লন্ধা সুদুর্লভমিদং বহুসম্ভবান্তে
মানুষ্যমর্থদমনিত্যমপীহধীরঃ।
তৃর্ণং যতেত ন পতেদনুমৃত্যু যাবন
ন্নিঃশ্রেয়সায় বিষয়ঃ খলু সর্বতঃ স্যাৎ।।
বহু বহু জন্মের পর এই মনুষ্য শরীর লাভ হয় এবং যদিও তা অনিত্য তবুও তা আমাদের সর্বশ্রেষ্ঠ কল্যাণ প্রদান করে। তাই যিনি বুদ্ধিমান এবং সংযত, তিনি অচিরেই এই পরম সত্যের সন্ধানে সচেষ্ট হন। কেননা এই জীবন অনিত্য এবং যে কোন মুহূর্তে মৃত্যু আসতে পারে। মানুষের কর্তব্য হচ্ছে সব রকমের ইন্দ্রিয়তৃপ্তি পরিহার করে, ভগবানের সেবায় আত্ননিয়োজিত করা।
এই কলিযুগে মানুষ স্বাভাবিক ভাবেই ভগবানের প্রতি বিরূপ এবং বিষয়ের প্রতি আকৃষ্ট। আর যতই তারা বিষয়ের প্রতি আসক্ত হচ্ছে, তারা এই জড়া প্রকৃতির কঠিন বন্ধনে ততই আবদ্ধ হয়ে দুঃখ ভোগ করছে। আমরা সকলেই সুখ চাই, আনন্দ চাই, অথচ আমরা সকলেই দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করছি।
আরোও জানুনঃ
দীক্ষা কী : ভক্ত ও ভক্তিযোগ- ক্লিক করুন
মৃত্যু সৎকার- ক্লিক করুন
বিভিন্ন দেবদেবীর পুজার - ক্লিক করুন
পুজা অর্চনা নিয়ম- ক্লিক করুন
আসলে আমরা কেউই স্বতন্ত্র নই কিন্তু আমরা মনে করছি আমরা স্বতন্ত্র ও স্বাধীন। ফলে ভগবানকে বিস্মৃত হয়ে আমরা আমাদের ইচ্ছামত কার্য করার চেষ্টা করছি কিন্তু সেটা সম্ভব নয়। কেননা আমরা সকলেই পরমেশ্বর ভগবানের জড়া প্রকৃতির আইনেই অধীন কিন্তু জড় সুখের মোহে, ভগবানকে ভুলে থেকে, প্রতিনিয়ত আমরা সেই আইন লঙ্ঘন করছি। আর সেই আইন লঙ্ঘন করার ফলে আমাদের শাস্তি পেতে হচ্ছে; প্রকৃতির হাতে নির্যাতিত হয়ে জন্ম, মৃত্যু, জরা ও ব্যাধিরূপ দুঃখ-দুর্দশা ভোগ করতে হচ্ছে। এই দুঃখ-দুর্দশার হাত থেকে রেহাই পাবার জন্য আমাদের পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শরণাগত হতে হবে।
আমাদের জানার চেষ্টা করা উচিত, আমরা কে? আমরা কোথা থেকে এলাম? কেন আমরা এই জড় জগতে জন্ম, মৃত্যু জরা ও ব্যাধিরূপ যন্ত্রণা ভোগ করছি? এই মানব জীবনের উদ্দেশ্য কি? বৈদিক শাস্ত্রে বর্ণনা করা হয়েছে, আমাদের এই দুর্লভ মানব জন্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানকে অবগত হয়ে তার ধামে ফিরে যাওয়া। আমি এই দেহটি নই। আমি হচ্ছি পরমেশ্বর ভগবানের অংশ চিন্ময় আত্মা এবং চিন্ময় ধামই হচ্ছে আমার প্রকৃত আলয়। আমরা আমাদের সীমিত ত্রুটিপূর্ণ পরীক্ষা বা গবেষণার দ্বারা সেই অপ্রাকৃত চিন্ময় ধম সম্বন্ধে কিছুই জানতে পারি না। তাই শ্ৰী ব্যাসদেব বা তার প্রতিনিধি শ্রীগুরুদেবের পাদপদ্মে নিজেদের সর্বতোভাবে উৎসর্গ করতে হবে। সে সম্বন্ধে ভগবদগীতায় (৪/৩৪) বলা হয়েছে-
তদ বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া।
উপদেক্ষন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ ।।
শ্রদ্ধাবনত চিত্তে প্রণতি পূর্বক তত্ত্বাদ্রষ্টা সদ্গুরুর শরণাগত হও, তার কাছে পরম তত্ত্ব সম্বন্ধে ঐকান্তিকভাবে প্রশ্ন কর এবং তার সেবা কর। তত্তদ্রষ্টা গুরুদেব তোমাকে দিব্যজ্ঞান দান করতে পারেন, কেননা তিনি সেই পরম সত্যকে দর্শন করেছেন।
আরোও জানুনঃ
গর্ভধারন বাধাতে জরায়ুর রোগ: এখানে ক্লিক করুন
কাশি দূর করার উপায়: এখানে ক্লিক করুন
ঘুমনা আসার কারণ ও প্রতিকারঃ এখানে ক্লিক করুন
শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন যে, দিব্যজ্ঞান লাভ করতে হলে আমাদের প্রকৃত আচার্যের কাছে আত্মসমপণ করতে হবে, ঐকান্তিক ভাবে ভগবৎ-তত্ত সম্বন্ধে। প্রশ্ন করতে হবে এবং তার সেবা করতে হবে। আচার্যের নির্দেশনায় পরমেশ্বর ভগবানের সেবা করাই হচ্ছে দিব্যজ্ঞান লাভের একমাত্র পন্থা।
আমরা জড়জগতের মাঝে পতিত হয়েছি, আর কেবলই শ্রীগুরু ও গৌরাঙ্গের কৃপায় এই সুযোগটুকুই পেয়েছি; যাতে বদ্ধ জড় জীবন থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য সচেষ্ট হতে পারি । অতএব সদাসর্বদা শ্রীগুরু এবং গৌরাঙ্গের কৃপা লাভের চেষ্টা করেই শুধুমাত্র আমরা এই বদ্ধ জড় জীবন ধারা থেকে বেরিয়ে যাবার সুযোগ পেতে পারি । অতএব অব্যর্থভাবে আমাদের শ্রীগুরু এবং গৌরাঙ্গের চরণ-কমলে সদা-সর্বদা নিজেদের সমর্পিত রাখতে হবে। এই সম্পর্কে শ্রীল রূপ গোস্বামী তাঁর ভক্তিরসামৃত সিন্ধু গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন-
গুরুপাদাশ্রয়স্তস্মাৎ কৃষ্ণদীক্ষাদি শিক্ষণম্।
বিশ্রম্ভেন গুরোঃ সেবা সাধুবর্জ্যাবর্তনম্।।
সাধন ভক্তির চৌষট্টিটি অঙ্গের মধ্যে সর্ব প্রথমটি হচ্ছে ‘গুরুপাদাশ্রয়’ অথ্যাৎ শ্রীগুরুদেবের চরণে আশ্রয় গ্রহণ করা; তারপরেই দীক্ষা এবং গুরুসেবা। (ভক্তিরসামৃত সিন্ধু ১/২/৭৪)
শ্রীল কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামীও শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত গ্রন্থে বলেছেন –
গুরুপাদাশ্রয়, দীক্ষা, গুরুর সেবন ।
সদ্ধর্মশিক্ষা- পৃচ্ছা, সাধুমাৰ্গানুগমন।।
ভগবদ্ভক্তি পথে এই আচরণগুলি অবশ্য কর্তব্য-সদ্গুরুর আশ্রয় গ্রহণ করা; তার কাছে থেকে দীক্ষা গ্রহণ করা, তার সেবা করা, তার কাছে যথার্থ শিক্ষালাভ করা এবং ভগবদ্ভক্তি সম্বন্ধে জানবার জন্য প্রশ্ন করা, পূর্বতন আচার্যদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা এবং সদগুরুর নির্দেশ পালন করা। (চৈতন্যচরিতামৃত মধ্য ২২/১১৫)
পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে আমাদের সম্পর্ক হচ্ছে নিত্য এবং ব্যাক্তিগত। “জীবের ‘স্বরূপ হয়-কৃষ্ণের নিত্যদাস" ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কখনই নিঃসঙ্গ থাকেন না, তিনি অগণিত ভক্ত পরিবৃত হয়ে থাকেন।
কৃষ্ণভাবনাময় হওয়ার মানে এই নয় যে, কেবলমাত্র শ্রীকৃষ্ণকেই প্রেমভক্তি নিবেদন করতে হবে। আসলে কৃষ্ণভাবনা হচ্ছে শ্রীকৃষ্ণের ভক্তকে ভালবাসা। যদি আমরা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রিয় ভক্তকে বা শ্রীগুরুদেবকে ভালবাসতে না পারি, তাহলে কেমন করে আমরা শ্রীকৃষ্ণের সাথে ব্যক্তিগত ভাবে আমাদের সম্পর্ক গড়ে তুলতে পারব।
সমস্ত শাস্ত্রেই প্রতিপন্ন করা হয়েছে যে, গুরু-শিষ্য পরম্পরা ক্রমেই ভগবদ্ভক্তির ধারা সঞ্চালিত হয়ে থাকে। প্রত্যেককেই দীক্ষাগুরুর আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়, আর তারই নির্দেশ অনুসারে কৃষ্ণসেবায় আত্মনিয়োগ করতে হয়।
ভগবদ্ভজনে বা ভগবৎ-সেবায় গুরুকৃপাই মূল প্রযয়োজন। ভগবানের কৃপার মূর্তবিগ্রহ শ্রীগুরুদেব শিষ্যের জীবন ও প্রাণ স্বরূপ। গুরুই জীবের যথাসর্বস্ব এবং গুরুই জীবের নিঃস্বার্থ বন্ধু। তাই শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর তার টীকায় বলেছেন, শ্রীমদগুরুপাদাম্ভোজ কৃপা-মাত্রৈক-সাহসঃ - “শ্রীগুরুপাদপদ্মই জীবের একমাত্র সাহস, বল ও ভরসা।” শ্রীগুরুই জীবের একমাত্র রক্ষক। কাজেই সদ্গুরু পাওয়া মাত্রই তাঁর কাছে দীক্ষা গ্রহণ করা উচিত। সেইসম্বন্ধে তত্ত্বসাগরে’ বর্ণনা করা হয়েছে-
দুর্লভে সদ্গুরুঞ্চ সকৃৎ-সঙ্গ উপস্থিতে।
তদনুজ্ঞা যদা লব্ধা স দীক্ষাবসরো মহান।।
গ্রামে বা যদি বারণ্যে ক্ষেত্রে বা দিবসে নিশি।
আগচ্ছতি গুরুবৈবাদ যদা দীক্ষা তদাজ্ঞয়া।।
যদৈবেচ্ছা তদা দীক্ষা গুরোরাজ্ঞানুরূপতঃ।
ন তীর্থং ন ব্রতং হোমো ন, স্নানং ন জপক্রিয়া।
দীক্ষায়াঃ করণং কিন্তু স্বেচ্ছাপ্রান্তে তু সদ্গুরৌ ।।
যদি দৈবাৎ সদ্গুরু পাওয়া যায়, তা মন্দিরে হোক বা অরণ্যে হোক, দিনের বেলায় হোক অথবা রাতের বেলায় হোক, সদগুরু যদি শাস্ত্র সম্মত হন, তাহলে স্থান কালের কথা বিবেচনা না করে তৎক্ষণাৎ তার কাছ থেকে দীক্ষা গ্রহণের দ্বারা তার চরণাশ্রয় লাভ করে তার সেবা করা উচিত।
আরোও জানুনঃ
হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসাঃ এখানে ক্লিক করুন
শিশু ও নবজাতকদের মধ্যে 10 রোগঃ এখানে ক্লিক করুন
‘হরিভক্তি বিলাস' গ্রন্থে শ্রীল সনাতন গোস্বামী উল্লেখ করেছেন -
গুরুশুশ্রুষণং নাম সর্বধর্মোহত্তমম্।
তস্মাদ ধৰ্ম্মাৎ পরো ধর্মঃ পবিত্ৰং নৈব বিদ্যতে।।
কাম-ক্রোধাদিকং যদ যদাত্মনোহনিষ্ট-কারণম্।
এতৎ সর্বং গুরৌ ভক্ত্যা পুরুষে হ্যঞ্জসা জয়েৎ।।
ভক্তশ্রেষ্ঠ শ্রীগুরুদেবের সেই সমস্ত উত্তম ধর্মের শ্রেষ্ঠ ধর্ম। তা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ ধর্ম আর কিছু নেই। কেবল গুরুসেবার দ্বারাই কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ, মাৎসর্য, ভয়, চিন্তা, দুঃখ, বিষয়াসক্তি প্রভৃতি সবই দূর হয় এবং ভগবানের কৃপা অনায়াসে লাভ করা যায়।
আধুনিক জগতে সমস্ত জড় জাগতিক আবিস্কারের জিনিসগুলিকে আমরা সুখকর বলে মনে করি কিন্তু তবু মানুষের সুখ হচ্ছে না, শান্তি হচ্ছে না, উপরন্তু তাদের দুঃখ দুর্দশা বেড়েই চলেছে। নানাবিধ যন্ত্র উৎপাদিত হলেও মানুষকে জন্ম মৃত্যুর চক্র থেকে মুক্ত হওয়ার উপায় সম্বন্ধে জানতে হবে। আমাদের হাসপাতাল রয়েছে, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থা রয়েছে-
এখন আমাদের রোগ থাকবে না কিন্তু তব আমাদের রোগ কমেনি। হাজার হাজার টাকা খরচ করেও ডাক্তার আমাদের মত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে পারে না। এমনকি ডাক্তারকেও একদিন মৃত্যু বরণ করতে হচ্ছে। আমরা মৃত্যুকে চাই না তবু মৃত্যু আসে।
আর তখন গুরু গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা আমাদের যা কিছু আছে- আত্মীয় স্বজন, সংসার, ঘর-বাড়ি, দোকান, টাকা, পয়সা সবকিছু ফেলে রেখে এমনকি এই দেহটি পর্যন্ত ফেলে রেখে চলে যেতে হয়। মৃত্যুর পর আবার একটি দেহে আমাদের পুর্নজন্ম হয় এবং জন্যও অত্যন্ত কষ্টকর। জন্ম গ্রহণ করতে না চাইলেও আমরা জন্ম নিতে বাধ্য হই। বার বার এই জন্ম মৃত্যুর চক্রে আবর্তিত হওয়ার যে চরম বেদনা, তা থেকে শ্রীগুরুদেবই আমাদের রক্ষা করতে পারেন।
ব্রহ্মান্ড ভ্রমিতে কোন ভাগ্যবান্ জীব।
গুরু কৃষ্ণ প্রসাদে পায় ভক্তিলতা বীজ।।
জীব তার কর্ম অনুসারে ব্রহ্মান্ড ভ্রমণ করতে থাকে। কখনও সে উচ্চতর লোকে উন্নীত হয় এবং কখনও বা নিম্নতর লোকে অধঃপতিত হয়। এইভাবে ভ্রমণরত অসংখ্য জীবের মধ্যে কদাচিৎ কোন একটি জীব তার অসীম সৌভাগ্যের ফলে শ্রীকৃষ্ণের কৃপায় সদ্গুরুর সান্নিধ্য লাভ করে। এইভাবে শুরু ও কৃষ্ণ উভয়ের কৃপার প্রভাবেই জীব ভক্তিলতার বীজ প্রাপ্ত হয়। (চৈঃ চঃ মধ্য ১৯/১৫১)
তদ্ধিজ্ঞানার্থং স গুরুমেবাভিগচ্ছেৎ।
সমিৎপাণিঃ শ্রোলিয়ং ব্রহ্মনিষ্ঠম্।।
পরমার্থবিষয়ক বিজ্ঞান শিক্ষালাভ করতে হলে আমাদের গুরুপরম্পরা ধারায় অধিষ্ঠিত সদগুরুর শরণাগত হতে হবে, যিনি ব্রহ্মনিষ্ঠ। (মুণ্ডক উপনিষদ ১/২/১২)
যারা জড়জগতের অতীত চিন্ময় জগতের জ্ঞানলাভে ঐকান্তিক ভাবে আগ্রহী, তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সেই বিজ্ঞান সম্বন্ধে জানার জন্য, অবশ্যই সদ্গুরুর শরণাগত হতে হবে।
তাই ‘শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত' গ্রন্থে পাওয়া যায় -
সর্ব- দেশ-কাল-দশায় জনের কর্তব্য।
গুরু-পাশে সেই ভক্তি প্রষ্টব্য, শ্রোতব্য।।
তাই সমস্ত দেশের, সমস্ত কালের, সমস্ত অবস্থায় প্রতিটি মানুষের কর্তব্য সদ্গুরুর শরণাগত হয়ে সেই ভক্তি সম্বন্ধে প্রশ্ন করা এবং নিষ্ঠা সহকারে শ্রবণ করা। (চৈঃ চঃ মধ্য: ২৫/১২২)
ধর্মের নিগুঢ় তাৎপর্য কিভাবে বোঝা যাবে? শাস্ত্রে সে সম্বন্ধে বলা হয়েছে-
ধর্মস্য তত্ত্বং নিহিতং গুহায়াং।
মহাজনো যেন গতঃ স পন্থাঃ ।।
কৃষ্ণভাবনামৃতের নিহিত তত্ত্ব কেবলমাত্র শুরু পরম্পরা ধারায়, পূর্বর্তন আচার্যের পদাঙ্ক অনুস্মরণ করার মাধ্যমে উপলব্ধি করা যায়। (মহাভারত বনপর্ব ৩১৩/১১৭)
শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে বলা হয়েছে-
যস্য দেবে পরা ভক্তি দেবে তথা গুরৌ।
তস্যৈতে কথিতা হ্যর্থাঃ প্রকাশন্তে মহাত্মনঃ।।
যে সমস্ত মহাত্মা পরমেশ্বর ভগবান এবং সদগুরু প্রতি ঐকাত্তিক ভক্তিসম্পন্ন, তাদের কাছে সমস্ত বৈদিক জ্ঞান আপনা থেকেই প্রকাশিত হয়। (শ্বেতার উপনিষদ ৬/২৩)
আরোও জানুনঃ
মানসিক চাপ, অশান্তি দূর করার উপায়:এখানে ক্লিক করুন
ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার:এখানে ক্লিক করুন
মস্তিষ্ক ঠিক রাখার উপায়:এখানে ক্লিক করুন
শ্রীল প্রভুপাদের গ্রন্থরাজির মধ্যে এবং সমস্ত বেদ শাস্ত্রেও শুরু গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার কথা অসংখ্য জায়গায় প্রতিপন্ন হয়েছে; তা সত্ত্বেও কখনও কখনও ভক্তরা সন্দেহাকুল হয়ে ভাবতে থাকে যে, ব্যক্তিগতভাবে গুরুলাভের কোনও দরকার নেই। এর সমর্থনে অনেক রকম জড়জাগতিক বিচার বিবেচনার কথা তুলে দেওয়া হয়। কেমন করে ব্যক্তিগত গুরুলাভের প্রয়োজন এড়িয়ে চলা যায়, সে সম্বন্ধে ক্রমশ মানসিক জল্পনা-কল্পনা থেকে গড়ে ওঠে রকমারী মিথ্যা ভিত্তিহীন আর্দশবাদ অন্য ভাবধারা। কৃষ্ণভাবনা সম্পর্কিত এই সমস্ত কল্পনাপ্রসূত প্রক্রিয়াগুলিকে শ্রীল প্রভুপাদ দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করে দিয়েছেন তাঁর তাৎপর্যে -
তাঁর প্রতি নিবেদিত সেবারূপেই গ্রহণ করে থাকেন। শ্রীল প্রভুপাদ ব্যাখ্যা করে লিখেছেন যে, গুরুদেবকে সেবা করার মাধ্যমে আমরা পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবা করার উপযোগিতা প্রত্যক্ষভাবে অনুভব করতে পারি । ঠিক বৈদ্যুতিক সংযোগের মতোই গুরু পরম্পরার মাধ্যমে আমরা ভাগবান শ্রীকৃষ্ণের সাথে সম্পর্কযুক্ত হতে পারি। তাই শ্রীমদ্ভাগবতে উল্লেখ করা হয়েছে-
যৎসেবয়া ভগবতঃ কৃটস্থস্য মধুদ্বিষঃ।
রতিরাসো ভবেৎ তীব্রঃ পাদয়োব্যসনাদনঃ।।
গুরুদেবের শ্রীচরণ সেবার মাধ্যমে বিষয় বাসনাহারী পরম পুরুষোত্তম ভগবান শ্রীমধুসূদনের প্রতি সেবা নিবেদনের অপ্রাকৃত ভাবোল্লাস সৃষ্টি করা যায়।(ভাগবত ৩/৭/১৯)
তাতে কৃষ্ণ ভজে, করে গুরুর সেবন।
মায়াজাল ছুটে, পায় কৃষ্ণের চরণ।।
যদি বদ্ধজীবাত্মা পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবায় আত্মনিইয়োগ করে এবং সেই সঙ্গে তার দীক্ষাগুরুর আদেশ মান্য করে তার সেবায় নিযুক্ত থাকে, তাহলে সে মায়ার কবল থেকে মুক্ত হতে পারে এবং শ্রীকৃষ্ণের চরণারবিন্দে আশ্রয়লাভের যোগ্য হয়ে উঠতে পারে। (চৈঃ চঃ মধ্য ২২/২৫)
ভয়ং দ্বিতীয়াভিনিবেশতঃ স্যাদীশাদপেতস্য বিপর্যয়োহসৃতিঃ।
তন্মায়য়াতে বুধ অভিজেত্তং ভক্ত্যকয়েশং গুরুদেবতাত্মা।।
ভগবানের বহিরঙ্গা মায়ার কবলিত হলে তার জড়জাগতিক দেহটিকে স্বরূপ জ্ঞান করে, তখন ভয়ের সৃষ্টি হয়। জীব যখন ঐ অবস্থায় পরমেশ্বরের প্রতি বিমুখ হয়, সে তখন ভগবানের দাস রূপে তার স্বরূপ ভুলে যায়। মায়ার বিভ্রান্তিতে কবলিত হলেই আত্মবিস্মৃতির আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। সুতরাং বুদ্ধিমান মানুষ একজন সদগুরুকে আরাধ্য দেবতার মতো পরম পূজনীয় রূপে গ্রহণ করে এবং তাকে তার জীবনের পরমাত্মীয় রূপে স্বীকার করে নিয়ে ভগবানের সেবায় নিয়োজিত হয়। (ভাগবত ১১/২/৩৭)
‘গুরু গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কিত এই প্রবন্ধে সুন্দর দার্শনিক তত্ত্বগতভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এটি ভাবাবেগ-প্রসুত কোন ব্যাপার নয় বরং পূর্বতন আচার্যদের মাধ্যমে প্রামাণ্য প্রক্রিয়া অনুসারেই পরম্পরাক্রমে অনুসৃত হয়ে আসছে। তাই শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর তার গুৰ্ব্বাষ্টকে বলেছেন
যস্য প্ৰসাদা ভগবৎ প্রসাদো
যস্যা প্রসাদান্ন গতিঃ কুতোহপি।
ধ্যায়ংস্তুবংস্তস্য যশস্ত্রিসন্ধ্যং
বন্দে গুরুঃ শ্রীচরণারবিন্দম্ ।
একমাত্র যার কৃপাতেই ভগবানের কৃপা লাভ হয় যিনি অপ্রসন্ন হলে জীবের আর কোথাও গতি থাকে না, আমি ত্রিসন্ধা সেই শ্রীগুরুদেবের কীর্তিসমূহ স্তব ও ধ্যান করতে তাঁর পাদপদ্ম বন্দনা করি।
আরোও জানুনঃ
গুরু পুজাঃ গুরুপুজার প্রয়োজনীয়তা ক্লিক করুন
গুরুর দায়িত্ব ও কর্তব্য ক্লিক করুন
ধর্মের সৃষ্টি কোথায়? পৃথিবীতে এত ধর্ম কেন? ক্লিক করুন
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন