জনস্য কৃষ্ণদ্বিমুখস্য দৈবা
দধর্মশীলস্য সুদুঃখিতস্য।
অনুগ্রহায়েহ চরস্তি নুনং
ভূতানি ভব্যানি জনার্দনস্য।।
পূর্বকৃত কর্মের ফলে যারা কৃষ্ণ বহির্মুখ হয়ে অধর্মশীল হয়, তার ফলে তারা বিশেষরূপে দুঃখগ্রস্ত হয়। তাদের অনুগ্রহ করার জন্যই এই সংসার জনার্দনের ভক্তগণ বিচরণ করে থাকেন। (ভাগবত ৩/৫/৩)
মহদ্বিচলনং নৃণাং গৃহিণাং দীনচেতসাম্।
নি:শ্রেয়সায় ভগবন্নান্যথা কল্পতে কৃচিৎ।।
ভগবৎ বহির্মুখ দীনচেতা গৃহীগণের মঙ্গল সাধনের জন্যই মহৎ ব্যক্তিগণ তাদের গৃহে গমন করে থাকেন, অন্য কোন কারণে নয়। (ভাগবত ১০/8/8/)
আরোও জানুনঃ
দীক্ষা কী: ক্লিক করুন
পাপ পরিত্রাণ: ক্লিক করুন
ধর্মের সৃষ্টি কোথায়? পৃথিবীতে এত ধর্ম কেন? ক্লিক করুন
শ্রীচৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীও উল্লখ করেছেন-
মহান্ত-স্বভাব এই তারিতে পামর।
নিজকার্য নাহি তবু যান তার ঘর।।
মহান্তের স্বভাবই হচ্ছে পতিতদের উদ্ধার করা। তাই তাঁদের নিজেদের কোন প্রয়োজন না থাকলেও তারা মানুষদের বাড়ীতে যান। (চৈঃ চঃ মঃ ৮/৩৯)
শ্রীমদ্ভাগবতে আরও পাই-
অনুব্রতানাং শিষ্যাণাং পুত্রাণাং চ দ্বিজোত্তম।
অনাপৃষ্টমপি ব্রুয়ুর্গুরবো দীনবৎসলাঃ।।
দীনবৎসল গুরুগণ জিজ্ঞাসিত না হয়েও অনুগামী শিষ্য বা পুত্রগণকে কর্তব্য বিষয়ে উপদেশ দান করে থাকেন। (ভাগবত ৩/৭/৩৬)
শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন যে, সাধারণত শিষ্যকে উদ্ধার করা পারমার্থিক দীক্ষাগুরুরই দায়িত্ব। শিষ্য যদি কৃষ্ণের কাছে ফিরে যেতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তখন গুরুদেবেরই দায়িত্ব আবার জন্মগ্রহণ করে শিষ্যকে উদ্ধার করা। অবশ্য সেটা কৃষ্ণের কৃপার উপরেই নির্ভর করে। যদি কৃষ্ণপারমার্থিক গুরুকেই দায়ী বলে মনে করতে চান, তা হলে সেটা গুরুরই দায়িত্ব। তখন গুরুদেবকে আবার জন্মগ্রহণ করতে হবে ঐ শিষ্যটিকে উদ্ধারের জন্য। তা না হলে কৃষ্ণ যদি চান গুরুর আর্শিবাদে বা অন্য কোনও ভাবে শিষ্যকে উদ্ধার করবেন, সেটা কৃষ্ণেরই ইচ্ছা কিন্তু প্রত্যেকটি শিষ্যকে ভগবদ্ধামে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাদের জন্ম-মৃত্যুর সংসার থেকে উদ্ধার করার দায়িত্ব দীক্ষা গুরুই। কেননা গুরু শব্দটি বিশেষ মহতু পূর্ণ।
আরোও জানুনঃ
মানসিক চাপ, অশান্তি দূর করার উপায়:এখানে ক্লিক করুন
ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার:এখানে ক্লিক করুন
মস্তিষ্ক ঠিক রাখার উপায়:এখানে ক্লিক করুন
গুরু শব্দটির অর্থ ভারী বা শ্রেষ্ঠ । ঋষভদেব তাঁর পুত্রদের উপদেশ দিয়েছেন, গুরুর্ণ সস্যাৎ ........ ন মোচয়েদ যঃ সমুপেত মৃত্যু-শিষ্যকে জন্ম মৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত করতে না পারলে গুরু পদ গ্রহণ করা উচিত নয়।” (ভা ৫/৫/১৮)
যেমন পিতা তার সন্তানকে কোন জায়গায় বদ্ধ অবস্থায় ফেলে রেখে চলে যেতে পারে না, তেমনি স্বভাবতই কোন পারমার্থিক পিতাও তার স্নেহভাজন পারমার্থিক সন্তানকে বিপজ্জনক জায়গায় বিচরণ করতে দিতে পারেন না। অবশ্য গুরুদেবের ভালবাসার কথা উপলব্ধি করে শিষ্য পারমার্থিক জীবনে স্বেচ্ছাকৃতভাবে অবহেলা করতে পারে না, যাতে তার অসতর্কতার ফলে তার গুরুদেব এই জড়জগতে ফিরে আসার দুর্বিপাকে পড়েন। তাই শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন যে, কোনও শিষ্য যখনই পারমার্থিক জীবন ধারা থেকে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়ে, তখনই সে প্রকৃতপক্ষে ‘গুরুদ্রোহী' অর্থাৎ গুরুঘাতক হয়ে ওঠে, কারণ পারমার্থিক দীক্ষাগুরুকে ভবিষ্যতে আবার একবার জন্মগ্রহণ করাতে বাধ্য করার ফলে, সে তাকে ( তার গুরুকে) জন্ম-মৃত্যুর কবলে পড়তেই বাধ্য করে, যাতে তিনি তার শিষ্যকে উদ্ধার করতে আবার আসেন। সুতরাং শিষ্যদের যাতে অধঃপতন না ঘটে, তার জন্য খুব সতর্ক থাকতে হয়।
শ্রীল নরোত্তম দাস ঠাকুর বলেছেন-শ্রীকৃষ্ণের অঘট-নঘট-নপটীয়সী যোগমায়া-শক্তি গুরুশিষ্যের নিত্য সম্বন্ধকে যে কোন ভাবেই হোক অক্ষুন্ন রাখবেন । গুরু যদি আগে ভগবদ্ধামে ফিরে যান, তিনি নিত্য চিনায় ধাম হতে সৎ শিষ্যের হৃদয়ে শক্তি সঞ্চার করে শিষ্যকে নিত্য চিন্ময় ধামে আকর্ষণ করবেন।
শিষ্য যে দেহেই থাকুক বা যেখানেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন, নিত্যধামে প্রবিষ্ট গুরুর পক্ষে শিষ্যের প্রতি লক্ষ্য করা বা তাকে আকর্ষণ করা অসম্ভব হবে না । শিষ্য যেখানেই জন্মগ্রহণ করুক না কেন শ্রীগুরুদেব তার নিকটবর্তী কোন স্থানে কোন যোগ্য ভক্তের উপর শক্তি সঞ্চার করে কখনও বা স্বয়ং অবর্তীর্ণ হয়ে শিষ্যকে পুনরায় দীক্ষা-শিক্ষা প্রদান করে তার নিত্যধামে ফিরিয়ে নিয়ে যান ।
গুরু সাক্ষাৎ ভগবৎ স্বরূপ । কাজেই শ্রীকৃষ্ণই গুরুরূপে অবতীর্ণ হয়ে শিষ্যকে তার নিত্যধামে ফিরিয়ে নেন। সেই সম্পর্কে শ্ৰীবৃহদ্ভাগবতামৃতে উল্লেখ করা হয়েছে-
তত্তে ময্য কৃপাং বীক্ষ্য ব্যগ্রোহনুগ্রহকাতরঃ।
অনাদিং সেতুমুল্ল্যংঘ্য
ত্বজ্জম্মেদমকারয়ম্।।
শ্রীমদেগাবর্ধনে তস্মিন্ নিজ প্রিয়তমাস্পদে।
স্বয়মেবাভবং তাত জয়ন্তাখ্যঃ স তে গুরু।।
শ্রীভগবান বললেন- হে বৎস !
আমার প্রতি তোমার এরূপ উপেক্ষা দেখে ব্যাকুল হলাম এবং তোমার অনুগ্রহ কাতর হয়ে অনাদি স্বকৃত যে ধর্ম মর্যাদা তা লঙ্ঘন করে নিজ প্রিয়াস্পদ সেই গোবর্ধনে তোমায় জন্মগ্রহণ করালাম এবং আমি স্বয়ং জয়ন্ত নামে তোমার গুরুরূপে অবতীর্ণ হলাম। (শ্রীবৃহদ্ভাগবতামৃত ২/৪/৮৫-৮৬)
আরোও জানুনঃ
চুলপড়ার
১৫ টিকারণঃ এখানে ক্লিক করুন
হাঁপানি
থেকে মুক্তির উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন
উচ্চরক্ত
চাপ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসাঃ এখানে ক্লিক করুন
শ্রীল প্রভুপাদ বলতেন যে, কোন শিষ্য যদি একবার, দুবার, কিংবা বারে বারেও অধঃপতিত হয় তবু তাকে ক্ষমা করা যেতে পারে কিন্তু যদি তার কুকর্মাদি সংশোধন করার জন্য সেচেষ্টা, চরিত্র থেকে নিবৃত্ত না হয়ে থাকে এবং নিজেকে সংশোধন করার চেষ্টা না করে অধঃপতনেই নেশাগ্রস্থ হয়ে পড়ে তবে একটা সময়ে গুরু সেই শিষ্যকে উদ্ধারের প্রচেষ্টা থেকেও ক্ষান্ত হয়ে যেতে পারেন, আর সেটা তো দারুণ দুর্ভাগ্যের ব্যাপার।
গুরুদেবকে আচার্য বলেও সম্বোধন করা হয়। আচার্য কথাটির অর্থ হচ্ছে পারমার্থিক তত্ত্বজ্ঞানের অপ্রাকৃত শিক্ষক। মুনসংহিতায় (২/১৪০) আচার্যের কর্তব্য সম্বন্ধে বিশ্লেষণ করে বলা হয়েছে যে, তিনি শিষ্যের দায়িত্বভার গ্রহণ করে সূক্ষাতিসূক্ষ্ম বিচার পূর্বক শিষ্যকে বৈদিক জ্ঞান প্রদান করেন। আচার্য এইভাবে শিষ্যকে দ্বিতীয় জন্ম দান করেন। (চৈঃ চঃ আঃ ১/৪৬ তাৎপর্য)
শ্রীগুরুদেব দীক্ষা প্রদান করে শিষ্যকে শ্রীকৃষ্ণের সহিত সম্বন্ধ স্থাপন করান। এজন্য সাধন অবস্থায় শিষ্যকে সিদ্ধ স্বরূপ তিনি অবগত করান। আর গুরুদেব তাঁর শিষ্যকে সিদ্ধাবস্থায়ও শ্রীশ্রীরাধামাধবের প্রেমময়ী সেবায় নিযুক্ত করে থাকেন। অতএব কি সাধনাবস্থা কি সিদ্ধাবস্থা উভয় অবস্থায় শ্রীগুরুই প্রভু বা সেব্য। ভগবদগীতায় বলা হয়েছে যে, কেবল জ্ঞান চুক্ষুর মাধ্যমেই কেউ ভগবানকে দর্শন করতে পারেন। গুরুদেবই কেবল সেই জ্ঞানের আলোক জাগরিত করতে পারেন। আজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকয়া “শ্রীগুরুদেবই কেবল সেই গভীরমত অন্ধকার থেকে বদ্ধজীবকে উদ্ধার করতে পারেন।" তাই শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে-
তস্য ত্বং তমসোহন্ধস্য দুস্পারস্যাদ্য পারগম্ ।
সচ্চক্ষুর্জননামন্তে লব্ধং মে ত্বদনুগ্রহাৎ।।
হে ভগবান। আপনিই হচ্ছেন অজ্ঞানের অন্ধকার থেকে মুক্ত হওয়ার একমাত্র উপায় স্বরূপ, কেননা আপনি আমার দিব্য চক্ষুস্বরূপ যা আপনার কৃপার প্রভাবেই কেবল বহু জন্ম জন্মান্তরের পর আমি লাভ করেছি। (ভাগবত ৩/২৫/৮)
শ্রীল প্রভুপাদ তাৎপর্যে বিশ্লেষণ করেছেন, যে শিষ্য অথবা বদ্ধজীব অজ্ঞানের গভীরতম অন্ধকারে পতিত হয়েছে এবং তাই ইন্দ্রিয় তৃপ্তির বন্ধনে সে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। সেই বন্ধন থেকে মুক্ত হওয়া অত্যন্ত কঠিন কিন্তু কেউ যদি সৌভাগ্যক্রমে কপিল মুনি অথবা তার প্রতিনিধির মতো সদ্গুরুর সঙ্গ লাভ করে, তাহলে তার কৃপায় অজ্ঞানের অন্ধকার থেকে সে উদ্ধার লাভ করতে পারে। তাই গুরুদেবের পূজা করা হয়, যিনি তাঁর শিষ্যকে জ্ঞানরূপ: আলোকবর্তিকার দ্বারা অজ্ঞানের অন্ধকার থেকে উদ্ধার করেন। “পারগম ” শব্দটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, যার অর্থ হচ্ছে যিনি তার শিষ্যকে অপর পারে নিয়ে যেতে পারেন। এই বদ্ধ জীবন এবং অপর পারে মুক্ত জীবন। গুরুদেব জ্ঞানের আলোকের দ্বারা তার শিষ্যের চক্ষু উন্মীলন করে তাকে অপর পারে নিয়ে যান ।
আমরা কেবল আমাদের অজ্ঞানবশত দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করছি। সদগুরুর উপদেশের দ্বারা সেই অজ্ঞান অন্ধকার দূর হয় এবং তার ফলে আশ্রিত শিষ্য অপর পারে গিয়ে মুক্তি লাভ করতে সক্ষম হয়। গুরুদেব একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ পর্যন্ত শিষ্যকে সাহায্যে করতে পারেন । প্রভুপাদ বলেছেন যে, “গুরুদেব হচ্ছেন উড়ন্ত মৌসুমি পাখিদের দলপতি, যারা আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে উড়ে যায়। এই সব দলে থাকে একজন দলপতি এবং সে পুরো দলটাকে নেতৃত্ব দেয় আর বাকিরা তাকে অনুসরণ করে।”
আরোও জানুনঃ
পা ও গোড়ালি ফুলার কারণ
এবং প্রতিকারঃ এখানে ক্লিক
করুন
হাঁপানি থেকে
মুক্তির উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন
উচ্চ রক্ত
চাপের প্রকারভেদঃ এখানে ক্লিক করুন
প্রভুপাদ বিষয়টি আরো পরিস্কারভাবে ব্যাখ্যা করে বলেছেন যে, প্রত্যেকটি পাখিই উড়তে পারে। দলপতি পাখিটি অন্যদেরকে যে তার কাঁধে চড়িয়ে নিয়ে যায় তা নয়। সকলেই নিজ নিজ ডানায় ভর দিয়ে উড়ে কেবল দলপতিকে তারা অনুসরণ করে। গুরুদেব শিষ্যর জপসংখ্যা তো আর করে দিতে পারেন না। শিষ্যের সেবা-কাজটাও তিনি করে দেন না। এই ব্যাপারে শিষ্য গুরুদেবের কাছ থেকে কৃপা পেতে পারে। আর এই বিষয়ে কোন কিছুর জানার কথা থাকলে গুরুদেবকে জিজ্ঞাসা করতে পারে। উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ- গুরুদেব শুধু শিষ্যকে কৃপা করার জন্য শ্রীকৃষ্ণের কাছে প্রার্থনা করতে পারেন, তাকে উৎসাহ দিতে পারেন, উপদেশ দিতে পারেন ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন