এই আলোচনায় আমরা জানবো, শ্রীমদ্ভগবদগীতা - কোন বিষয় আলোচিত হয়েছে? ভগবানের সঙ্গে জীবের সম্পর্ক কী? ভগবান শব্দের অর্থ কী? কাকে ভগবান বলে সম্বোধন করা যায় ? এর বাইরেও আরোও কিছু জানতে পারবো। উপরিক্ত প্রশ্নগুলো উত্তর ধারায় ক্রমান্বয়ে বর্ণনা করা হলঃ
উত্তর : শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ নিঃসৃত বাণী । মহাভারতের ভীষ্ম পর্বের ২৫-৪২ পর্যন্ত ১৮টি অধ্যায়কে গীতা বলা হয়। এর প্রথম ৬টি অধ্যায়কে কর্ম ষটক বলে, মাঝের ৬টি অধ্যায়কে ভক্তি ষটক বলে। এবং শেষ ৬টি অধ্যায়কে জ্ঞান ষটক বলে। এর মাঝে ৭০০টি শ্লোক রয়েছে। তার মধ্যে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ৫৭৪ টি শ্লোক বলেছেন, অর্জুন মহাশয় বলেছেন ৮৫ টি, সঞ্জয় বলেছেন ৪০ টি ও ধৃতরাষ্ট্র বলেছেন ১ টি। ভগবদ্গীতায় জীব, ঈশ্বর, প্রকৃতি, কাল ও কর্ম এই পাঁচটি বিষয় আলোচিত হয়েছে। অজ্ঞানের অন্ধকারে আচ্ছন্ন জড় জগতের বদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধারের উপায় ভগবান গীতাতে বলেছেন ।উচ্চ রক্তচাপ - কারণ, লক্ষণ, প্রতিরোধঃ এখানে ক্লিক করুন
মস্তিষ্ক ঠিক ঠান্ডা রাখার উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন
চুলকানি - চর্মরোগ উপশমঃ এখানে ক্লিক করুন
ইমং বিবস্বতে যোগং প্রোক্তবানহমব্যয়ম্ ।
বিবস্বাস্মনবে প্রাহ মনুরিক্ষাকবেহব্রবীৎ।। (গীতা-৪/১)
এই জ্ঞান ভগবান সর্বপ্রথম সূর্যদেব বিবস্বানকে প্রদান করেন। ত্রেতা যুগের প্রারম্ভে বিবস্বান মানব জাতির পিতা মনুকে এই জ্ঞান প্রদান করেন । মনু তার পুত্র রঘু বংশের জনক ইক্ষাকুকে এই জ্ঞান দান করেন। এভাবে পরম্পরা ধারায় এই জ্ঞান প্রবাহিত ছিল। কিন্তু কালক্রমে এই জ্ঞান নষ্ট প্রায় হওয়ায় কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে ভগবান এই, জ্ঞান আবার অর্জুনকে প্রদান করেন। ভগব্দগীতার যে ইতিহাস ভগবান দিয়েছেন তা হিসাব করলে দেখা যায় কলিযুগের স্থায়িত্বকাল ৪,৩২,০০০ বছর, তার আগে দ্বাপর যুগের স্থায়িত্ব কাল ৮,০০,০০০ বছর, তার আগে ত্রেতাযুগ যার স্থায়িত্ব কাল ছিল ১২,০০,০০০ বছর। এভাবে প্রায় ২০,০৫,০০০ বছর আগে মনু তার পুত্র ইক্ষাকুকে এই ভগবদ্গীতার জ্ঞান দান করেন। বর্তমান মনুর আয়ু ৩০,৫৩,০০,০০০ বছর এবং তার মধ্যে ১২,০৪,০০,০০০ বছর অতিবাহিত হয়েছে।
ভগবদগীতা-বিষয়ক কিছু প্রশ্ন জানতে এখানে ক্লিক করুন-
যদি ধরে নেই মনুর জন্মের সময় ভগবান সূর্যদেব বিবস্বানকে এই জ্ঞান প্রদান করেন তাহলেও প্রায় ১২,০৪,০০,০০০ বছর আগে গীতার জ্ঞান প্রদান করা হয়েছিল। এই জ্ঞানসর্বান্তঃকরণে গ্রহণ করে অনুশীলন করলে জড়া প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসার ফলে। যে সমস্ত জাগতিক সমস্যায় আমরা জর্জরিত তার সম্পূর্ণ সমাধান করতে পারব । “গীতাশাস্তমিদং পুণ্যং যঃ পঠেৎ প্রযতঃ পুমা” অর্থাৎ ভগবদ্গীতার নির্দেশকে যথাযথভাবে গ্রহন করে আমরা সমস্ত ভয় ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত হতে পারি । গীতার মাহাত্মে বলা হয়েছে
মলিনে মোচনং পুংসাং জল স্নানং দিনে দিনে
সকৃদ গীতামৃত স্নানং সংসারমলনাশনম্ ।
“প্রতিদিন জলে স্নান করে মানুষ নিজেকে পরিচ্ছন্ন করতে পারে কিন্তু কেউ যদি ভগবদগীতরার গঙ্গা জলে একটি বারও স্নান করে তাহলে তার জড় জীবনের মলিনতা একে বারে নষ্ট হয়ে যায়।
সর্বপনিষদো গাবো দোগ্ধা গোপালনন্দনঃ
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ
“গীতা সমস্ত উপনিষদের সার এবং তা ঠিক একটি গাভীর মতো। রাখাল বালক রূপে প্রসিদ্ধ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এই গাভীকে দোহন করছেন। অর্জুন যেন গো বৎসের মতো এবং জ্ঞানী গুণি ভক্তরাই ভগবদ্গীতার সেই অমৃতময় দুগ্ধ পান। করে থাকেন” ।
ভগবানের সঙ্গে জীবের সম্পর্ক কী?
উত্তর : ভগবদগীতায় ভগবান বলেছেন “সুহৃদং সর্বভূতানাং” (গী-৫/২৯)। অর্থাৎ আমি সর্ব জীবের প্রকৃত বন্ধু। “সর্ব যোনিষু কৌন্তেয় মুর্তয়ঃ সম্ভবন্তি যাঃ তাসাং ব্রহ্ম মহদ যোনিরহং বীজ প্রদ পিতা" (গী-১৪/৪)। অর্থাৎ হে কৌন্তেয় সমস্ত যোনিতে যে সমস্ত দেহ উৎপন্ন হয় ব্রহ্ম রূপা প্রকৃতি তার জননী এবং আমিই বীজ প্রদানকারী পিতা। “অহম্ সর্বস্য প্রভবো” (গী-১৩/৮) আমার থেকেই সব কিছু প্রকাশিত হয়েছে। এই সকল ভগবদ্ বাক্য থেকে উপলব্ধি হয় যে, এই জগতের সকল জীবের পিতা, বন্ধু, ত্রাতা, সকল বিদ্যার উৎস তিনিই। তার সাথে জীবের সেব্য এবং সেবকের সম্পর্ক। তিনি চান জীব জড় জগতের দুঃখদুর্দশার অবসান ঘটিয়ে নিত্য আলয় ভগবদ্ ধামে ফিরে আসুক ও সেবা সুখ ভোগ করুক। জীব ভোক্তা অভিমান করার ফলে এই জড় জগতে পতিত হয়।
মানসিক চাপ, অশান্তি দূর করার উপায়:এখানে ক্লিক করুন
ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার:এখানে ক্লিক করুন
মস্তিষ্ক ঠিক রাখার উপায়:এখানে ক্লিক করুন
কিন্তু আমরা জীবেরা ভগবানকে না মেনে অনাদিকাল ধরে এই বদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছি। আর মনে করছি এর উর্ধ্বে কিছু নেই। কর্মফলে যখন কুকুর, শেয়াল, শুকর হচ্ছি তখন বিষ্ঠা ভক্ষণ করছি আর ভাবছি এতেই সুখ। কৃষ্ণ ভুলি সেই জীব অনাদি বহির্মুখ, অতএব মায়া তারে দেয় সংসার দুঃখ (চৈ:চ:ম: ২০/১১৭)। দুঃখ পাওয়ার কারণ আমরা ভগবানকে বিস্মৃত হয়েছি। অথচ তিনিই আমাদের জীবন ধারনের জন্য জল, শ্বাসকার্যের জন্য বায়ু, মাঠে ধান, খনিজ পদার্থ, গাছে ফল, এমনকি জন্মের পূর্বেই মাতৃস্তনে দুধের ব্যবস্থা করেছেন। তার মতো প্রভু, সুহৃদ, পালক আর কে আছে? জীব ভগবানের সাথে দাস্য, সখ্য, বাৎসল্য, মধুর রসে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে এবং সেবা করতে পারে । " জীব কৃষ্ণ দাস এই বিশ্বাস করলে তো আর দুঃখ নাই”।
ভগবান শব্দের অর্থ কী? কাকে ভগবান বলে সম্বোধন করা যায় ?
উত্তর : ঐশ্বর্যস্য সমস্য বীর্যস্য যশসঃ প্রিয়ঃ
জ্ঞান বৈরাগ্যয়োশ্চৈব ষন্নাতু ভগ ইতিঙ্গনা (বিষ্ণুপুরাণ- ৬/৫/৪৭)
অর্থাৎ সমগ্র ঐশ্বর্য, সমগ্র বীর্য, সমগ্র যশ, সমগ্র সৌন্দর্য, সমগ্র জ্ঞান ও সমগ্র বৈরাগ্য এই ছয়টি গুণের সমাহারকে ভগ বলে। এই ছয়টি অচিন্ত গুণ যার মধ্যে পূর্ণরূপে বিদ্যমান তিনিই ভগবান। ভগবান শব্দের প্রথম অক্ষর ভ এর অর্থ হচ্ছে ভর্তা, গ এর অর্থ হচ্ছে নেতা বা স্রষ্টা, ব এর অর্থ বাস করা, ন এর অর্থ বিদ্যমান। শাস্ত্রে ভগবানের ৬৪টি গুণাবলির কথা বলা হয়েছে। তার মধ্যে ৫০টি গুণ মানুষ কিছু অংশে অর্জন করতে পারে। ৫৫টি গুণ আংশিকভাবে ব্রহ্মা ও শিবজির মধ্যে রয়েছে। ৬০টি গুণ পূর্ণভাবে নারায়ণের মধ্যে বিদ্যমান। ৬০টির সাথে অতিরিক্ত ৪টি গুণ যথা বেণু মাধুরী, লীলা মাধুরী, ভগবৎ প্রেমমন্ডিত ভক্ত পরিবৃত, রূপ মাধুরী অর্থাৎ ৬৪টি গুণ পরিপূর্ণভাবে লীলা পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণে বিদ্যমান। এই জন্য তিনি হচ্ছেন স্বয়ং ভগবান। কখনও কখনও ব্রহ্মা,। শিব প্রভৃতি শ্রেষ্ঠ জীবকেও ভগবান বলা হয়। কিন্তু একমাত্র স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণই হচ্ছেন পরমেশ্বর ভগবান।
আরোও পড়ুনঃ
ধর্মের সৃষ্টি কোথায়? পৃথিবীতে এত ধর্ম কেন?
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন