শ্রীপাদ রামানুজাচার্য সনাতন শব্দের অর্থ বলেছেন, যার কোনো শুরু নেই এবং শেষ নেই। ভগবদগীতায় ভগবান বলেছেন, তিনি সনাতন এবং এই জীবেরা হচ্ছে তাঁর সনাতন অবিচ্ছেদ্য অংশ। সুতরাং জীবও সনাতন। এই জগতে আমরা দেখতে পাই সবকিছু অস্থায়ী। তার প্রকাশ হয়, কিছুকাল স্থায়ী হয়, তার কিছু ফল প্রকাশ হয়, তার পর ক্ষয়প্রাপ্ত হয় এবং পরিশেষে অদৃশ্য হয়ে যায় । আমাদের এই দেহ বা আর যা কিছুর দৃষ্টান্ত দেই না কেন, সবকিছুর পরিণাম এই রূপ। কিন্তু বৈদিক শাস্ত্র থেকে আমরা জানতে পারি, এই অস্থায়ী জড় জগতের অতীত এক শাশ্বত সনাতন জগৎ আছে। যার আদিঅন্ত নাই যা ছিল, আছে এবং থাকবে তাই সনাতন।
উত্তর : সনাতন ধর্ম বলতে কোনো সাম্প্রদায়িক ধর্ম পদ্ধতিকে বুঝায় না। সনাতন ধর্ম বলতে সেই সব কার্যকলাপকে বুঝায় যা পরিবর্তন হতে পারে না। যেমন জল থেকে তার তরলতা কখনই বাদ দেওয়া যায় না, আগুন থেকে যেমন তাপ ও আলোককে বাদ দেওয়া যায় না, তেমনি সনাতন জীবের সনাতন বৃত্তি (স্বভাব পেশা, সহজাত) জীব থেকে আলাদা করা যায় না। সংস্কৃত শব্দ ধর্ম বলতে বুঝায়, যা কোনো কিছুর সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। জীবের অপরিহার্য অঙ্গ কী? সনাতন গোস্বামীর এই প্রশ্নের উত্তরে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু বলেছেন, “জীবের স্বরূপ হয় কৃষ্ণের নিত্য দাস"। অর্থাৎ ভগবান হচ্ছেন প্রভু, জীব হচ্ছে তার সেবক।
আরোও জানুনঃ
ঘুমনা আসার কারণ ও প্রতিকারঃ এখামে চাপ দিন
মস্তিষ্ক ঠিক ঠান্ডা রাখার উপায়ঃ এখামে চাপ দিন
চুলের যত্ন কিভাবে নিতে হয়ঃ এখামে চাপ দিন
কৃষ্ণ হচ্ছেন সবকিছুর স্রষ্টা। আমরা স্রষ্টাও নই, ভোক্তাও নই। আমরা হচ্ছি তার সেবক। উদাহরণস্বরূপ হাত, পা, চোখ, মুখ, জিহ্বা প্রভৃতি দেহের অঙ্গগুলো সমষ্টিগতভাবে কাজ করে উদরকে তৃপ্ত করে। আর উদর তৃপ্ত হলে দেহের অন্য অঙ্গগুলো আপনা থেকেই তৃপ্ত হয়। তদ্রুপ আমরা যখন ভগবানের সেবা করব তখন প্রকারান্তরে আমরাই তৃপ্ত হবো। ভগবানের সেবা করাই হচ্ছে সনাতন ধর্ম। এটাই সন্তুষ্ট হওয়ার সূত্র । এই সনাতন সম্পর্ক ভুলে আমরা যদি মায়ার সেবা করি তাহলে তা থেকে দুঃখই পাব, যার অভিজ্ঞতা আমরা প্রতিদিন পাচ্ছি।
গীতায় ভগবান বলেছেন “মমৈবাংশো জীবলোকে জীবভূত সনাতন” (গীতা-১৫/৭)। অর্থাৎ এই জীবসমূহ আমার সনাতন অংশ। আর যেহেতু সে অংশ তাই সেই সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার নিমিত্তে ভগবানপ্রদত্ত আইন যা মানা তার সহজাত প্রবৃত্তি তাই সনাতন ধর্ম। এই জগতে ভগবানের সেবা করার অনুশীলনকে সনাতন ধর্ম বলে। আর এই কারণে এই ধর্ম কেবল কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর নয় তা হচ্ছে সর্ব জীবের । ভগবান যেরূপ জন্মমৃত্যু রহিত তেমনি জীব (আত্মা) ভগবানের অংশ হওয়ার কারণে সেও জন্মমৃত্যু রহিত। আর ভগবানকে সেবা করার প্রবৃত্তি জীবের সনাতন বৃত্তি। তাই আমাদের ধর্মের নাম সনাতন ধর্ম ।
পৃথিবীতে অনেক নামে অনেক ধর্ম অনুশীলনকারী থাকলেও একটু বিচক্ষণভাবে প্রতিটি ধর্মের মূল নীতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে মূলত ধর্ম একটিই। পৃথিবীর সবকটি ধর্মেই হত্যা নিষিদ্ধ হয়েছে, মিথ্যা কথা বলা, চুরি করা, অবৈধ সঙ্গ করাকে পাপ বলে বর্ণিত করা হয়েছে. পরকাল আছে, পরকালে আমাদের কৃত কর্মের ফল স্বরূপ বিচার ব্যবস্থা আছে, ঈশ্বর সকলের কর্মকান্ড পর্যবেক্ষণ করছেন, জগৎ অনিত্য, ঈশ্বরের দিব্য নাম উচ্চারন করার মাধ্যমে ঈশ্বরের প্রিয় হওয়া যায়, ঈশ্বর এক ও তিনি সর্বশক্তিমান, তাঁর বহু নাম রয়েছে। প্রভৃতি মূল নীতির মধ্যে কোনো ধর্মের সাথে কোনো ধর্মের পার্থক্য নাই। তথাপি ভিন্ন নামে ভিন্ন ধর্ম রয়েছে কেননা গ্রহীতা সকলের যোগ্যতা এক রূপ নয় ।
আরোও জানুনঃ
চুলপড়ার
১৫ টিকারণঃ এখানে ক্লিক করুন
হাঁপানি
থেকে মুক্তির উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন
উচ্চরক্ত
চাপ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসাঃ এখানে ক্লিক করুন
সকল ধর্মই ভগবান স্বয়ং নিজে অথবা তার প্রেরিত কোনো দূত দ্বারা জগতে প্রচারিত হয়েছে। তাই কোনো ধর্মই খাটো নয়। কিন্তু স্থান কাল ও পাত্র অনুসারে ধর্মের গুঢ় বিষয়সমূহ কোনো ধর্মে খুব সাধারনভাবে, আবার কোনো ধর্মে খুব বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। যেহেতু মানুষের বৈশিষ্ট্য, মানসিকতা, উন্নত দর্শন বোঝার মতো জ্ঞানের অভাব, প্রভৃতির বিভিন্ন গুণের সঙ্গ প্রভাবে আচরগত পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় তাই সবার ধর্ম আচরণের জন্য ঈশ্বর বিভিন্ন নামে ধর্ম প্রবর্তন করেছেন।
গণিত বিষয়ে একজন প্রথম বা দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীর যে জ্ঞান তা কিন্তু উচ্চতর গণিত যারা অধ্যয়ন করে তার সাথে এক নয়। যেমন ১ থেকে ১০ এর মধ্যে কত সংখ্যা আছে তা যদি জিজ্ঞাসা করা হয় তবে সাধারণভাবে উত্তর আসবে ৮টি। কিন্তু একজন উচ্চতর গণিতবিদ এর মাঝে অনেক সংখ্যার অস্তিত্ব পাবেন। যেমন ১
ইসলাম ধর্মের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই ধর্ম প্রচারিত হয়েছিল আজ থেকে ১৩০০ বছর পূর্বে আরবের মরুভূমি অঞ্চলে। সেই সময়কার সমাজের লোকেরা নানা রকম কল্পিত মূর্তির পূজা করত। এই মূর্তি পূজাকে কেন্দ্র করে অসংখ্য সম্প্রদায় ছিল এবং প্রতিটি সম্প্রদায়ের মধ্যে এই নিয়ে নানা বিভেদের কারনে সংঘাত চিরকাল লেগেই ছিল। সবাই সবার নিজ নিজ মতকে প্রাধান্য দেওয়ার কারণে ধর্ম নিয়ে যুদ্ধ, অসংখ্য মানুষের মৃত্যু, সমাজের মধ্যে দাঙ্গা, অরাজকতা লেগেই ছিল। ঐরূপ পরিস্থিতিতে জনগনের মাঝে শান্তি ছিল একান্ত প্রত্যাশিত। ঠিক এই সময়ে ঈশ্বর কর্তৃক প্রেরিত হযরত মুহাম্মদ (সা.) শান্তির ধর্ম হিসেবে ইসলাম প্রচার করেন এবং সৃষ্টিকর্তাকে নিরাকার বলেন। কারণ তা না হলে মূর্তি পূজা নিয়ে যে বিরোধ তা দূর করা যেত না। ঈশ্বর যেহেতু সর্বশক্তিমান তাই তিনি নিরাকারও হতে পারেন। তবে এ বলার মূল তাৎপর্য হচ্ছে ঈশ্বরের আমাদের মতো জড় আকার নেই। কিন্তু ইসলাম ধর্মের মূল ধর্মগ্রন্থ কোরআন শরিফের শেষ দিকে ঈশ্বরের রূপের কিছু বর্ণনা দেওয়া আছে। হযরত মুহাম্মদ (সা.) যে আসবেন এবং এই ধর্ম প্রচার করবেন তা বেদে বহু পূর্বেই বলে দেওয়া হয়েছে। অথর্ব বেদ, কান্ড-২০, সুক্ত-১২৭, মন্ত্র-১-৩
কাশি দূর করার উপায়: এখানে ক্লিক করুন
ঘুমনা আসার কারণ ও প্রতিকারঃ এখানে ক্লিক করুন
চুলকানি - চর্মরোগ উপশমঃ এখানে ক্লিক করুন
সনাতন ধর্মের প্রবর্তন যে কবে হয়েছিল তার কোনো ইতিহাস নেই। এটি হচ্ছে নিত্য ধর্ম। এটি কোনো সাম্প্রদায়িক বা কোনো জাতির জন্য এককভাবে নির্ধারিত নয়। এটি সকল মানুষের জন্য। ভগবানের সেবা, ভগবদ্ধামে ফিরে যাওয়া এ হচ্ছে প্রতিটি জীবের জৈব ধর্ম।
তাই মানুষ যেই ধর্মের অনুসারীই হোক না কেন, তিনি যদি ঈশ্বরকে ভালোবাসেন, ঈশ্বরের নিকট আত্মনিবেদন করে অনুকম্পা প্রার্থনা করেন, ঈশ্বরই যে একমাত্র সুহৃদ তা উপলব্ধি করে তাকে স্মরণ করেন, প্রতিটি জীবকে ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কিত জেনে সম্মান করেন, যারা ঈশ্বরের এই রূপ ভক্ত তাদের সেবা করেন তবে তিনি ধর্মের সকল মূল নীতিগুলো মানছেন এবং তিনিই শ্রেষ্ঠ ধার্মিক ব্যক্তি। তাকেই ঈশ্বর তার নিত্য ধামে ফিরিয়ে নিয়ে যাবেন। ঈশ্বরকে ভক্তি করার ক্ষেত্রে যদি কোনো নিজস্ব স্বার্থ না থাকে, ভক্তি যদি কোনো জাগতিক কারণে প্রতিহত না হয় তবে এই রূপ ধর্মকে শ্রীমদ্ভাগবতমে শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন