উত্তর : গাভী সনাতন সংস্কৃতির মূল আধার। বেদ শাস্ত্র অনুসারে "মাতরঃ সর্বভূতানাং গাবঃ" অর্থাৎ
গাভী সমস্ত প্রাণীর জননী। গো মাতার মহিমা অপার, যার উল্লেখ বেদ ও পুরাণে অনেক স্থানে লক্ষ্য করা যায়। বেদে বলা হয়েছে “সর্বে দেবাঃ স্থিতা দেহে সর্ব দেবময়ী হি গৌঃ " গাভীর
দেহে সমস্ত দেবদেবীদের বাস হওয়াতে গাভী সর্ব দেবময়ী। “ সুরুপ কৃৎতুমূতয়ে সুদুঘামিব গোদুহে, জুহুমসিদ্যবিদ্যবিঃ "
(ঋগবেদ ১/৪/১)। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রচুর দুগ্ধ প্রদান করে এমন গাভীদের সেবার দ্বারা সুন্দর সমাজের বিকাশ হয়। ভবিষ্য পুরাণে আছে গাভীকে প্রণাম ও প্রদক্ষিণ করলে সপ্তদ্বীপ বিশিষ্ট পৃথিবী প্রদক্ষিণের ফল হয়। পদ্ম পুরাণে আছে, যে প্রতিদিন গাভীকে এক মুষ্টি ঘাস দেয় তার সমস্ত পাপ নাশ হয়।
আরোও জানুনঃ
পিঠের উপরে ব্যথা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা←এখানে চাপ দিন
শ্বাস নেওয়ার সময় বুক ও পিঠ ব্যথা←এখানে চাপ দিন
কাঁধ এবং বাহুতে ব্যথার কারণ ও পরামর্শ←এখানে চাপ দিন
কেউ যখন গাভী ও ব্রাহ্মণদের শ্রদ্ধা এবং পুজা করার শিক্ষাপ্রাপ্ত হয় তখন তিনি প্রকৃতপক্ষে সভ্য হন। গাভী ও ব্রাহ্মণ ভগবানের অত্যন্ত প্রিয়। যে সভ্যতা এ দুইয়ের সম্মান দেয় না সেই সভ্যতার নিন্দা করা হয়েছে। ব্রাহ্মণোচিত গুণাবলি অর্জন না করে এবং গো রক্ষা না করে আধ্যাত্মিক উন্নতি লাভ করা যায় না। ষাঁড় হচ্ছে নীতির প্রতীক এবং গাভী হচ্ছে পৃথিবীর প্রতিভূ। গাভীকে গো মাতা বলা হয়েছে-
শাস্ত্রে সাতজন মায়ের উল্লেখ আছে,
তারা হলেন গর্ভধারিণী মা, ধাত্রী মা, ধরিত্রী মা, গাভী মাতা, রাজ মাতা, বেদ মাতা, গুরু পত্নী (গুরু মাতা)। পিতামাতার সেবা যেমন কর্তব্য তেমনি গাভী মাতার সেবা করাও কর্তব্য। গো পালন, গো সেবা, গো রক্ষা যথা সম্ভব করা উচিত। এর ফলে একটি আদর্শ সচ্ছল আধ্যাত্মিক সমাজ গড়ে উঠবে। গো দানের প্রচুর মহিমার কথা শাস্ত্রে আছে। শত ভার স্বর্ণ অর্থাৎ চার হাজার কেজি স্বর্ণ দান করলে যে ফল হয় সেই ফল কেবল একটি মাত্র গাভী দান করার মাধ্যমে হয় । ব্রাহ্মণদের শ্বেত গাভী দান করলে মানুষ ঐশ্বর্যশালী হয় । গাভী অত্যন্ত উপকারী প্রাণী। রান্নার জ্বালানি গাভীর গোবর থেকে আসে। আধুনিক বিজ্ঞানে গরুর গোবরের জীবানু নাশক গুণের কথা প্রমাণিত হয়েছে । আপনি হয়তো
জানেন কি না,
গো মূত্র থেকে প্রকার ওষুধ প্রস্তুত হয়, যা দ্বারা নানা জটিল রোগ যেমনঃ লিভারের সমস্যা, চর্ম রোগ, অশ্ব, হৃদরোগ প্রভৃতির চিকিৎসা করা হয়। গরুর দুধ থেকে প্রস্তুত মাখন, ছানা প্রভৃতি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য পাওয়া
যায়
। গো হত্যা শাস্ত্রে অত্যন্ত কঠোর বাক্যে
নিষিদ্ধ
করা হয়েছে ।
Read more
ভগবদগীতা-বিষয়ক প্রশ্ন Click
ঋগবেদের ৮/১০১/১৫ শ্লোকে আছে রুদ্রদের মাতা, বুসুদের দুহিতা, আদিত্যদের বোনের সমান স্নেহশীল নির্দোষ গাভীকে কখনও হত্যা করবে না। অথর্ব বেদে ৪/১১/৩ শ্লোকে আছে, “ যে ষাঁড় ভক্ষণ করে না, সে কথনও কষ্টে পড়ে না "। একই বেদের ৪/৩/২৪ তম শ্লোকে বলা হয়েছে যে গো হত্যা করে, গাভীর দুধ থেকে লোকদের বঞ্চিত করে, তলোয়ার দিয়ে তার শিরচ্ছেদ কর "।
নদীয়ার শাসনকর্তা চাঁদ কাজীকে শ্রী চৈতন্য মহা প্রভু বলেছেন।
গো অঙ্গে যত লোম তত সহস্র বছর
গোবধী রৌরব মধ্যে পচে নিরন্তর । (চৈঃ চঃ আদি-১৭/১৬৫-১৬৭)
- যজুর্বেদ (৩০/১৮) তম শ্লোকে আছে “অন্তকায় গো ঘাতম” অর্থাৎ গো হত্যাকারীকে প্রাণদন্ড দাও। তাই মানুষের কর্তব্য হচ্ছে গো রক্ষা, কেননা আমাদের যে ব্যবহারিক খাদ্যের প্রয়োজন তা প্রায় সবটুকুই আমরা এই গো পালন করার মাধ্যমে পেতে পারি । তার ফলে খাদ্য সংগ্রহের জন্য আমাদের জড় জাগতিক প্রতিযোগিতায় এত সময় অপচয় করতে হবে না। বরং আমরা এর মাধ্যমে আধ্যাত্মিক অনুশীলনের অনেক বেশি সময় পাব। শস্য উৎপাদন এবং গো রক্ষার মাধ্যমে সব রকমের অভাব থেকে মুক্ত হয়ে সুখী জীবন যাপন করা যায় ।গীতার দশম অধ্যায়ে ভগবান বলেছেন, ধেনুদের মধ্যে আমি কাম ধেনু। এই রূপ গাভী, যে সেবা করে তার গৃহে লক্ষ্মীদেবী চিরকাল অবস্থান করেন।
- গাভী প্রণাম মন্ত্র
যয়া সর্ববিদং ব্যাপ্তং জগৎ স্থাবর জঙ্গমম
তাং ধেনুং শিরসা বন্দে ভূতভব্যস্য মাতরম্।।
“যিনি সমস্ত চরাচর জগৎকে ব্যাপ্ত করে রেখেছেন, সেই ভূত ও ভবিষ্যতের জননী গো মাতাকে আমি নত মস্তকে প্রণাম করি"। সনাতন ধর্মে গাভীকে দুধ দেওয়া এক সাধারণ পশু না ভেবে তাকে দেবতাদের প্রতিনিধি রূপে স্বীকার করে সেবার কথা বলা হয়েছে। যে মানুষ প্রাতকৃত্য করে গো স্পর্শ করে তার সমস্ত পাপ নষ্ট হয়। গাভী চরন পৃষ্ঠ মাটি তিলক করার দ্বারা তীর্থ স্থানের তুল্য পণ্য প্রাপ্ত হওয়া যায়। ঘুম থেকে উঠে ভগবানকে স্মরণ করার পর যদি প্রথম গাভী দর্শন হয় তবে তা সৌভাগ্য আনয়ন করে।
আরোও জানুনঃ
ঘুমনা আসার কারণ ও প্রতিকারঃ এখামে চাপ দিন
মস্তিষ্ক ঠিক ঠান্ডা রাখার উপায়ঃ এখামে চাপ দিন
চুলের যত্ন কিভাবে নিতে হয়ঃ এখামে চাপ দিন
এইভাবে সর্বদিক দিয়ে গাভী মঙ্গলময়। পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই গাভী চরিয়ে, তাদের খাইয়ে অনেক আনন্দ উপভোগ করেন। সুতরাং গাভী পুজা গাভী সেবা আমাদের সনাতন ধর্মের এক অতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন