তিলক ধারণের নিয়ম ও আবশ্যকতা বিধি

তিলক ধারণের আবশ্যকতা
      
 
     
পাদ্মোত্তর খণ্ডে_

প্রিয়ার্থম্বা শুভার্থম্বা রক্ষার্থে চতুরানন।
তৎ পূজা হোমকালে চ সায়ং প্রাতঃ সমাহিতঃ-।
দ্ভক্তো ধারয়েন্নিত্যমূৰ্দ্ধপন্ড্রং ভয়াপহং ।।
                                                                                        (শ্রী হঃ অঃ বিঃ)

হে ব্রাহ্মণ! আমার ভক্ত স্থিরচিত্তে সায়ং প্রাতঃকালে আমার পূজা ও হোম-সময়ে আমার প্রীতি সাধন অথবা স্বয়ং কল্যাণ ও রক্ষার নিমিত্ত ভয় নাশক উদ্ধপুন্ড্র অর্থাৎ তিলক নিত্য ধারণ করিবে।

তিলক ধারণের ফল

যজ্ঞ-দান তপশ্চৰ্য্যা-জপ হোমাদিকঞ্চ যৎ ।
ধর্বপুন্ড্রধরঃ কুৰ্য্যাৎ তস্য পুণ্যমনস্তকম্ ॥
র্দ্ধপুন্ড্র ধরো যন্তু কুৰ্য্যাৎ শ্রাদ্ধং শুভাননে ।
কল্পকোটী সহস্রাণি বৈকুণ্ঠে বাসমাপ-য়াৎ ।

তিলক ধারণ করিয়া যজ্ঞদান, তপস্যা, জপ এবং হোম প্রভৃতি যে কোন শুভকাৰ্য্য করা হয়, সেই সকল কর্মের পুণ্য অনন্ত। অর্থাৎ তাহার সংখ্যা হয় না ।

Read more
ওঁ এর অর্থ কী? Click

চন্দন ও ভষ্মের দ্বারা তিলক নিষেধ

চন্দন, রাজসিক, এবং ভস্ম তামসিক, তুলসী মূলের মুতিকা বা গোপীচন্দরে দ্বারা তিলক রচনাই বিধি।

তিলক বা হরিমন্দির অঙ্কিত করিবার বিধি

নাসাদিকেশ-পৰ্য্যস্তমূর্দ্ধপুন্ড্রং সুশোভনং।
মধ্যে ছিদ্র-সমাযুক্তং তদ্বিদ্যার্জরিমন্দির ।
বামপার্শে স্থিতো ব্রহ্মা দক্ষিণেতু সদাশিবঃ।।
মধ্যে বিষ্ণুং বিজানীয়াৎ ও তস্মান্মধ্যং ন লেপয়েৎ ॥

(পদ্মপুরাণ)

নাসা হইতে আরম্ভ করিয়া কেশ পর্যন্ত বিস্তৃত অতিশয় মনোহর এবং মধ্যে ছিদ্রযুক্ত যে তিলক তাহাকেই হরিমন্দির বলিয়া জানিবে । তিলকের বামপার্শ্বে ব্রহ্মা, দক্ষিণে সদাশিব এবং মধ্যে বিষ্ণু অবস্থিতি করেন । অতএব মধ্যভাগ লেপন করিবে না

দশাঙ্গুলং মধ্যমং স্যাৎ অষ্টাঙ্গুলমতঃ পরং।
ঐতৈঙ্গুলিভেদৈস্তু করিয়েন্ন নখৈঃ স্পৃশেং ॥

(ব্রহ্মাণ্ডপুরাণ)

যে তিলকের পরিমাণ দশ আঙ্গুল, তাহাকে অত্যুত্তম বলা যায় । নয় আঙ্গুল মধ্যম, আর অষ্ট আঙ্গুল পরিমাণ কনিষ্ঠ বলিয়া কথিত ।

শ্যামং শাস্তিকরং প্রোক্তং রক্তং বশ্যকরং তথা।
শ্ৰীকরং প্রীতিমিত্যাহুঃ শ্বেতং মোক্ষপ্ৰদং শুভং ॥
(পদ্মপুরাণ উত্তর খণ্ডে)

পণ্ডিতগণ শ্যামবর্ণ পন্ড্রকে শান্তিপ্রদ, রক্তবর্ণ পুন্ড্রকে বশ্য কারক, পীতবর্ণ পুন্ড্রক সম্পত্তি দায়ক ও শ্বেতবর্ণ পুন্ড্রকে মঙ্গলজনক মোক্ষপ্রদ বলিয়া উলে-খ করেন।

কাশীখণ্ডে যমবাক্য

দূতাঃ শৃণুত যদ্ভালং গোপী চন্দন লাঞ্ছিতং।
জলদিহ্মনবৎ সোহপি ত্যাজো দূরে প্রত্নতঃ ॥


রশ্ন-  ওঁ এর অর্থ কী? ওঁ উচ্চারণের দ্বারা কী প্রকাশ করা হয়?

উত্তর:- ওঁ হচ্ছে , এবং এই তিনটি বর্ণের সমন্বয়।

অ-কারোনোচ্চতে কৃষ্ণঃ সর্বলোকৈক নায়কঃ

উ-কারোনোচ্চতে রাধা, ম-কারো জীব বাচকঃ

-কারে শ্রীকৃষ্ণকে বুঝায়, যিনি হচ্ছেন চিৎ অচিৎ সমগ্র জীবের ঈশ্বর -কার শ্রীকৃষ্ণের হ্লাদিনী শক্তি শ্রীমতি রাধারানীকে ইঙ্গিত করে -কার জীবকে ইঙ্গিত করে। এই ভাবে ওঁ হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণ, তার শক্তি এবং তার নিত্য সেবকের সমন্বয় বৈদিক মন্ত্রের প্রারম্ভে যে ওঁ বলা হয় তা হচ্ছে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শব্দ রূপ প্রকাশ। ওঁ  হচ্ছে সমস্ত বৈদিক মন্ত্রের ভিত্তি। গীতায় ওঁ এর মহিমা বর্ণনা করে বলা হয়েছে  ওঁ ইত্যেকাক্ষরং ব্রক্ষ্ম ব্যাহরন্মসনুস্মরন।

যঃ প্রয়াতি ত্যজন দেহং যাতি পরমাঃ গতিম ।। (গীতা-/১৩)

অর্থাৎ ওঁ এই একটি অক্ষর স্মরণ করে কেউ যদি মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে পরম গতি লাভ করে গীতার নবম অধ্যায়ের সতেরতম শ্লোকে বলা হয়েছেআমিই এই জগতের পিতা, মাতা, বিধাতা, পিতামহ। আমিই বেদ্য, পবিত্রকারী ওঁ কার। আমিই ঋক, সাম যজুর্বেদ" সপ্তম অধ্যায়ের তেরোতম শ্লোকে আছে-সৃষ্টির আদিতে ওঁ তৎ সৎ এই তিনটি ব্ৰহ্ম নির্দেশক নাম বলে নির্দিষ্ট হয়েছে" বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণের সময় ভগবানকে সন্তুষ্ট করার জন্য এই ওঁ উচ্চারণ করা হয়। ভগবৎ সন্দর্ভে শ্রীল জীব গোস্বামীপাদ বলেছেন ওঁ কার হচ্ছে ভগবানের দিব্য নাম। এই অপ্রাকৃত শব্দ উচ্চারণের ফলে ভববন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া যায় কখনও কখনও ওঁ কে তারক বা পরিত্রাণকারীও বলা হয়। শ্রীপাদ শ্রীধর স্বামী  ওঁ কে তারাঙ্কুর বা জড় জগত থেকে মুক্ত হওয়ার বীজ বলে বর্ণনা করেছেন। ওঁ হচ্ছে অনাদী অবিকারী, পরম এবং সব রকম জড় কুলষ থেকে মুক্ত

 নিত্যকর্ম হচ্ছে প্রতিদিনের কর্মআমাদের প্রতিদিন যা করা উচিত তাই নিত্যকর্ম। আমাদের এই ক্ষণিকের মানবজীবন দেওয়া হয়েছে কৃষ্ণভজনা করে চিন্ময় জগতে চলে যাওয়ার জন্য। আর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজের সম্পর্কে বলেছেন, (গীতা/৪০), “অজ্ঞ ও শাস্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাহীন ব্যক্তি কখনই ভগবদ্ভক্তি লাভ করতে পারে না। সন্দিগ্ধ চিত্ত ব্যক্তি ইহলোকে সুখভোগ করতে পারে না এবং পরলোকেও সুখভোগ করতে পারে না।” কষ্ণভক্ত পরিবার দরকার পরিবারে মাত্র একজন যদি কৃষ্ণভক্ত না হয়তবে পায়ে কাটা ফোটার মত অবস্থা হয়। আমাদের ২৪ ঘণ্টাই কৃষ্ণভাবনায় যুক্ত থাকার চেষ্টা করা উচিতএমন কি ব্যস্ত সময়েও একটু অবসরে কৃষ্ণ সেবায় তৎপর হতে হবে। আমরা যখন কষ্ণগতপ্রাণ হবনিঃস্বার্থ ভাবে কৃষ্ণসেবা করতে পারবতখন আমরা কৃষ্ণের কাছে যাবার যোগ্যতা অর্জন করব। এইভাবে সারা জীবন চলতে থাকলে এজ জীবনেও সুখি হতে পারব এবং পরকালেও সুখি হতে পারব। নীচে কিছু করণীয় দেওয়া হলযা শিশু থেকে বৃদ্ধ সবার জন্য প্রযোজ্য। কেউ যদি আরো বেশি ভগবানের সেবা করতে পারে সেটা আরো ভালো। আর কখনোই ভগবানের সেবা করার সময় ভাবা উচিত নয়আমার সময় নষ্ট হচ্ছে বরং আমি সময়ের যথার্থ সদ ব্যবহার করতেছিকৃষ্ণসেবা ছাড়া যা করা হয় তাই সময়ের অপব্যবহার । তাই যখন যতটুকুই সম্ভব নিজেকে কৃষ্ণভাবনায় যুক্ত করা উচিত।

১ । প্রতিদিন ব্রাহ্ম মুহুর্তে ঘুম থেকে উঠা উচিত অর্থাৎ ভোর চারটায়।

। ঘুম থেকে উঠে মল-মূত্র ত্যাগ করেদাত মেজে তারপরে স্নান করতে হয়। এরপর যথাযথভাবে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে শুদ্ধ বস্ত্র পরিধান করে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয়

৩। এরপরে শ্রীগুরু প্রণামশ্রীকৃষ্ণপ্রণামপঞ্চতত্ত্ব প্রণাম করে তুলসী আরতি করতে হয় বিভিন্ন মঠ-মন্দিরে মঙ্গল আরতিনৃসিংহ আরতি হয়ে থাকেসুযোগ পেলে সেখানে অংশ গ্রহণ করা উচিত।

৪। সারে চারটার মধ্যে মন্দিরে প্রবেশ করতে হয় এবং পাঁচটার মধ্যে বিগ্রহ জাগরণ আরতি শেষ করে জপ শুরু করতে হয় । গৃহী ভক্তরা তাদের ঠাকুর ঘরেই পারমার্থিক অনুশীলন করবে।

৫। পাঁচটা থেকে সাতটা পর্যন্ত এক টানা হরে কৃষ্ণ জপ করা উচিত। এতে ১৬ মালা জপ করা হয়ে যায়। যদি ব্যস্ততার কারণে সকালে ১৬ মালা শেষ না হয়ে থাকেতবে দিনের অন্য কোন সময়ে সুযোগ মত শেষ করে নিতে হয়।

৬। জপ শেষ করার পর ভগবানের গ্রন্থ (যেমন-ভাগবত) পাঠ বা শ্রবণ করতে হয়

৭। গ্রন্থ শেষ করার পর শরীরিক সুস্থতার জন্য কেউ প্রাতঃভ্রমণে বের হতে পারে।

৮। যদি কোন কারণ বশত হঠাৎ কোন দিন ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়তবে ঘুম থেকে উঠেই প্রাতঃকর্ম অর্থাৎ মল-মূত্র ত্যাগদাঁত মাজাস্নানতারপর শুরু করতে হয়। মনে রাখা উচিত সর্বনিম্ন একমালা জপ না করে জলও স্পর্শ করা উচিত নয়।

। সকাল-দুপুর-রাত্রীতে তিনবেলাই ভগবানকে নিবেদিত প্রসাদইশুধ সেবন করতে হয়। ভগবানকে নিবেদন করার জন্য ভক্ত নিজেই রন্ধন করতে পারে।

১০। সন্ধ্যার সময় মন্দিরে বা গৃহে (কারনবশত রাস্তায়) সমবেত ভাবে একই সুরে এবং একটু উচ্চ স্বরে ১ মালা অর্থাৎ ১০৮ বার হরে কৃষ্ণ জপ মহামন্ত্র করতে হয় । কখনোই সন্ধ্যার সময় জপ করা থেকে বিরত থাকা উচিত নয়। সন্ধ্যার জপ করার সময় সূচি (জানুয়ারি=৫-২৬ মিনিটফেব্রুয়ারি= ৫-৪৪ মিনিটমার্চ= ৫-৫৬এপ্রিল = ৬-০৬মে= ৬-২১জুন = ৬-৩১জুলাই = ৬-৩১আগস্ট = ৬-১৬সেপ্টেম্বর = ৫-৫৬অক্টোবর = ৫-২৬নভেম্বর = ৫-০৬ডিসেম্বর = ৫-০৯ মিনিট।

১১। জপ করার পর তুলসী আরতি ও হরে কৃষ্ণ কীৰ্ত্তন করা উচিত। তারপর গীতা পাঠ করা উচিত।

১২। ঘুমানোর সময় দাঁত মেজে হরে কৃষ্ণ জপ করতে করতে ঘুমানো উচিত।

১৩। কখনো যদি মালা হাতের কাছে না থাকেতবে কর গুনে জপ করা যায় আবার সময় বুঝে না গুণেও জপ করা যায়তবে মালাতেই উত্তম।

১৪। অবসর সময় পেলে বা কর্ম বিরতীর সময়জপকীৰ্ত্তনকৃষ্ণ বিষয়ক গ্রন্থ পাঠকৃষ্ণ কথা শ্রবণবা প্রচার করার মাধ্যমে সময়ের সদব্যবহার করা উচিশ্ন

১৫। যাদের উপনয়ন হয়েছেতারা তিনবেলা সন্ধ্যা গায়িত্রী পাঠ করবে। যদি  কোন বেলা বাদ পড়ে যায়তবে পরের বেলা দুইবার পাঠ করবে

১৬। একাদশী অবশ্যয়ই পালন করতে হয় এবং একাদশীর দিন পচিশমালা জপ করা উচিত।

১৭। যাদের প্রতিদিন যথেষ্ট পরিমাণ সময় রয়েছে বা যারা অবসর প্রাপ্ততারা প্রতিদিন ২০৩০৫০ বা আরো অধিক মালা জপ করে সময়ের সদ-ব্যবহার করতে পারে।

১৮। সর্বপরি ২৪ ঘণ্টায়ই কৃষ্ণভাবনায় যুক্ত থাকতে হয়। উপরের যে নিয়মগুলো রয়েছেকেউ তার বেশিও নিজেকে কৃষ্ণের সেবায় নিয়োজিত করতে পারে।

Read more
পুজা অর্চনা নিয়ম  ক্লিক করুন

যিনি এর অর্থ হৃদয়ঙ্গম করেছেন তিনি পারমার্থিক পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়েছেন। যদিও ওঁ- , এই তিনের সমন্বয় তবুও তা চিন্ময় শক্তি সম্পূর্ণ। যিনি ওঁ উচ্চারণ করেন তিনি অচিরেই বুঝতে পারেন  ওঁ এবং শ্রীকৃষ্ণ অভিন্ন। শ্ৰীমদ ভগবতম শুরু হয়েছে ওঁ মো ভগবতে বাসুদেবায় এই দিয়ে আমাদের প্রত্যহ এই দিব্য নাম "ওঁ মো ভগবতে বাসুদেবায়উচ্চারণ করা উচিত। এই দিব্য নাম জপ করার ফলে দ্রুব মহারাজ ভগবানকে সাক্ষাৎ করতে পেরেছিলেন। ওঁ থেকে বেদেরও জান্ম হয়েছিল। কারে জন্মিল বেদ হইয়া চার ভেদ" (কৃষ্ণ প্রেম তরঙ্গিনী) ওঁ হচ্ছে সঠিক উচ্চারণ এছাড়া যে , লেখা দেখা যায় তা হচ্ছে এক শ্রেণীর প্রাকৃত উচ্চারণ

 আরোও জানতে  ক্লিক করুন


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন