গোত্র কী? গোত্র প্রথার উপযোগিতা কী?

গোত্র কী? গোত্র প্রথার উপযোগিতা কী?

প্রশ্ন- গোত্র কী? গোত্র প্রথার উপযোগিতা কী?

উত্তর : পূর্বকালের ঋষিগণ দেবকার্য, পিতকার্য, অতিথি সৎকার স্বরূপ দক্ষিণা হিসেবে গাভী প্রাপ্ত হতেন। এই সকল গাভীদের রক্ষণাবেক্ষণের ভার শিষ্য সন্তানদের প্রতি অর্পিত তো বন্যপশুর আক্রমন থেকে রক্ষা/ ত্রাণ করার জন্য ঋষিগণ স্ব স্ব আশ্রমের নিকট একটি ক্ষেত্র নির্দিষ্ট করে নিয়ে তাতে গোচারণ করতেন। সেই গোচারণ ক্ষেত্রকেই গোত্র বলে। কালক্রমে বিভিন্ন ঋষির জন্য গোচারণ ক্ষেত্র নির্দিষ্ট হওয়ায় সেই সমস্ত ঋষিদের নাম অনুসারে সেই গোচারণ ক্ষেত্র বা গোত্রের নামকরণ করা হয়। ঋষির সন্তান শিষ্যরা তাদের পরিচয় হিসেবে আমরা অমুক গোত্রভুক্ত বলে পরিচয় প্রকাশ করত। সুতরাং গোত্র হচ্ছে কোন ঋষি বংশ।

গোত্র কী গোত্র তালিকা গোত্র কয়টি গোত্র প্রবর গোত্র বিচার গোত্র অর্থ কি গোত্র প্রথার বিবারণ গোত্র শব্দের অর্থ মধুকুল্য গোত্র মৌদ্গল্য গোত্র কাশ্যব গোত্র আলম্বায়ন গোত্র অলিমান গোত্র
বৃহদারণ্যক উপনিষদ অনুসারে পূর্বকালের সাতজন ঋষি হতে বংশ বিস্তার হতে থাকে। তারা হলেন গৌতম, ভরদ্বাজ, বিশ্বমিত্র, জমদগ্নি, বশিষ্ঠ, কাশ্যপ, সান্ডিল্য। কাউকে তার গোত্র কী এই প্রশ্ন করলে যে উত্তরে বলে দেয় কাশ্যপ গোত্র আমি , এর অর্থ হচ্ছে,কাশ্যপ ঋষির বংশ পরম্পরায় সে জন্মগ্রহণ করেছে। অর্থাৎ তার পিতৃপুরুষরা বংশজাত হল কাশ্যপ ঋষির কোনো যজ্ঞ, পিতৃপুরুষের শ্রাদ্ধ, বিবাহ প্রভৃতি অনুষ্ঠানে পিতৃপুরুষের উদ্দেশ্যে আহুতি/ পিণ্ড/অর্ঘ্য দান করতে হয়।
যদি গোত্র উল্লেখ করে আহুতি দেওয়া হয় তবে খুব সহজেই গোত্রভুক্ত পিতৃপুরুষেরা আহূতি প্রাপ্ত হন। কোন ঋষি থেকে নিজেদের বংশ পরম্পরা নেমে এসেছে তা স্থির করার জন্য গোত্র প্রথা অত্যন্ত বিজ্ঞান সম্মত। এর মাধ্যমে নিজেদের পরিচয় অবিকৃত থাকে। এর অনেক সুফল আছে। যেমন বেদে সমগোত্রের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ করছে। কেননা সমগোত্র মানে বর কনের কোনো না কোনো পিতৃপুরুষ একই পিতার থেকে এসেছে। অর্থাৎ তারা একই বংশজাত একই পিতৃপুরুষের প্রতিনিধিত্ব করছে।

 জানতে ক্লিক করুন 

বিজ্ঞান বলে যে প্রতিটি মানুষের ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম রয়েছে। প্রতি জোড়া ক্রোমোজোমের একটি আসে তার পিতা অন্যটি আসে তার মাতা থেকে। এই ৪৬টি ক্রোমোজোমের মধ্যে এক জোড়া হচ্ছে লিঙ্গ নির্ধারক। যার মাধ্যমে বিজ্ঞান কর্তৃক নির্ধারিত মানুষটি কোন লিঙ্গের এই ক্রোমোজোম একটি হচ্ছে এক্স অপরটি হচ্ছে ওয়াই। এক্স ক্রোমোজোমের মাধ্যমে মাতার বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয় এবং ওয়াই দ্বারা পিতার বৈশিষ্ট্য নির্ধারিত হয়। যখন কোনো গর্ভবতী নারীর ভ্রু দুইটি এক্স ক্রোমোজম বহন করে তবে সন্তানটি হবে মেয়ে আর যদি একটি ওয়াই হয় তবে সন্তানটি হবে ছেলে।

পুরুষেরা এক্স এবং ওয়াই দুইটি ক্রোমোজোম বহন করে। কিন্তু নারীরা দুটিই এক্স ক্রোমোজোম বহন করে। তাদের মিলনের ফলে যদি পুরুষের ওয়াই এবং নারীর এক্স ক্রোমোজোম অর্থাৎ ক্ৰস মিলন ঘটে তবে পুত্র সন্তান উৎপন্ন হয় এবং পুত্র যে ওয়াই ক্রোমোজোম বহন করবে তা অবধারিত ভাবেই পিতা থেকে প্রাপ্ত কেননা নারী ওয়াই ক্রোমোজোম বহন করে না। কিন্তু মেয়েদের ক্ষেত্রে শিশু মেয়েটি তার দুটি এক্স ক্রোমোজোমের মধ্যে একটি   অপরটি যথাক্রমে পিতা, মাতার পেয়ে থাকেএভাবে একে অপরের ক্রমে মেয়েদের ক্রোমোজোমটি এক্স মিশে যায় অর্থাৎ বংশ পরম্পরায় বাবা এবং মায়ের কোন এক্স ক্রোমোজোমটি যে কখন মিলিত হয় তা সুনির্দিষ্ট নয় ওয়াই ক্রোমোজোমটি যেহেতু পুত্র-পিতা-পিতামহ-প্রপিতামহ এই রূপ ভাবে এক পুরুষ থেকে অন্য পুরুষে প্রবাহিত হয় তাই বংশপরম্পরা অপরিবর্তিত থাকে।

আরোও জানুনঃ
চুলপড়ার ১৫ টিকারণঃ এখানে ক্লিক করুন
হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন
উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসাঃ এখানে ক্লিক করুন

বিবাহের ক্ষেত্রে মেয়েদের গোত্র পিতা অনুসারে ধরা হয়। তাহলে যদি বর গোত্র ও কন্যা গোত্র একই হয় তবে সহজেই বোঝা যায় তারা পিতৃপুরুষের একই বংশ জাত। এই ধরনের একই বংশ জাত বিবাহের ফলে পরবর্তকিালে যে সন্তান লাভ করে তার কোনো না কোনো জন্মগত ত্রুটি (জ্যনেটিক প্রোবলেম) থাকতে পারে। তাই পিতৃপুরুষের একই বংশ জাত বেদ শাস্ত্র এই অনুমোদন করে না। সাতজন ঋষি থেকে উৎপাদিত গোত্র ব্যতীত আরও কিছু গোত্রের নামও শোনা যায়। তবে এর কারন হচ্ছে একই গোত্রদ্ভুত কোনো প্রসিদ্ধ ব্যক্তির নাম অনুসারে পরবর্তী কোনো সময়ে প্রসিদ্ধ ব্যক্তির নামে গোত্র পরিচয় দেওয়া। যেমন কাশ্যপ গোত্রের বংশক্রমে যদি কোনো ব্যক্তি প্রসিদ্ধ হয় এবং পরবর্তীতে দি সেই প্রসিদ্ধ ব্যক্তির নামে গোত্র পরিচয় দেওয়া হয়। এইরূপ আরও কিছু গোত্র আছে যেমন বাৎস্য, সাবর্ন, কৌশিক, মৌদগল্য, আলম্যান, পরাশর, রোহিত, বৃহস্পতি, গর্গ ইত্যাদি।

তুলসী কাষ্ঠমালা ধারণ বিধি জানতে  ক্লিক করুন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন