উত্তর : প্রতিটি নারীই একাধারে মা বোন স্ত্রী ও দুহিতা । তাই নারীকে বহুরূপী বলা হয়। ধর্মশাস্ত্র সমূহে নারীকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। নারী হচ্ছে শক্তি। নারী শব্দের আরেকটি প্রতিশব্দ হচ্ছে প্রমদা । প্রমদা শব্দের দুই রকম অর্থ হয়। এক প্রমদা হচ্ছে প্রেরণয়িনী। আরেক প্রমদা হচ্ছে প্রমত্তকারিণী। নারী যখন প্রেরণাদায়িনী রুপে কারও জীবনে ভূমিকা রাখে তখন তা প্রশংসনীয়। কিন্তু যখন প্রমত্তকারিণী রুপে ভূমিকা রাখে তবে তা সমাজের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। ভগবান রাম চন্দ্র লক্ষনের নিকট সীতা দেবীর গুণ বর্ণনা প্রসঙ্গে একজন স্ত্রী কেমন হবে তা বলেছেন, “কাযেষু মন্ত্রী, করণেষু দাসী, ধর্মেষু পত্নী, ক্ষমায়া চ ধাত্রী, স্নেহেষু মাতা, শয়নেষু বেশ্যা, রঙ্গে সখী লক্ষণ সা প্রিয়া মে" । অর্থাৎ সীতা দেবী কোনো কার্যে মন্ত্রীর মতো উপদেশ প্রদান করেন, কাজ করার সময় দাসীর মতো তা করেন, ধর্ম কাজে পত্নীর মতো, ক্ষমার প্রয়োজন হলে ধাত্রীর মাতো, স্নেহে মায়ের মতো, হাস্য পরিহাস ছলে একজন সখীর মতো।
আরোও জানুনঃ
মানসিক চাপ, অশান্তি দূর করার উপায়:এখানে ক্লিক করুন
ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার:এখানে ক্লিক করুন
মস্তিষ্ক ঠিক রাখার উপায়:এখানে ক্লিক করুন
আধ্যাত্মিক সমাজ গঠনে নারীরা বড় ভূমিকা রাখতে পারে। নারী যখন স্ত্রী তখন তিনি তার স্বামীকে ধর্ম কার্যে সহায়তা করে তাকে উৎসাহিত করতে পারে। কারও স্বামী যদি যথেষ্ট ধর্মপরায়ণ না হন তবে স্ত্রী তার স্বামীকে ধর্ম পথে এনে স্বামীর আধ্যাত্মিক কল্যাণ সাধন করতে পারেন। নারী যখন মা তখন তিনি তার সন্তানদের জীবনের শুরু থেকেই ধর্ম কার্যে প্রেরণা দিয়ে তাদের ধার্মিক হিসেবে গড়তে পারেন। সন্তানদের গল্প বলার সময় তারা যদি মহাভারত, পুরাণ, রামায়নের ঘটনা সমূহ বলেন তবে সন্তানরা খুব সহজেই ধর্ম সমূহ জানতে পারবে। সন্তানদের যখন গান শেখানো হয় তখন ভজন কীর্তন শিক্ষা দিয়ে তাদের মধ্যে ধর্ম অনুশীলন করার প্রবণতা গড়ে দিতে পারেন। বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় অনুষ্ঠান যেমন জন্মাষ্টমী, রথযাত্রা, গৌর পূর্ণিমা, দূর্গাপূজা প্রভৃতির সময় পরিবারের সবাইকে নিয়ে অনুষ্ঠান সমূহে যোগদান করে, তাদের নিকট এই সকল অনুষ্ঠানের মাহাত্ম বর্ননা করে আধ্যাত্মিক চেতনার বিকাশ সাধন করতে পারেন।
মাঝে মাঝে গৃহে সাধু, মহাত্মাদের এনে তাদের মুখে হরিকথা শোনার আয়োজন করে ও কীভাবে একজন সাধু বৈষ্ণবকে সম্মান প্রদর্শন করতে হয় এই সকল শিক্ষা প্রদান করতে পারেন। সন্তান যখন বড় হয় তখন অসৎ সঙ্গের প্রভাবে তার মধ্যে কিছু বদ অভ্যাস গড়ে উঠতে পারে। তাই ঐ সময়টায় মা যদি বন্ধুর মতো সন্তানকে নেশাসক্ত হওয়ার কুফল, তাস/জুয়া ইত্যাদি খেলার কুফল, অবৈধ সঙ্গ করার ভয়াবহতা বর্ণনা করে এবং এগুলো যে ধর্মে নিষিদ্ধ তা বলে সন্তানদের একজন আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে পারেন। জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য যে ভগবানকে জানা এবং ভগব্দধামে ফিরে যাওয়া এই সকল শিক্ষা প্রদান করা একজন মায়ের অবশ্যই কর্তব্য।
আরোও জানুনঃ
আরোও পড়ুনঃ
নারীরা সিঁদুর পরে কেন?এখানে চাপুন
হিন্দু মেয়েরা প্রেমের ফাঁদে পড়ে ধর্মান্তরিত এর সমাধান
শাস্ত্রে বলা হয়েছে, কেউ যদি তা অধস্তনকে কৃষ্ণ উপদেশ প্রদান করে ভগব্দধামে ফিরিয়ে নিয়ে যেতে না পারে তবে তার পিতা, মাতা, গুরু হওয়ার কোনোই অধিকার নেই। পিতামাতা যেনম সন্তানদের পড়ালেখা ও অন্যান্য বিষয়ে খেয়াল রাখেন, তেমনি সন্তানদের ধর্মীয় চেতনা যাতে বৃদ্ধি পায় সেদিকেও বিশেষ যত্ন নিবেন। আর যদি তা না করা হয় তবে সন্তানের আধ্যাত্মিক মৃত্যুর জন্য পিতা মাতাই দায়ী। তাই চৈতন্য মঙ্গলে বলা হয়েছে, "সেই সে পরম গুর সেই পিতা মাতা, শ্রীকৃষ্ণ চরণে যে প্রেম ভক্তি দাতা"। কোনো সন্তান যদি জীবনের অর্ধেক সময় ধর্মীয় শিক্ষার অভাবে ধর্ম বিহীন কাটায় এবং পরবর্তীতে কোনো সাধু সঙ্গ পেয়ে ধর্ম অনুশীলনকে তত্ত্বত জানতে পারে, তখন সেই সন্তান তার এতটা সময় বৃথায় হারানোর জন্য পিতা। মাতাকেই দায়ী করবে। কেননা, পিতামাতা তাকে আর সব শিক্ষার পাশাপাশি ধর্ম শিক্ষার উপযোগিতা প্রদান করেনি। মনুষ্য জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্বন্ধে অবগত করেনি।
আরোও জানুনঃ
পিঠ ব্যথাঃ উপশম ও ঘরোয়া চিকিৎসা←এখানে চাপ দিন
কাঁধ এবং বাহুতে ব্যথার কারণ ও পরামর্শ←এখানে চাপ দিন
বুকে ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা←এখানে চাপ দিন
নারীরা হচ্ছে বিশুদ্ধ বুদ্ধির প্রতীক। তাদের সদাচারী, পতিব্রতা, চারিত্রিক দিক দিয়ে অত্যন্ত সৎ হতে হবে। কারন পরবর্তী প্রজন্মকে নৈতিক দিয়ে বলবান করে গড়তে একজন মা, বোন ও স্ত্রীর ভূমিকা অপরিসীম। বিল্বমঙ্গল ঠাকুরের জীবনীতে আমরা দেখতে পাই, একজন নারী কীভাবে কৃষ্ণ উপদেশ প্রদান করে তার প্রেমিককে “নারীর প্রতি যে আসক্তি সেই আসক্তি যদি কৃষ্ণের প্রতি থাকে তবে কৃষ্ণকে পাওয়া যায় এই উক্তি করে বিল্বমঙ্গল ঠাকুরকে এক মহান কৃষ্ণ ভক্তে পরিণত করেছে। একজন স্ত্রী যদি ধর্মপরায়ণ হন তবে সেই সংসারের আর সব লোক স্বভাবতই ধার্মিক হবে। আর নারী যদি ব্যভিচারী হয় তবে সেই সংসারে নেমে আসে সীমাহীন দুর্ভোগ। একজন সতী নারীর পক্ষে জগতের এমন কোনো কার্য নেই যে সে করতে পারে না। সাবিত্রী সত্যবান, নল দয়মন্তী প্রভৃতি ভগবানের ভক্ত সতী নারীর জীবনীতে আমরা তা দেখতে পাই। এই কারনে এই সকল মহান নারীদের জীবনী পাঠ এবং তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার জন্যই পুরাণ সমূহে এই সকল কাহিনী বর্ণিত হয়েছে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসাঃ এখানে ক্লিক করুন
চুল পড়ার ১৫টি কারণঃ এখানে ক্লিক করুন
শ্বাস নেওয়ার সময় বুক ব্যথার কারণঃ এখানে ক্লিক করুন
পতি সেবা একজন নারীর পরম ধর্ম। বিবাহের পূর্বে কোনো পুরুষের সাথে এবং বিবাহের পর স্বামী ব্যতিত অন্য কোনো পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা তার উচিত নয়। মেয়েরা যেহেতু আবেগপ্রবণ তাই তাদের খুব সহজেই ভুল পথে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। ধর্মীয় অনুশাসনের মাঝে যদি তারা থাকে, ভক্তসংগ করে, বিবাহের পূর্বে পিতার তত্ত্বাবধানে থাকে, বিবাহের পর স্বামী ও বৃদ্ধ অবস্থায় উপযুক্ত পুত্রের তত্ত্বাবধানে থাকে তবে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা সহজেই এড়ানো যায়। শাস্ত্রগ্রন্থ সমূহ তাই নারীদের জন্য এই সকল বিধান রেখেছে। ধর্মীয় ভাবগাম্ভর্যের মধ্যে যদি কোনো মেয়ে বড় হয়ে উঠে তবে সংস্কারবশত পরবর্তীতে বিবাহের পরও সে নতুন সংসারে ঐ সকল ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলবে। ফলে নতুন সংসারটি তার গুণে সুখী হবে। তাই মা বোনদের সর্বক্ষণ কৃষ্ণ সেবা, কৃষ্ণ কথা, কৃষ্ণের জন্য রান্না করা, কৃষ্ণ ভক্ত সন্তান তৈরি করা প্রভৃতি কার্যে ব্যস্ত থাকলে সমাজটি প্রকৃতই ধর্মপ্রাণ হবে। আজকের দিনের প্রেক্ষাপটে যা অত্যন্ত জরুরি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন