নিত্যকর্ম :
নিত্যকর্ম হচ্ছে প্রতিদিনের কর্ম, আমাদের প্রতিদিন যা করা উচিত তাই নিত্যকর্ম। আমাদের এই ক্ষণিকের মানবজীবন দেওয়া হয়েছে কৃষ্ণভজনা করে চিন্ময় জগতে চলে যাওয়ার জন্য। আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের সম্পর্কে বলেছেন, (গীতা, ৪/৪০), “অজ্ঞ ও শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তি কখনই ভগবদ্ভক্তি লাভ করতে পারে না। সন্দিগ্ধ চিত্ত ব্যক্তি ইহলোকে সুখভোগ করতে পারে না এবং পরলোকেও সুখভোগ করতে পারে না।” কষ্ণভক্ত পরিবার দরকার পরিবারে মাত্র একজন যদি কৃষ্ণভক্ত না হয়, তবে পায়ে কাটা ফোটার মত অবস্থা হয়। আমাদের ২৪ ঘণ্টাই কৃষ্ণভাবনায় যুক্ত থাকার চেষ্টা করা উচিত, এমন কি ব্যস্ত সময়েও একটু অবসরে কৃষ্ণ সেবায় তৎপর হতে হবে। আমরা যখন কষ্ণগতপ্রাণ হব, নিঃস্বার্থ ভাবে কৃষ্ণসেবা করতে পারব, তখন আমরা কৃষ্ণের কাছে যাবার যোগ্যতা অর্জন করব। এইভাবে সারা জীবন চলতে থাকলে এজ জীবনেও সুখি হতে পারব এবং পরকালেও সুখি হতে পারব। নীচে কিছু করণীয় দেওয়া হল, যা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্য প্রযোজ্য। কেউ যদি আরো বেশি ভগবানের সেবা করতে পারে সেটা আরো ভালো। আর কখনোই ভগবানের সেবা করার সময় ভাবা উচিত নয়, আমার সময় নষ্ট হচ্ছে বরং আমি সময়ের যথার্থ সদ ব্যবহার করতেছি, কৃষ্ণসেবা ছাড়া যা করা হয় তাই সময়ের অপব্যবহার । তাই যখন যতটুকুই সম্ভব নিজেকে কৃষ্ণভাবনায় যুক্ত করা উচিত।
১
। প্রতিদিন ব্রাহ্ম মুহুর্তে ঘুম থেকে উঠা উচিত অর্থাৎ ভোর চারটায়।
২। ঘুম থেকে উঠে মল-মূত্র ত্যাগ করে, দাত মেজে তারপরে স্নান
করতে হয়। এরপর
যথাযথভাবে পরিষ্কার
পরিচ্ছন্ন হয়ে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়।
৩। এরপরে শ্রীগুরু প্রণাম, শ্রীকৃষ্ণপ্রণাম, পঞ্চতত্ত্ব প্রণাম করে
তুলসী আরতি করতে হয় বিভিন্ন মঠ-মন্দিরে মঙ্গল আরতি, নৃসিংহ আরতি হয়ে থাকে, সুযোগ পেলে সেখানে অংশ
গ্রহণ করা উচিত।
৪। সারে চারটার মধ্যে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয় এবং পাঁচটার মধ্যে বিগ্রহ
জাগরণ আরতি শেষ করে জপ শুরু করতে হয় । গৃহী ভক্তরা তাদের ঠাকুর ঘরেই পারমার্থিক অনুশীলন করবে।
৫। পাঁচটা থেকে সাতটা পর্যন্ত এক টানা হরে কৃষ্ণ জপ করা উচিত। এতে ১৬ মালা
জপ করা হয়ে যায়। যদি ব্যস্ততার কারণে সকালে ১৬ মালা শেষ না হয়ে থাকে, তবে দিনের অন্য কোন
সময়ে সুযোগ মত শেষ করে নিতে হয়।
৬। জপ শেষ করার পর ভগবানের গ্রন্থ (যেমন-ভাগবত) পাঠ বা শ্রবণ করতে হয়।
৭। গ্রন্থ শেষ করার পর শরীরিক সুস্থতার জন্য কেউ প্রাতঃভ্রমণে বের হতে
পারে।
৮। যদি কোন কারণ বশত হঠাৎ কোন দিন ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়, তবে ঘুম থেকে উঠেই
প্রাতঃকর্ম অর্থাৎ মল-মূত্র ত্যাগ, দাঁত মাজা, স্নান, তারপর শুরু করতে হয়।
মনে রাখা উচিত সর্বনিম্ন একমালা জপ না করে জলও স্পর্শ করা উচিত নয়।
৯। সকাল-দুপুর-রাত্রীতে
তিনবেলাই ভগবানকে নিবেদিত প্রসাদই, শুধ সেবন করতে হয়।
ভগবানকে নিবেদন করার জন্য ভক্ত নিজেই রন্ধন করতে পারে।
১০। সন্ধ্যার সময় মন্দিরে বা গৃহে (কারন, বশত রাস্তায়) সমবেত
ভাবে একই সুরে এবং একটু উচ্চ স্বরে ১
মালা অর্থাৎ ১০৮ বার হরে কৃষ্ণ জপ মহামন্ত্র করতে হয় । কখনোই সন্ধ্যার সময় জপ করা
থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। সন্ধ্যার জপ করার সময় সূচি (জানুয়ারি=৫-২৬ মিনিট, ফেব্রুয়ারি= ৫-৪৪
মিনিট,
মার্চ=
৫-৫৬,
এপ্রিল = ৬-০৬, মে= ৬-২১, জুন = ৬-৩১, জুলাই = ৬-৩১, আগস্ট = ৬-১৬, সেপ্টেম্বর = ৫-৫৬, অক্টোবর = ৫-২৬, নভেম্বর = ৫-০৬, ডিসেম্বর = ৫-০৯ মিনিট।
১১। জপ করার পর তুলসী আরতি ও হরে কৃষ্ণ কীৰ্ত্তন করা উচিত। তারপর গীতা পাঠ
করা উচিত।
১২। ঘুমানোর সময় দাঁত মেজে হরে
কৃষ্ণ জপ করতে করতে ঘুমানো উচিত।
১৩। কখনো যদি মালা হাতের কাছে না থাকে, তবে কর গুনে জপ করা
যায় আবার সময় বুঝে না গুণেও জপ করা যায়, তবে মালাতেই উত্তম।
১৪। অবসর সময় পেলে বা কর্ম বিরতীর সময়, জপ, কীৰ্ত্তন, কৃষ্ণ বিষয়ক গ্রন্থ
পাঠ,
কৃষ্ণ কথা শ্রবণ, বা প্রচার করার মাধ্যমে
সময়ের সদব্যবহার করা উচিশ্ন
১৫। যাদের উপনয়ন হয়েছে, তারা তিনবেলা সন্ধ্যা
গায়িত্রী পাঠ করবে। যদি কোন বেলা বাদ পড়ে যায়, তবে পরের বেলা দুইবার
পাঠ করবে।
১৬। একাদশী অবশ্যয়ই পালন করতে হয় এবং একাদশীর দিন পচিশমালা জপ করা উচিত।
১৭। যাদের প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণ সময় রয়েছে বা যারা অবসর প্রাপ্ত, তারা প্রতিদিন ২০, ৩০, ৫০ বা আরো অধিক মালা জপ করে
সময়ের সদ-ব্যবহার করতে পারে।
১৮। সর্বপরি ২৪ ঘণ্টায়ই কৃষ্ণভাবনায় যুক্ত থাকতে হয়। উপরের যে নিয়মগুলো রয়েছে, কেউ তার বেশিও নিজেকে কৃষ্ণের সেবায় নিয়োজিত করতে পারে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন