দেবদেবীর উপাসনার ফল- দেবদেবীর শরণাপন্ন হলে কি হবে?

দেবদেবী
দেবদেবীরা ভগবান শ্রীকষ্ণের বিশ্বরূপের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ। তারা কিন্তু স্বতন্ত্র ভগবান নন। তাঁরা ভগবানের শক্তিতে শক্তিমান। একটি দেশে যেমন সরকারপ্রধানের অধীনে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থাকে এবং তা পরিচালনার জন্য মন্ত্রী থাকে ঠিক তেমনি ভগবান জড় জগৎ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন দেবদেবীদের ভার দিয়েছেন। আমাদের অন্তহীন কামনাবাসনা পূরণের জন্য আমরা দেবদেবীদের শরণাপন্ন হই। কিন্তু তাঁদের স্বতন্ত্রভাবে কোনো কিছু দানের ক্ষমতা নেই। পরমেশ্বর ভগবানের কাছ থেকে নিয়ে দেবদেবীরা তাদের ভক্তকে দিয়ে থাকেন। কিন্তু দেবদেবীরা মুক্তি প্রদান করতে পারেন না। কারণ মুক্তি প্রদাতা একমাত্র স্বয়ং ভগবান। দেবদেবীরা ভগবানের মহান ভক্ত। তাই আমরা দেবদেবীদের অশ্রদ্ধা করব না।
আরোও জানুনঃ 
মানসিক চাপ, অশান্তি দূর করার উপায়:এখানে ক্লিক করুন 
ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার:এখানে ক্লিক করুন 
মস্তিষ্ক ঠিক রাখার উপায়:এখানে ক্লিক করুন 

সর্ব দেবে পূজিব না হইব তৎপর, সবার কাছে মেগে নেব কৃষ্ণ ভক্তি বর আমরা দেবদেবীর পূজা করে তাদের নিকট আমার যাতে কৃষ্ণ ভক্তি হয় এই বর চাইব।একেলে ঈশ্বর কৃষ্ণ আর সব ভৃত্য, যারে যৈছে নাচায় সে তৈছে করে নৃত্য" (চৈ:: : /১৪২) বাজিকর পুতুল নাচায় কিন্তু মনে হয় পুতুল নিজে নিজে নাচছে। ঠিক তেমনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণ দেবদেবী, মানুষ, পশুপাখি আদি সবাইকে নিয়ন্ত্রণ করেন। তবে দেবদেবীরা ভগবানের অত্যন্ত প্রিয় সেবক। তারা যেহেতু ভগবানের বিশ্বরূপের বিভিন্ন অংশ তাই তাদের পূজা করা হলেও প্রকারন্তরে ভগবানেরই পূজা করা হয়। তবে ভগবান গীতাতে বলেছেন তা অবিধিপূর্বক।

যেহপ্যন্য দেবতা ভক্তা যজন্তে শ্রদ্ধয়াম্বিতাঃ।
তেহপি মামেব কৌন্তেয় যজন্তি অবিধিপূর্বকম।। (গীতা-/২৩)

যারা অন্য দেবতাদের ভক্ত এবং শ্রদ্ধা সহকারে তাঁদের পূজা করে প্রকৃতপক্ষে তারা অবিধিপূর্বক আমারই উপাসনা করে। শ্রীমদ্ভাগবতমে নারদ মুনি প্রচেতাগণকে বলেন,গাছের গোড়ায় জল দিলে যেমন আলাদা করে আর পাতা, ডাল, শাখায় জল দিতে হয় না, উদরকে খাদ্য দিলে যেমন শরীরের অন্য অঙ্গগুলো আপনা থেকে পুষ্ট হয় তেমনি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পূজা করলে সকলেরই পূজা হয়, সকলই তৃপ্ত হয়। (ভাগবতম /৩১/১৪)

কারা দেবতাদের শরণাপন্ন হন :

কারা দেবতাদের শরণাপ্নন হন এটা জানার আগে জানতে হবে অবতার সম্পর্কে। নিম্নে অবতার সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলঃ

অবতার
শ্রীমদভাগবতে আছে অবতারা হ্যসংখ্যেয়া হরে, সত্ত্বনিধ্যে দ্বিজা, যথাহবিদাসিন: কুল্যয় সরস: স্যু: সস্ত্রেশ: (ভাগবত-//২৬) অর্থাৎ যে রূপ অক্ষয় রোবর থেকে সহস্র সহস্র ক্ষুদ্র প্রবাহ নির্গত হয়, সেই রূপ বিশুদ্ধ সময়, চিদানন্দ সমুদ্র ভগবান শ্রীহরি হইতে অসংখ্য অবতার প্রকট হয়। পরমেশ্বর ভগবানের ছয় প্রকার অবতার রয়েছে।

১। পুরুষাবতার
২। লীলাবতার
৩। গুণাবতার
৪। মন্বন্তর অবতার
৫। যুগাবতার
৬। শক্ত্যাবেশ অবতার।

ভগবান যখন এই পৃথিবীতে অবতরণ করেন তখন তাঁকে অবতার বলে। কখনও কখনও তিনি নিজে স্বয়ং আসেন আবার কখনও কখনও তিনি তাঁর শক্তিতে আবিষ্ট করে কাউকে প্রেরণ করেন। শ্রীকৃষ্ণ কেবল অবতার নন, তিনি হচ্ছেন অবতারী। যখন পৃথিবীতে ধর্মের গ্লানি হয় তখন সাধুদের পরিত্রাণ করার জন্য ভগবান পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন। তবে এগুলো গৌণ কারণ। কারণ অসুর নিধন আদি কার্য করার জন্য ভগবানকে স্বংয়ং আসতে হয় না।

আরোও জানুনঃ
ভগবান ও ঈশ্বরের পার্থক্যঃ ক্লিক করুন
দেব দেবী পূজার রহস্যঃ ক্লিক করুন

মুখ্য কারণ হচ্ছে তিনি তার ভক্তগণকে আনন্দিত করার জন্য স্বয়ং অবতীর্ণ হন।লীলা পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ, শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু হচ্ছেন স্বয়ং অবতারী শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু যে স্বয়ং ভগবান তার অনেক প্রমাণ শাস্ত্রে আছে।

কৃষ্ণ বর্নং ত্বিষাহকৃষ্ণং সাঙ্গোপাঙ্গাস্ত্র পার্ষদম, যজ্ঞৈ সংকীর্তন প্রায়ৈজন্তি হি সু মেধসঃ" (ভাগ; ১১//৩৮) 

অথর্ব বেদে মহর্ষি পিপল্লাদ ব্রহ্মাকে জিজ্ঞাসা করলেন, কলি যুগের উপাস্য দেবতা কে? উত্তরে ব্রহ্মা বললেন, “জাহ্নবী তীরে নবদ্বীপে গোলকাশ্যে ধান্নি গোবিন্দ দ্বিভূজো গৌরং সর্বাত্মা মহাপুরুষো মহাত্মা মহাযোগী ত্রিগুণাতীত: সত্ত্বরুপো ভক্তিং লোকে কাশ্যতীতিঅর্থাৎ সকলের আত্মস্বরূপ মহাপুরুষ, ত্রিগুণাতীত বিশুদ্ধ সময় দ্বিভুজ শ্যামসুন্দর স্বয়ং জাহ্নবী তীরে (গঙ্গা) গোলক স্বরূপ নবদ্বীপ ধামে গৌর সুন্দর রূপে অবতীর্ণ হয়ে জগতে ভক্তি প্রকাশ করবেন।

শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কলি যুগে মানুষের দুর্দশা দেখে, যে পথটি ধরার জন্য বেদ, পুরাণ কঠিন সাধনের ব্যবস্থা করেছেন, আজ বেদ পুরাণের মালিক এসে স্বয়ং আসরে বসে বড় নিরান্দের মাঝে আনন্দের উৎসবের তো, কলি ঘো তিমিরে। পূর্ণিমার লো মত অতি সহজসাধ্য সাধন যা পশুপক্ষিকেও মুগ্ধ করে সেই নাচে গানে সাধনহরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরেমহামন্ত্র উপদেশ করলেন

হরের্নাম হরের্নাম হরের্নামৈব কেবলম।
কলৌ নাস্তেব নাস্তেব নান্তেব্য গতিরন্যথা (কলি সন্তরণ উপণিষদ)

কলি যুগে হরিনাম মহামন্ত্র জপ ছাড়া আর কোনো গতি নাই, গতি নাই, গতি নাই কলি যুগের যুগাবতার হচ্ছেন কল্কি অবতার কলি যুগের স্থায়িত্ব হচ্ছে ,৩২,০০০ বছর। তার মধ্যে প্রায় ৫৫০০ বছর গত হয়েছে। এই কলি যুগের শেষের দিকে ভগবান ল্কিদেব নামে আবির্ভূত হবেন

আরোও জানুনঃ
কাশি দূর করার উপায়: এখানে ক্লিক করুন
ঘুমনা আসার কারণ ও প্রতিকারঃ এখানে ক্লিক করুন
চুলকানি - চর্মরোগ উপশমঃ এখানে ক্লিক করুন

অথাসৌ যুগসন্ধ্যায়াং দস্যুয়েষু রাজসু, জনিতা বিষ্ণু যশসো নাম্না কল্কির্জগৎ পতি: (ভাগ: //২৫) অর্থাৎ দ্বাবিংশ অবতারে যুগ সন্ধিকালে শাসক সম্প্রদায় যখন দস্যুতে পরিণত হবে তখন ভগবান কল্কি অবতার নামে বিষ্ণুযশ নামক ব্রাহ্মণের পুত্র রুপে অবতরণ করবেন।

দেবদেবীর শরণাপন্নঃ

কামৈস্তৈস্তৈৰ্হত জ্ঞানা প্রপদ্যন্তেহন্য দেবতাঃ।
তং তং নিয়মমাস্থায় প্রকৃত্যা নিয়তা স্বয়া ।। (গীতা-/২০)

অর্থাৎ জড় কামনাবাসনার দ্বারা যাদের জ্ঞান অপহৃত হয়েছে তারা অন্য দেবদেবীর শরণাপন্ন হয় এবং তাদের স্বীয় স্বভাব অনুসারে নিয়ম পালন করে দেবদেবীর উপাসনা করে।

প্রকৃতপক্ষে দেবতাদের এই রূপ কৃপা কপট কৃপা। ধন, স্ত্রী ইত্যাদি জাগতিক কামনাবাসনার তৃপ্তি মানে আরও বেশি আসক্তি এবং এই জগতে থাকার মেয়াদ বৃদ্ধি করা। আর দেবতাদের উপাসনার লঃ

 অন্তব ফলং তেষাং তদ্ভবত্যল্প মেধসাম
দেবান দেযজো যান্তি মদ্বক্তা যান্তি মামপি।। (গীতা-/২৩)

অর্থাৎ-অল্প বুদ্ধি সম্পূর্ণ ব্যক্তিদের আরাধনা লব্ধ ফল অস্থায়ী দেব উপাসকগ দেবলো প্রাপ্ত হন এবং আমার ভক্তরা আমার নিত্য ধাম প্রাপ্ত হন। বাসুদেবং পরিত্যজ্য যোহন্যদেবমুপাসতে, ত্যক্তামৃতং মূঢ়াত্মা ভুঙ্গক্তে হলাহলং বিষম্ (হরিবংশ) অর্থাৎ যে মূঢ়াত্মা বাসুদেব শ্রীহরিকে পরিত্যাগ করে মোহবশত অন্য দেবতার উপাসনা করে সে অমত ছেড়ে সংসার যাতনা রূপ বিষ ভক্ষণ করে। দেবলোকসমূহ এই চতুর্দশ ভুবন বিশিষ্ট জড় জগতের মধ্যেই এবং তা অনিত্য। পুণ্যফল ভো শেষ হলে আবার এই পৃথিবীতে ফিরে আসতে হয়। কিন্তু ভগবদ্ধাম প্রাপ্ত হলে আর পুনর্জন্ম হয় না।

আরোও জানুনঃ
পা ও গোড়ালি ফুলার কারণ এবং প্রতিকারঃ এখানে ক্লিক করুন
হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায়এখানে ক্লিক করুন
উচ্চ রক্ত চাপের প্রকারভেদএখানে ক্লিক করুন

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন