সিঁদুর পরার মাধ্যমে ইহাই প্রকাশিত হয় যে নারীটি বিবাহিত। সিঁদুর পরার মাধ্যমে বধূ স্বামীর দীর্ঘায়ু কামনা করেন। সিদুরের রং লাল আর লালকে ধর্মীয় শাস্ত্রে শান্তির প্রতীক হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। আবার লাল হচ্ছে দেবী সতী ও পার্বতীর শক্তির প্রতীক। দেবী সতীকে একজন আদর্শ পতিব্রতা রমনী হিসেবে মানা হয় কেননা তিনি তার পতির সম্মানের জন্য নিজ জীবন ত্যাগ। করেছিলেন। দেবী পার্বতীকে অখণ্ড সৌভাগ্যের দেবী হিসেবে মানা হয়। তাই বিবাহিত রমনীরা দেবী সতী ও পার্বতীকে সিঁদুর রূপে তাদের মাথায় ধারণ করেন। ব্রহ্মান্ড পুরাণে সিদুরের মাহাত্ম বর্ণিত হয়েছে।
সিদুর প্রস্তুত
হয় টামারিক
লাইম ও মার্কারির
মিশ্রনের
ফলে। এই মার্কারি
রক্তচাপ
নিয়ন্ত্রণ করে। সিঁদুর
পরা হয় সিঁথিতে, যেখানে
পিটুইটারি
নামক এক শিরা রয়েছে।
এই স্থানটি
হচ্ছে
অনুভূতির
কেন্দ্র
বিন্দু।
এই স্থানটিকে
ব্ৰহ্ম
স্থানও
বলে। এই স্থানে
সিঁদুর
দেওয়ার
ফলে স্থানটি
শীতল থাকে।
ভাগ্য
লক্ষ্মী
যে পাঁচটি
স্থানে
বাস করে তার একটি হচ্ছে
সতী নারীর
মস্তক।
সুতরাং
সিঁদুর
পরিধানের
মাধ্যমে
লক্ষ্মীদেবীকেও সম্মান
জনানো হয়। সিঁদুর
মহিলাদের
কপালের
আশপাশ
থেকে ঘাম রূপ যে দূষিত
জল নির্গত
হয় তা শুষে নেয়।
সিঁদুর
ধর্মীয়
আবেগকে
বর্ধিত
করে ও কাম উপভোগকে নিয়ন্ত্রিত করে।
Read more
কলিযুগের কাহিনী এখানে ক্লিক করুন-
নারীদের ভূমিকা: ধর্ম স্থাপনে নারী এখানে ক্লিক করুন-
লাল হচ্ছে আগুন, রক্ত ও শক্তির রং। সুতরাং সিঁদুর দেওয়ার মাধ্যমে ঐ নারীকে কেউ যেন খারাপ দৃষ্টিতে না তাকায় তারও সাবধানতা দেওয়া হয়। দেবী পার্বতী যে সমস্ত বিবাহিত রমনীরা সিঁদুর পরিধান করেন তাদের রক্ষা ও সৌভাগ্য প্রদান করেন। সীতা ঠাকুরানী, শ্রীমতি রাধা ঠাকুরানী, দ্রৌপদী দেবী সবারই সিঁদুর পরার কথা শাস্ত্রে আছে। তুলসী দাস কৃত রামচরিত মানসে আছে হনুমান সীতা দেবীকে সিঁদুর পরিধান করার কারণ জিজ্ঞেস করলে, দেবী উত্তর দিয়েছিলেন তিনি তার পতির দীর্ঘায়ু কামনা করে প্রতিদিন সিথিতে সিঁদুর পড়েন। এই কথা শুনে হনুমান ভাবলেন যদি প্রভু রামচন্দ্রের আয়ু বৃদ্ধি পায় তবে শুধু সিথিতে কেন পড়ব। এই বলে হনুমান তার সর্বাঙ্গে সিদুর মেখেছিলেন প্রভু রামচন্দ্রের পরম আয়ু বৃদ্ধির জন্য।
আরোও জানুনঃ
ঘুমনা আসার কারণ ও প্রতিকারঃ এখামে চাপ দিন
মস্তিষ্ক ঠিক ঠান্ডা রাখার উপায়ঃ এখামে চাপ দিন
চুলের যত্ন কিভাবে নিতে হয়ঃ এখামে চাপ দিন
প্রশ্ন- দশবিধ সংস্কার কী? কেন তা পালন করা উচিত?
উত্তর : মানবদেহে সত্ত্বগুণের উন্মেষ সাধনের জন্য বেদ শাস্ত্র গর্ভধারণ থেকে বিবাহ পর্যন্ত দশবিধ সংস্কারের বিধান রেখেছে। এই দশটি সংস্কার হচ্ছে-
গর্ভাধান, পুংসবন, সীমন্তোন্নয়ন, জাত কর্ম, নামকরণ, অন্নপ্রাশন, চূড়াকরণ, উপনয়ন, সমাবর্তন, বিবাহ। এই দশটি সংস্কারকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে গর্ভসংস্কার, শৈশব সংস্কার, কৈশর সংস্কার, যৌবন সংস্কার। প্রথম তিনটিকে গর্ভসংস্কার, দ্বিতীয় তিনটিকে শৈশব সংস্কার, তৃতীয় তিনটিকে কৈশর সংস্কার এবং শেষেরটিকে যৌবন সংস্কার বলে ।
১। গর্ভাধান : এই সংস্কারটি হচ্ছে স্ত্রীর গর্ভে স্বামী কর্তৃক গর্ভ প্রদান করা। স্ত্রীর ঋতু স্নান
অন্তে চতুর্থ দিনের পর কোনো শুভলগ্নে গর্ভাধানের জন্য নির্দিষ্ট মন্ত্র পাঠপূর্বক ঐ দম্পতি কর্তৃক এই সংস্কার কার্যটি করা হয়। এখানে যে মন্ত্র পাঠ করা হয় তার ভাবার্থ হচ্ছে পতি পত্নীকে বলেন সর্বব্যাপী বিষ্ণু তোমার গর্ভকে রক্ষা করুন, আদিত্যদেব পুত্রার্থে তোমার গর্ভকে রক্ষা করুন, হে ভগবতী তুমি এই বধুকে গর্ভাধান কর, হে সরস্বতী তুমি এর বন্ধ্যতা অপনোদন কর, যাহার অধিষ্ঠানে সন্তান সত্ত্বগুণবান, বিনয়ী, নম্র হয় সেই অশ্বিনী কুমারদ্বয় তোমার গর্ভাধান করুন। এই রূপ পবিত্র আনন্দময় শুভলক্ষনোদ্দীপক ভাবসমূহ সহকারে যখন পতি পত্নী উপগত হয় তখন সন্তান যে দিব্যগুণ বিশিষ্ট হবে তাতে সন্দেহ মাত্র নেই। এই সংস্কারে পতি পত্নীকে বলে হে সুব্রত তুমি দীর্ঘায়ু, বংশধর সন্তান প্রসব কর । তারপর কোনো পুত্রবতী নারী যজ্ঞের পঞ্চগব্য বধূকে পূর্বদিকে মুখ করিয়া পান করতে দিবে। গর্ভধারণের পূর্ববর্তী এই প্রক্রিয়াটিকে গর্ভাধান সংস্কার বলে । এর উদ্দেশ্য হচ্ছে সুসন্তান উৎপাদন করা।
আরোও জানুনঃ
পিঠের উপরে ব্যথা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা←এখানে চাপ দিন
শ্বাস নেওয়ার সময় বুক ও পিঠ ব্যথা←এখানে চাপ দিন
কাঁধ এবং বাহুতে ব্যথার কারণ ও পরামর্শ←এখানে চাপ দিন
২। পুংসবন : পত্নীর গর্ভ অবস্থায় ৩ থেকে ৪ মাসের মধ্যে গর্ভ নষ্ট হওয়ার অনেক
সম্ভবনা থাকে। এই জন্য ৩য় মাসের ১০ দিনের মধ্যে এই সংস্কার নির্ধারিত হয়েছে । এই যজ্ঞে যে মন্ত্র বলা হয় তার ভাবার্থ হচ্ছে বরুণ, মিত্র, অশ্বিনী কুমারদ্বয় পুরুষ, তোমার গর্ভে পুত্রই জন্ম নিবে। এই ধরনের বাক্যের ফলে পত্নী মহাআনন্দিত হয়। ফলে গর্ভকালীন সময়ে তার আলস্য, ভয়, বমন জনিত অবসাদ দূর হয়। তাছাড়া যজ্ঞের বট ফল পত্নীর নাকে দেওয়া হয় আঘ্রাণ নেওয়ার জন্য । আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে বট ফলের গৰ্ভরক্ষার বিশেষ শক্তি ও যোনি দোষ নষ্ট করার গুণের কথা বর্ণিত হয়েছে।
৩। সীমন্তোন্নয়ন : গর্ভধারণের পর ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম মাসের মধ্যে অনেক ঝুঁকি থাকে।
এই যজ্ঞের মূল ক্রিয়াটি হচ্ছে পতি পত্নীর সীমন্ত অর্থাৎ সিথি তুলে দেয়। এরপর স্ত্রী আর পতি গমন করেন না। যদি দৈবাং গর্ভাধান ও পুংসবন সংস্কার না করা হয় তবে এই সময় প্রায়শ্চিত্তপূর্বক সংস্কার দুটি করে নেওয়া যায় । সীমন্তোন্নয়নের সময় পতি যজ্ঞের ডুম্বর ফল ও কতিপয় মাঙ্গলিক দ্রব্য দিয়ে তৈরি মালা স্ত্রীর গলায় পরিয়ে দেয়।
৪। জাত কর্ম : শৈশব সংস্কারের প্রথম সংস্কার হলো জাত কর্ম। সন্তান ভূমিষ্ট হওয়ার পর পিতা যব ও ব্রীহিচর্ণ দ্বারা ও পরে স্বর্ণ দ্বারা মাখানো মধু শিশুর জিহ্বায় স্পর্শ করায়। স্বর্ণ দ্বারা বায়ু দোষ রোধ ও প্রস্রাব পরিষ্কার হয় । ঘি দ্বারা শিশুর তাপ বৃদ্ধি হয় এবং মধু দ্বারা পিত্তের ক্রিয়া বাড়ে। এরপর পিতা সন্তানের নারীচ্ছেদন ও স্তন দেওয়ার আদেশ দিয়ে থাকেন।
৫। নাম করণ : পিতা কর্তৃক জাত সন্তানের নামকরণ উৎসবকেই নামক বলে। ভূমিষ্ট হওয়ার ১০ দিন পর এই অনুষ্ঠান করা হয়। বর্তমানে অন্নপ্রাসনের সময়ও নামকরণ করা হয়। এই সংস্কার অনুষ্ঠানে যে মন্ত্র পাঠ হয় তার ভাবা হচ্ছে সন্তান যাতে দীর্ঘজীবী হয়। ব্রাহ্মণ সন্তানের নামের পর দেবশর্মা, ক্ষত্রিয়রা ত্রাতৃবৰ্মা, বৈশ্যরা ভূতি গুপ্ত বা দাস এবং শুদ্ররা দাস শব্দ প্রয়োগ করে। নামকরণ করার পর পিতা পুত্রের দক্ষিণ কানে তুমি অমুক বলে তার পরিচয় প্রদান করে।
৬। অন্নপ্রাসন : পুত্র সন্তানের ৬ অথবা ৮ম মাসে, কন্যার ৫ম বা ৭ম মাসে অন্নপ্রাসন করা হয়। এই অনুষ্ঠানের দ্বারা শিশুর মুখে ভগবানের প্রসাদ রূপে অন্ন দেওয়া হয়। পিতা মাতা ভিন্ন অন্য কাউকে সন্তানের মুখে প্রথম অন্ন দিতে হয় ।
৭। চূড়াকরণ : এটি একটি কৈশোর সংস্কার। ৫ অথবা অন্য কোনো বিজোড় বর্ষে চূড়াকরণ করা হয়। কেশমুন্ডনই ইহার প্রধান কার্য । মাথা মুন্ডন করে শিশুকে শিক্ষার জন্য পাত্রীভূত করা হয়।
৮। উপনয়ন : অষ্টম বর্ষে উপনয়ন দিতে হয়। যদি কোনো কারণে না হয় তবে ১৬ বছর বয়সের মধ্যে করতে হয়। ব্রাহ্মণের ক্ষেত্রে ৫-১৬, ক্ষত্রিয়ের ক্ষেত্রে ৬-১২ এবং বৈশ্যের ও
শুদ্রের
ক্ষেত্রে ৮-২৪ বছর বয়সের মধ্যে করতে হয়। এর মূল তাৎপর্য হচ্ছে কোনো আচার্যের তত্ত্ববধানে থেকে শিক্ষা অর্জন। আচার্য তার শিষ্যকে যজ্ঞ উপবিত দান করেন। শিষ্যকে গায়ত্রী মন্ত্র উপদেশ দেন।
আরোও জানুনঃ
চুলপড়ার
১৫ টিকারণঃ এখানে ক্লিক করুন
হাঁপানি
থেকে মুক্তির উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন
উচ্চরক্ত
চাপ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসাঃ এখানে ক্লিক করুন
৯। সমাবর্তন : অধ্যয়ন শেষে গুরু গৃহ থেকে নিজ গৃহে ফিরে আসাকেই সমাবর্তন বলে। এই সময় গৃহস্ত জীবনের শিক্ষাগুলো গুরু গৃহে শিক্ষা দেওয়া হয়। দ্যুত ক্রিয়, স্ত্রীর প্রতি অত্যধিক আসক্তি, মদিরা, গৃহমেধী না হওয়া, কৃষ্ণভাবনাময় গৃহ নির্মাণ করা প্রভৃতি উপদেশ গুরু শিষ্যকে প্রদান করেন। এবং সকল প্রতিবন্ধকতা যাতে দূর হয় তার জন্য ভগবানের নিকট প্রার্থনা করা হয়।
১০। বিবাহ : যৌবনের একমাত্র সংস্তার হচ্ছে বিবাহ। এই যজ্ঞে পতি পত্নাকে অগ্নিস্বাক্ষী করে পতি রূপে বরণ করেন। এই সংস্কারের মাধ্যমে একজন সতী কন্যাকে সহধর্মিণী রুপে গ্রহণ করা হয়। কোন অবস্থাতেই ইন্দ্রিয় তৃপ্তি এ সংস্কারে অনুমোদিত নয়। বংশ রক্ষার জন্যই এই সংস্কার আবশ্যক। স্ত্রীকে গৃহস্থালি বিষয়ে সকল কার্য দেখা এবং স্বামীর ধর্মঅনুশীলনে সহায়তা করা এই দুটি দায়িত্ব স্ত্রীর পালনীয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন