গুরু পুজাঃ গুরুপুজার প্রয়োজনীয়তা

গুরু-পুজা
শ্রীল প্রভুপাদ বিশেষ করে আমাদের গুরু পূজার যো দিতে বলতেন। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন যেপ্রতিদিন গুরুদেবের কাছে শিষ্যের দন্ডবৎ প্রগতি জানানো একান্ত দরকার এবং যে কোন অপরাধের জন্য তার ক্ষমা ভিক্ষা করা উচিত। কৃষ্ণ ভাবনা অনুশীলণে আবাধে এগিয়ে যেতে হলে গুরুকৃপা এবং গুরুর কাছে আত্মনিবেদন, আর গুরু নীতি মেনে চলা খুবই দরকার। শাস্ত্রাদিতে গুরুপূজার কথা বারে বারে বর্ণনা করা হয়েছে। শ্রীভগবান বলেছেনঃ

প্রথমন্তু গুরুং পূজা ততৗশ্চব মমার্চনম্।
কৃর্বন সিদ্ধিমবাপ্নোতি হ্যনাথা স্ফিলং ভবেৎ।।

প্রথমে গুরুপূজা করে পরে আমার পূজা করবে, তাহলেই সিদ্ধি হবে; নতুন পূজা নিস্ফল হবে।(ভক্তিসন্দর্ভ)

শ্রীল ভক্তিবিনো ঠাকুর বলেছেনঃ-
অগ্রে গুরুপূজা, পরে শ্রীকৃষ্ণ পূজন।
গুরুদেবে শ্রীকৃষ্ণ প্রসাদ সমর্পণ।।
গুরু আজ্ঞা লয়ে কৃষ্ণ পূজিবে যতনে
শ্রীগুরু স্মরিয়া কৃষ্ণ বলিবে বদনে।। (হরিনাম চিন্তামনি)

 বরাহ পুরাণেও পাওয়া যায়ঃ-

 সিদ্ধির্ভবতি বা নেতি সংশয়োহচ্যুত সেবিনাম।
নিঃসংশয় দদ্ভক্ত পরিচর্যা রতাত্মনাম।।

যারা ভক্তশ্রেষ্ঠ শ্রীগুরুদেবের সেবায় উদাসীন হয়ে স্বতন্ত্রভাবে ভগবানের সেবা করার চেষ্টা করে, তাদের সিদ্ধি হয় না। কিন্তু গুরুর আনুগত্যে আঁরা ভগবানের সেবা করেন তাঁদের সিদ্ধি অর্থাৎ ভগবৎ অনিবার্য। আদি পুরাণে শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছেন

যে মে ভক্তজনা: পার্থ মে ভক্ত তে জনাঃ।
মদ্ভক্তানাং যে ভক্তাস্তে মে ভক্ততমা মতাঃ।।

হে অর্জুন! যারা ভক্তশ্রেষ্টগুরুদেবের সেবা বাদ দিয়ে আমার সেবা করতে চায়, তারা আমার প্রকৃত ভক্ত নয়। যারা আমার ভক্তের ভক্ত অর্থাৎ গুরুভক্ত, তারাই আমার প্রকৃত ভক্ত।

আরোও জানুনঃ 
মানসিক চাপ, অশান্তি দূর করার উপায়:এখানে ক্লিক করুন 
ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার:এখানে ক্লিক করুন 
মস্তিষ্ক ঠিক রাখার উপায়:এখানে ক্লিক করুন 

ভগবান বলেছেন -

মো ভক্ত প্রতি ভক্তি করে যে।
নিসংশয় বলিলাম মোরে পায় সে।।(চৈঃ ভাঃ অন্তঃ /৯৬)
মো ভক্ত না পূজে, আমারে পূজে মাত্র।
সে দাম্ভিক নহে মো প্রসাদের পাত্র।।(চৈঃ ভাঃ অন্তঃ /৯৮)
আমার ভক্তের পূজা-আমা হৈতে বড়।
সেই প্রভু বেদে - ভাগবতে কৈলা দৃঢ় ।। (চৈঃ ভাঃ আদি /)

শ্রীমদ্ভাগবতে শ্রীকৃষ্ণ উদ্ভবকে বলেছেনঃ-

মদ্ভক্ত পূজাভ্যধিকা সর্বভূতেষু মন্নতিঃ।।
আমার ভক্তের পূজা- আমার পূজা হতেও শ্রেষ্ঠ। (ভাগবত ১১/১৯/২১)
হরিভক্তি সুবোদয়ে বলা হয়েছেনঃ-
অভ্যৰ্চয়িত্বা গোবিন্দং তদীয়ানাৰ্চয়ন্তি যে।
তে বিষ্ণু প্রসাদস্য ভাজনং দান্তিকাজনাঃ।।

যারা শ্রীগোবিন্দের পূজা করে গোবিন্দের ভক্তগণের পূজা করে না, তারা দাম্ভিক -কখনই বিষ্ণুর কৃপা পাত্র নহে।

(হরিভক্তি সুপোদয় ১৩/৭৬)

নাহমিজাপ্রজাতিভ্যাং তপসাপশমেন বা।
তুষ্যেয়ং সর্বভূতাত্মা গুরুশুশ্রুষরা যথা ।।

শ্রীভগবান বলেছেন, “আমি গুরুসেবার দ্বারা যেরূপ সন্তুষ্ট হয়ে থাকি গৃহস্থধর্ম, সন্নাসধর্ম বা অন্য কোন কিছুর দ্বারা সেরূপ সন্তুষ্ট হই না।” (ভাগবত ১০/৮০/৩৪)

 বৈষ্ণবরাজ শিব পার্বতীকে বলেছেনঃ-
আরাধনানাং সর্বেষাং বিষ্ণোরারাধনং পরম।
তস্মাৎ পরতরং দেবী তদীয়ানাং সমর্চনম্।।

হে দেবি, “সমস্ত আরাধনা অপেক্ষা শ্রীবিষ্ণুর আরাধনাই শ্রেষ্ঠএবং শ্রীবিষ্ণুর আরাধনা অপেক্ষা ভক্ত শিরোমনি শ্রীগুরুপাদপদ্মের সেবা আরও শ্রেষ্ঠ

আরোও জানুনঃ
পিঠ ব্যথাঃ উপশম ও ঘরোয়া চিকিৎসাএখানে চাপ দিন
কাঁধ এবং বাহুতে ব্যথার কারণ ও পরামর্শএখানে চাপ দিন
বুকে ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসাএখানে চাপ দিন

শ্রীল প্রভুপাদ বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে এবং প্রবচন সভায় ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, দীক্ষাগুরুর জন্য শিষ্য যে কতদূর অবধি সেবা নিবেদন করতে পারে, তার সীমা কেউ নির্ধারণ করতে পারে না তবুও অনেকের কাছ থেকে উচু রের গুরুদেবএই ধরণের বিভ্রান্তিকর মন্তব্য শোনা যায়, আবার কেউ কেউ গুরুপূজা সম্পর্কে বিরূপ কটাক্ষ করে থাকে।

শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত স্বরস্বতী ঠাকুর বলেছেন, “যারা ভগবানকে চান তারা প্রথমেই সদ্গুরুর চরণাশ্রয় করবেন- এটাই শাস্ত্রেপদেশ। সর্বাপেক্ষা পূজ্য হচ্ছেন ভগবান আর সেব্য ভগবানের পূজার বা প্রেমের পাত্র হচ্ছেন প্রেম ভগবদ্ভক্ত, সেই ভগবদ্ভক্তের অগ্রণী হচ্ছেন আমার শ্রীগুরু পাদপদ। ভগবান যার সেবা করে থাকেন, ভগবান যাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসেন, সেই গুরুদেবের সেবা করা বা পূজা করা বা তাকে প্রাণ দিয়ে ভালবাসা আমার অবশ্য কর্তব্য | শ্রীল প্রভুপাদের তত্ত্বাবধানে শ্রীধাম মায়াপুরে কৃষ্ণভাবনাময় পরিবেশে প্রতিপালিত হয়ে আমরা বিভিন্ন প্রকার সমালোচনা শুনতাম-যখন শ্রীল প্রভুপাদের প্রতিদ্বন্দ্বীরা তার দৈনন্দিন গুরু পূজা অনুষ্ঠানের নিন্দামন্দ করত। তারা বলত, ব্যাসপূজাই যথেষ্ট কিংবা গুরুর কাছে গতানুগতিকভাবে প্রণতি জানালেই হল কিন্তু শ্রীল প্রভুপাদ তাদের সব নিন্দামন্দ দূরে ঠেলে দিয়ে প্রতিদিন গুরুপূজার বর্তমান ব্যবস্থা করে গেছেন।

শ্রীল প্রভুপাদের অনুগামী হয়ে আমরা কি শ্রীল প্রভুপাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরামর্শমতো চলব, আর গুরুর প্রতি শিষ্যের শ্রদ্ধা এবং পূজা নিবেদনের যে পদ্ধতি শ্রীল প্রভুপাদ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন তা ভাসিয়ে দেব এবং ব্যর্থ নোরথ প্রচারকদের অনুকরণ করব? না কি, স্বীয় মহিমায় ভাস্বর গুরুদেব কৃষ্ণকৃপাশ্রীমূর্তি শ্রীল ভক্তিবেদান্ত স্বামী প্রভুপাদের নির্দেশ-উপদেশ আর দৃষ্টান্ত মেনে চলবে? অবশ্যই গুরুদেবের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে সযত্নে, যাতে অনুকরণের অপরাধ এড়িয়ে চলা যায়। শাস্ত্রে আমাদের বলা হয়েছে অনুসরণ করতে -অনুকরণ করতে নয়।

দীক্ষাগুরুর প্রতি দায়দায়িত্ব এবং কর্তব্য-কর্ম সম্পাদনের ক্ষেত্রে ভব্যতা মেনে চলার সময় যদিও আধিক্য এবং ত্রুটি বিচ্যুতি ঘটে থাকে, তা হলেও গুরুদেবকে দৈনন্দিনভাবে পূজা নিবেদনের জন্য শিষ্য সমূহের উদ্যোগ  উদ্দীপনা অবাঞ্ছিত কার্যকলাপ বলে বিবেচনা করা উচিত নয়।

শ্রীল প্রভুপাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে চলা এবং কৃষ্ণভাবনাময় উৎসবাদির মাধ্যমে দীক্ষা গুরুর প্রতি শিষ্যসমূহের স্বত:স্ফুর্ত প্রেম-প্রীতি ভক্তিভালবাসার অভিব্যক্তি প্রকাশের কিছু কিছু আনুষ্ঠানিক সুযো সুবিধা দেওয়ার সুস্পষ্ট মূল্য হচ্ছে এই যে, এগুলো শুষ্ক মূল্যহীন নিতান্ত রীতিমাত্র নয় বরং এই প্রক্রিয়াগুলো মাধ্যমেই ভক্তের প্রেমভক্তি পরমেশ্বরের কাছে নিবেদিত হয়ে থাকে। যদি কোনও উৎসব নিতান্তই শুষ্ক রীতিনীতি মেনে অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে সেখানে শুদ্ধ ভক্তিসহকারে উৎসবাদি অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে প্রেমভক্তি প্রকাশের অভিব্যক্তি ঘটে থাকে।

আরোও জানুনঃ
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসাঃ এখানে ক্লিক করুন 
চুল পড়ার ১৫টি কারণঃ এখানে ক্লিক করুন 
শ্বাস নেওয়ার সময় বুক ব্যথার কারণঃ এখানে ক্লিক করুন 

শিষ্যসমূহ যখন দীক্ষাগুরুকে পূজা করে, তখন সেটা শুষ্ক গতানুগতিক রীতি নয়। তাদের ভক্তিভাব থাকলে, এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই তারা তাদের ভক্তিভাব অভিব্যক্ত করার সুযো পেতে পারে। এই গুরুপূজার ব্যাপারে কিছু মানুষের মনে সংশয় আছে। তারা মনে করে যে, এই রকমভাবে পূজা নেওয়াটা গুরুর পক্ষে ভাল নয়। হাঁ, একজন বৈষ্ণবের পক্ষে তার নিজের জন্য পূজা গ্রহণ করাটা ভাল নয়। আমরা শাস্ত্র পাঠে জেনেছি, গুরুর পারমার্থিক সেবা কাজ করার উদ্দেশ্য থাকে। গুরু যদি পুর্বতন আচার্যের পক্ষ থেকে কিছু গ্রহণ করে থকেন তবে সেখানে সংশয়ের কোন কারণ নেই বরং এটাই যথার্থ নীতি তবে আমি অবশ্য শ্রীল প্রভুপাদ, সকল পূর্বতন আচার্য শ্রীনিত্যান্দ প্রভু শ্রীমতী রাধারা কাছে শিষ্যদের দেওয়া ভক্তির অর্ঘ্য গ্রহণ করে তাদের প্রতি কৃপবারি বর্ষণ করার জন্য প্রার্থনা জানাতে পারি।

গুরুদেবকে অবশ্য দিনের মধ্যে চব্বিশ ঘন্টাই আমাদের শরণ করা উচিত। আর তার নির্দেশ মেনে চলাই হচ্ছে তার প্রতি মহত্তর সেবা নিবেদনের প্রস্থা। শ্রীল প্রভুপাদ জোর দিয়ে বলেছিলেন যে, কৃষ্ণ ভাবনা অনুশীলনের প্রগতির পক্ষে গুরুপূজা আনুকূল্যসূচক উৎসববানুষ্ঠান এবং বাস্তবিকই শিষ্য সমূহের পক্ষে এই অনুষ্ঠানে অংশগহণ করা খুবই দরকার। অতএব গুরুদেবের সমক্ষে দৈনন্দিন ভিত্তিতে শিষ্যসমূহের ভক্তিভাব আত্মনিবেদনের বিনয়ী মানসিকতা নিয়ে, প্রকাশ্যভাবে অভিব্যক্তি প্রকাশের একটা সুযো থাকলে সেটা তাদের উপর শুভ প্রতিক্রিয়াই সৃষ্টি করে থাকে।

আরোও জানুনঃ
একাদশীর সকল প্রশ্নোত্তর- ক্লিক করুন 
গুরুর দায়িত্ব ও কর্তব্য- ক্লিক করুন 
পাপ মুক্তির উপায়- ক্লিক করুন 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন