্ডিত প্রভু শ্রীবাস প্রভু প্রভৃতি পার্ষদ পরিবৃত থাকেন।

তার অস্ত্র হচ্ছেহরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র যা দ্বারা তিনি কাউকে প্রানে না মেরে সহ চিত্ত শুদ্ধি করেন। তিনি লুপ্তপ্রায় ভগব্দভক্তি পুনরায় প্রবর্তন করেছেন। তিনি দয়ালু যে অকাতরে কৃষ্ণপ্রেম বিতরণ করেন। ভ্রমর যেমন পদ্মফুলের প্রতি অনেক হয় ঠিক সেই ভাবে সকলের তার পাদপদ্মে আকৃষ্ট হওয়া উচিত। তিনি এতই দয়ালু যে,

অর্পিতচরীং চিরাং করুণয়াবর্তীৰ্ণঃ কলৌ,

সমর্পয়িতুমুন্নতোজ্বলরসাং স্বভক্তিশ্রিয়

হরিঃ পুরটসুন্দরদ্যুতিকদম্বসন্দীপিতঃ,

সদা হৃদয়কন্দরে স্কুরতু বঃ শচীনন্দনঃ।

 

পূর্বে যা অর্পিত হয়নি এমন উন্নত উজ্জ্বল রসময়ী নিজের ভক্তি সম্পদ দান করার জন্যই তিনি করুণাবশত কলি যুগে অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি কেবল স্বর্গ বা মোক্ষ প্রাপ্তির পথ দেখাননি। তিনি দেখিয়ে গেছেন কীভাবে ব্রজ গোপীকাদের অনুগত হয়ে কৃষ্ণ ভক্তি অনুশীলন করতে হয়। বেদেরও গোপ্য যে কৃষ্ণ প্রেম এবং ভুক্তি, মুক্তি যা কৃষ্ণ সাধককে দেন কিন্তু নিজে বাঁধা পড়ে যাবেন বলে যে কৃষ্ণ প্রেম তিনি কাউকে দেন না, সেই কৃষ্ণ প্রেম মহাপ্রভু জীবের দ্বারে দ্বারে গিয়ে অকাতরে প্রদান করেছেন। শিব ব্রহ্মা আদি দেবতারা পর্যন্ত এই প্রেম সম্পদ প্রাপ্ত হওয়ার জন্য বাঞ্ছা করে। তিনি কারও যোগ্যতা বিচার করেননি। কারও বর্ণ, জাতি, ধর্ম, শীল ইত্যাদি যাচাই করেননি। যারে দেখেছেন তারেই কৃষ্ণ প্রেম প্রদান করেছেন। তিনি কাউকে কেবলমাত্র কৃপা দৃষ্টি নিক্ষেপের দ্বারা, কাউকে কেবল স্পর্শের দ্বারা আবার কাউকে কৃষ্ণ উপদেশের দ্বারা এই অমূল্য সম্পদ দান করেছেন।

কে বড় দাতা তা আমরা এই ভাবে বিবেচনা করতে পারি যে তিনি কী বস্তু দিচ্ছেন এবং কাকে দিচ্ছেন। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু এই জন্যই সর্বশ্রেষ্ঠ দাতা কেননা তিনি গোলকের প্রেমধন হরিনাম সংকীর্তনহরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরেযা মহামূল্যবান প্রকৃতপক্ষে যার মূল্য পর্যন্ত নির্ধারণ করা যায় না এবং যা প্রাপ্ত হলে জীবের আর কোনো বস্তু পাওয়ার প্রয়োজন হয় না তিনি সে সম্পদ জীবের দ্বারে দ্বারে গিয়ে ধনী, গরিব, সুখী, দুখী, জাতি, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে প্রদান করেছেন। মেঘের পর্যন্ত সময় না হলে বৃষ্টি দেয় না, মাও না কান্না করলে সন্তানকে দুধ দেন না, চন্দ্র সুধা বর্ষণ করে কিন্তু তা কেবল রাতে দিনে নয়, কিন্তু শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু জীব না চাইলেও সকলকে ডেকে ডেকে পঞ্চম পুরুষার্থ কৃষ্ণ প্রেম প্রদান করেছেন। তাই তিনি মহাবদান্য অবতার

আরোও জানুনঃ
পিঠ ব্যথাঃ উপশম ও ঘরোয়া চিকিৎসাএখানে চাপ দিন
কাঁধ এবং বাহুতে ব্যথার কারণ ও পরামর্শএখানে চাপ দিন
বুকে ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসাএখানে চাপ দিন

লোচন দাস ঠাকুর গেয়েছেন দেখ ওরে ভাই ত্রিভুনে নাই এমন দয়াল দাতা, পশুপাখি ঝুরে পাষাণবি শুনে যার গুন গাথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর দয়া যদি কেউ বিচার করে দেখেন তবে তিনি সত্যি সত্যি চমকৃত হবেন। তিনি কেবল জীবের মঙ্গলের জন্যই সন্ন্যাস গ্রহণ করে পব্রজে সমস্ত ভারত বর্ষ জুড়ে কৃষ্ণ নাম প্রচার করেছেন। তাই প্রবোধানন্দ সরস্বতীপাদ বলেছেন, “শ্রী নৃসিংহ, রাম, কৃষ্ণাদি মূত্তিতে রাক্ষস দৈত্যকুল বিনাশ কার্যই বা কি অধিক? কপিল আদি মূৰ্ত্তিতে যো মার্গ প্রদর্শনই বা কি অধিক? পুরুষাদি মূর্তিতে সৃষ্টি কার্যই বা কি অধিক? যাহা অন্য কোন অবতারে প্রকটিত হয় নাই, এই কলি যুগে প্রেমোজ্জ্বল মহা ভক্তিপথ  প্রদর্শিকা সেই ভগবান শ্রীচৈতন্য মূর্তিকে আমরা বন্দনা করি" এমন পাষান ত্রিজগতে নাই যিনি চৈতন্য মহাপ্রভুর দয়া বিচার করে দেখে মোটে কাদবে না ভূমিতে গড়াগড়ি দিবেন না। তিনি হচ্ছেন পতিত পাবন। আমরা যারা পতিত তাদের উদ্ধার করার জন্যই তার অবতার।

নিত্য কর্ম জানতে এখানে ক্লিক করুন-

কে আর করিবে দয়া পতিত দেখিয়া, পতিত দেখিয়া কে বা উঠিবে কান্দিয়াপাপী তাপী যত ছিল, হরি নামে উদ্ধারিল তার সাক্ষী জগাই মাধাই। যত পাপী তাপী ছিল সবাইকে তিনি হরিনাম দিয়ে উদ্ধার করছেন এবং জগাই মাধাই তার জ্বলন্ত উদাহরণমেরেছিস কলসির কানা, তাই বলে কি প্রেম দিব নাতিনি মার খেয়েও জীবের কল্যাণের জন্য হরিনাম বিলিয়েছেন। আজানুলম্বিত ভূজৌ কনকাবদাতৌ, সংকীতনৈক পিতরৌ কমলায়তাক্ষৌ বিশ্বম্ভরে দ্বিজবরৌ যুগধর্মপালৌ, বন্দে জগৎপ্রিয়করৌ করুনাবতারে।

কবে শ্রীচৈতন্য মোরে করবেন দয়া, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম কাহিনী, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর জন্ম লীলা,
(চৈতন্য ভাগবত) অনুবাদ-যাদের বাহুদ্বয় হাঁটু পর্যন্ত প্রসারিত, দেহ স্বর্ণাভ উজ্জল জ্যোতি বিকীরণকারী, চক্ষু পদ্মফুলের পাপড়ির তো বিস্তৃত, যারা ব্রাহ্মণদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ, যুগধর্মের পালক, বিশ্বের মহান ভরণপোষণকারী, ভগবানের মহাবদান্য পরম। করুণাময় অবতার যারা হরিনাম যজ্ঞের প্রবর্তক সেই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু শ্রীনিত্যানন্দ প্রভুকে আমি বন্দনা করি।

অগত্যেকগতিং নত্ব হীনার্থাধিকসাধকম্
শ্রীচৈতন্যং লিখ্যতেহস্য প্রেমভক্তিবদান্যতা।

অর্থাৎ, ভগবান শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু হচ্ছেন অগতির গতি, পতিতপাবন, পরমার্থ জ্ঞানহীনের জীবনে তিনি একমাত্র আশার লো সেই মহাবদান্য প্রেমভক্তি প্রদানকারী মহাপ্রভুর জয়গান করি।


বি: দ্র: চৈতন্য ভাগবত, শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত প্রভৃতি বাংলা শাস্ত্র গ্রন্থ সমূহ যদি আমরা না পড়ি তবে মহাপ্রভুর লীলা সম্বন্ধে, মহাপ্রভুর দয়া সম্বন্ধে, সনাতন ধর্মের মূল দর্শন সম্বন্ধে আমরা অজ্ঞই থেকে যাব। বাংলা ভাষী হয়ে যদি কেউ এই দুটি গ্রন্থ না পড়ে থাকেন তবে তাদের জীবনে গৌরব করার তো কী আছে? কেননা চৈতন্য ভাগবত, চৈতন্য চরিতামৃত কেবল পবিত্র ধর্মগ্রন্থই নয়, সাহিত্য হিসেবেও এই দুটি গ্রন্থ আমাদের বাংলা সাহিত্যকে এক অতি উচ্চ আসন প্রদান করেছে। মধ্য যুগে যখন মানুষ কেবল ফারসি, আরবি ভাষা শিক্ষা গ্রহণ করত, ধর্ম গ্রন্থগুলো ছিল আরবি, ফারসি সংস্কৃত ভাষায় তখন কেবলমাত্র বৈষ্ণব কবিরাই বাংলা ভাষায় চরিত গ্রন্থ, ভজন, কীর্তন রচনা করে গেছেন। যার ফলে বাংলা ভাষা সমাজে আজও টিকে আছে।

আরোও জানুনঃ
অসুস্থ মা শিশুকে বুকের দুধ পান←এখানে চাপ দিন
শিশু ও নবজাতকদের 10 রোগ←এখানে চাপ দিন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন