উঃ রূপ, রস, শব্দ, গন্ধ ও
স্পর্শ।
* পঞ্চ জ্ঞানেন্দ্রিয় কি কি?
উঃ নাক, জিভ, চোখ, কান ও ত্বক।
* পঞ্চ কর্মেন্দ্রিয় কি?
উঃ বাক, পানি, পাদ, উপস্থ, পায়ু।
* জীবের সূক্ষ শরীরটি কি উপাদান দিয়ে তৈরী?
উঃ শরীরটি মন, বুদ্ধি ও অহংকার দিয়ে জীবের সূক্ষ্ম তৈরী।
* জীবের মৃত্যুর পর তার কি গতি হয়?
উঃ জীবের মৃত্যুর পর দুই প্রকার গতি হয়।
এক - যে জীব ভগবদ্ভুজনের প্রভাবে সমস্ত জড় কলুষ থেকে মুক্ত হয়ে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের নিকট আত্মসমর্পণ করে, তারা নিত্য আলয় ভগবদ্ধামে গমন করে । সেখানে তারা দিব্য শরীর প্রাপ্ত হয়ে নিত্যকালের জন্য ভগবানের সেবায় নিযুক্ত হয়।
দুই - যাদের জড়জাগতিক কামনা বাসনা আছে, তারা মৃত্যুর মাধ্যমে ক্ষিতি, অপ, তেজ, মরুৎ ও ব্যোম দিয়ে তৈরী স্কুল শরীরকে পরিত্যাগ করে। কিন্তু মন, বুদ্ধি ও অহংকার নির্মিত সূক্ষ্ম শরীর তাদের পাপ ও পূর্ণ কর্মফল বহন করে। পাপ কর্মের ফলস্বরূপ তারা যমযাতনা ভােগ করে আর পূর্ণ কর্মের ফলস্বরূপ স্বর্গসুখ ভােগ করে থাকে। এই ভােগের পর তাদের নিজ নিজ কর্ম ও চেতনা অনুসারে তারা আর একটি স্কুল জড় শরীর প্রাপ্ত হয়। এভাবে ৮৪ লক্ষ জীব প্রজাতির যে কোন একটি প্রজাতিতে তাদের জনুগ্রহণ করতে হয়।
* দেহ ও আত্মার পার্থক্য কি?
উঃ জড় বস্তুর দ্বারা নির্মিত শরীর সদা পরিবর্তনশীল, নশ্বর, বিনাশশীল, অনিত্য সুল, বহিরঙ্গা জড়া প্রকৃতির সৃষ্টি। জড়দেহ অচেতন, পরিমাপযােগ্য; তাকে কাটা যায়, শুকানাে যায় পােড়ানাে যায়, ভেজানাে যায়, তা দুঃখ ক্লেশের আধার স্বরূপ। আত্মা অপরিবর্তনীয়, অব্যয়, অক্ষয়, অবিনশ্বর নিত্য, সনাতন, সম্ম অপরিমেয়, ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ, চেতন, অচ্ছেদ্য, অদাহ্য, নােক্রেদ্য। অশােষ্য, সর্বব্যাপ্ত, আনন্দময়।
* জীবের প্রকৃত সমস্যা বা দুঃখ কি?
উঃ দুঃখ হচ্ছে - জন্ম, মৃত্যু, জরা ও ব্যাধি জীবের প্রকৃত সমস্যা ।
* ত্রিতাপ ক্লেশ কি?
উঃ তিন রকম অবশ্যম্ভাবী দুঃখ লাভ করে জীবাত্মা এই দুঃখকে বলা হয় ত্রিতাপ ক্লেশ। সেগুলি হচ্ছে (১) আধিভৌতিক ক্লেশ (২) আধিদৈবিক কেশ (৩) আধ্যাত্মিক ক্লেশ। জীব তার নিজের মন ও শরীর থেকে যে ক্লেশ প্রাপ্ত হয় তা আধ্যাত্মিক ক্লেশ। যেমন ঃ মানসিক কষ্ট এবং রােগ ব্যাধি ইত্যাদি। অন্য জীব থেকে প্রাপ্ত ক্লেশকে আধিভৌতিক ক্লেশ বলা হয়। যেমন : সাপের কামড়, মশা-মাছি চোর-ওভার উদ্ৰৰ ইত্যাদি। দৈবক্রমে অর্থাৎ দেবতাদের দ্বারা প্রদত্ত যে ক্লেশ, তাকে আধি দৈবিক ক্লেশ বলা হয়। যেমন - অনাবৃষ্টি, ঝড়, বন্যা, ভূমিকম্প ।
*জীব-চেতনা কয় প্রকার ও কি কি?
উঃ পাঁচ প্রকার - (১) আচ্ছাদিত চেতন, (২) সংকুচিত চেতন, (৩) মুকুলিত চেতন, (৪) বিকশিত চেতন, (৫) পূর্ন বিকশিত চেতন। পাহাড়, বৃক্ষ আদিতে যে চেতনা, তাকে আচ্ছাদিত চেতনা বলা হয়। পশু পাখিরা হচ্ছে। সংকুচিত চেতন জীব। সাধারণ মানুষ হচ্ছে মুকুলিত চেতন। মানুষের মধ্যে যারা ভগবদ্ভজনে নিযুক্ত হয়েছেন তারা হচ্ছেন বিকশিত চেতন। আর ভগবদ্ভুজনে যাঁরা সিদ্ধি লাভ করেছেন তাদের চেতনাকে পূর্ণ বিকশিত চেতনা বলা হয়।
*পুনর্জন্ম কি?
উঃ জীবাত্মা যে শরীরের মধ্যে অবস্থান করে সেই শরীর কৌমার থেকে যৌবন, যৌবন থেকে বার্ধক্য অবস্থায় ক্রমান্বয়ে পরিবর্তিত হতে থাকে। কিন্তু দেহ আত্মার কোন পরিবর্তন হয় না। ঠিক যেমন পুরানাে কাপড় পরিত্যাগ করে নূতন কাপড় পরিধান করা হয়, ঠিক তেমনি জীবাত্মা অব্যবহারযােগ্য জরাজীর্ণ শরীর পরিত্যাগ করে তার কর্ম এবং বাসনা অনুসারে আরেকটি নূতন শরীর গ্রহন করে। আত্মার এই নূতন শরীর ধারণকে বলা হয় পুনর্জন্ম ।
* কয় প্রকার যােগী আছেন?
উঃ যােগী চার প্রকার - কর্মযােগী, জ্ঞানযােগী, ধ্যানযােগী ও ভক্তিযােগ্য।
* কোন প্রকার যােগী নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করেন?
উঃ জ্ঞানযোগী নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা করেন।
* পরমাত্মার ধ্যান উপাসনা করে কোন প্রকার যােগী হৃদয়ে ?
উঃ অষ্টাঙ্গ যােগী বা ধ্যান যােগী ধ্যানের মাধ্যমে পরমাত্মার উপাসনা করিয়া থাকেন।
* কোন প্রকার যােগী সরাসরি ভগবানের উপাসনা করেন?
উঃ ভক্তিযােগ অবলম্বনকারী ভগবানের ভক্তরাই ভগবানের উপাসনা করেন।
* ভগবান যে আছেন তার প্রমাণ কি?
উঃ ভগবানের অস্তিত্বের আছে তা জানতে আমাদের শাস্ত্রের সাহায্য গ্রহণ করতে হবে কেননা শাস্ত্র প্রমান দিবে। এই বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের সৃষ্টি, স্থিতি এবং প্রলয়কারী হচ্ছেন ভগবান। যিনি সব কিছু সৃষ্টি করেছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ এ জগতে আমরা দেখতে পাচ্ছি - একটি বাড়ী তৈরী করার জন্য কোন ইঞ্জিনিয়ার বুদ্ধি দিয়ে থাকে এবং মিস্ত্রিরা ইট, বালি, পাথর দিয়ে বাড়ীটি তৈরী করে থাকে। ঠিক সেই রকম এই বিশ্বব্রহ্মান্ড আপনা থেকেই এমন সুশৃখল হয়ে যায় না। সৃষ্টির পেছনে কারাে না কারাে হাত আছে। যিনি বৃদ্ধি প্রদান করেছেন, এই সমস্ত উপাদান প্রদান করেছেন এবং যিনি এই বিশ্বব্রহ্মান্ড সৃষ্টি করেছেন, তিনিই হচ্ছেন ভগবান।
*ভগবানের সংগে জীবের সম্পর্ক কি?
উঃ ভগবানের সংগে জীবের সম্পর্ক হচ্ছে ভগবান নিত্যপ্রভু এবং জীব তার নিত্যদাস।
* ভগবানের সংগে জড় জগতের সম্পর্ক কি?
উঃ জড়জগৎ হচ্ছে ভগবানের অনুৎকৃষ্টা বহিরঙ্গা শক্তির থেকে উৎপন্ন।
* ভগবান কেন জড় জগৎ সৃষ্টি করেছেন?
উঃ প্রথম কারণ ঃ এই জড় জগৎ হচ্ছে সমস্ত চিন্ময় সৃষ্টির একাংশে অবস্থিত। ক্ষুদ্র কারাগার সদৃশ। তাই যারা ভগবানের প্রদত্ত নিয়ম ভঙ্গ করে, তাদেরকে এই জড় জগতে আসতে হয়। এখানে বহিরঙ্গা শক্তি দুর্গাদেবী জড় জগরূপ দুর্গের দেখাশুনা করেন এবং ত্রিতাপ ক্লেশ দিয়ে জীবকে শাসন করে শিক্ষা প্রদান করে থাকেন। দ্বিতীয় কারণ ও ভগবান এই জড় জগৎ এইজন্য সৃষ্টি করেছেন যে, জীব যেন তার মিথ্যা প্রভুত্ব করার আকাক্ষা ও ভােগবাসনা পরিত্যাগ করে ভগবদ্ভুজনের মাধ্যমে ভগবদ্ধামে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কাছে আবার ফিরে যেতে পারে।
*অষ্টসিদ্ধি কি কি?
উঃ অণিমা, মহিম, লঘিমা, প্রাপ্তি, কাম্য, ঈশিত্বা, ৰশিতা ও কামশল্পিত্য ।
* ভগবানের নিরাকার, নির্বিশেষ বিভাগ কাকে বলে?
উঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিত্যকাল গােলক বৃন্দাবনে অবস্থান করেন। তার দেহ থেকে নির্গত ব্রহ্মজ্যোতি সমস্ত পরব্যোমে অর্থাৎ চিদাকাশে স্থিত চিন্ময় জগৎকে আচ্ছাদিত করে রেখেছে। সেই জ্যোতিকে বলা হয় নির্বশেষ বিভাগ।
* যােগীরা হৃদয়ে কার ধ্যান করেন?
উঃ যােগীরা হৃদয়ে পরমাত্মারূপী নারায়ণকে ধ্যান করেন।
*জ্ঞানযােগী কাকে বলে?
উঃ ব্রহ্মের উপাসনা করে ব্রহ্মে লীন হওয়ার জন্য যারা নিরাকার প্রয়াস করে, তাদেরকে জ্ঞান যােগী বলা হয়।
* ভক্তিযােগী কাকে বলে?
উঃ যিনি অনন্যচিত্তে প্রগাঢ় প্রেমের সংগে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতি ভক্তিমূলক সেবায় যুক্ত থাকেন, তিনিই ভক্তিযােগী।
*জ্ঞানী, যােগী ও ভক্তের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কে?,এবং কেন?
উঃ ভক্তই সবথেকে শ্রেষ্ঠ। জ্ঞানীরা ভগবানের অব্যক্ত নিরাকার রূপকে উপলব্ধি করতে পারে । কিন্তু ভগবানকে প্রাপ্ত হয় না। যােগীরা ভগবানের আংশিক প্রকাশ পরমাত্মা রূপে ভগবানকে হৃদয়ে দর্শন করে কিন্তু ভগবানের সংগে ভাবের ততটা আদান প্রদান করতে পারে না। ভগবানের ভক্ত ভগবানের সব থেকে নিকটতম হয়ে ভগবদ্ধামে প্রবেশ করে প্রত্যক্ষভাবে ভগবানের সান্নিধ্য লাভ করতে পারে। তার প্রেমময়ী ভক্তিমূলক সেবায় নিজেকে নিযুক্ত করতে পারে তাই ভক্ত ভগবানের নিত্য প্রিয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন