ভগবান ও ঈশ্বরের পার্থক্য

প্রশ্নভগবান ও ঈশ্বরের পার্থক্য/ভগবানকে তো দেখা যায় না তবে কেন বিশ্বাস করবউত্তর:- ভগবান আছে ভগবান নেই দুটোই বিশ্বাস মাত্র। তবে এক যুক্তিহীন বিশ্বাস অপরটি হচ্ছে যুক্তিগ্রাহ্য বিশ্বাস। আমি আফ্রিকা দেখিনি তাই আফ্রিকা নেই এটি হচ্ছে যুক্তিহীন বিশ্বাস। যিনি আফ্রিকা দেখে আমাদের দেশটি সম্পর্কে, দেশের সমাজ, প্রকৃতি সম্পর্কে বর্ণনা দিতে পারেন এই ধরনের বিশ্বাসযোগ্য মাধ্যম থেকে শ্রবণ করে আফ্রিকা সম্বন্ধে যে বিশ্বাস তা হচ্ছে যুক্তিগ্রাহ্য বিশ্বাস। আমরা রেডিও টেলিভিশনের সংবাদ শুনে অনেক কিছু বিশ্বাস করি, যদিও আমরা তা স্বচক্ষে দেখিনি। কারণ এটি এক বিশ্বস্ত মাধ্যম। কুয়োর ব্যাঙ প্রশান্ত মহাসাগর দেখেনি তাই সে যদি বলে প্রশান্ত মহাসাগর নেই তবে তা হবে নির্বুদ্ধিতা। উলুকে না দেখে কভু সূর্যের কিরণ  অর্থাৎ পেঁচা রাতে ঘুরে বেড়ায়, এখন সে যদি বলে সূর্য বলে কিছু নেই তবে তা মুর্খামি।

আরোও জানুনঃ 
মানসিক চাপ, অশান্তি দূর করার উপায়:এখানে ক্লিক করুন 
ঘুম না আসার কারণ ও প্রতিকার:এখানে ক্লিক করুন 
মস্তিষ্ক ঠিক রাখার উপায়:এখানে ক্লিক করুন 

আমরা যদি এই প্রকৃতির দিকে লক্ষ্য করি তবে এর পেছনে যে একজন আছেন তা আমরা উপলব্ধি করতে পারব। এই যে সূর্য উদয় হচ্ছে, ফুল ফুটছে, গাছে ফল ধরছে, ঋতুর পরিবর্তন হচ্ছে এবং তদনুযায়ী ফল হচ্ছে, নানা জনের জন্ম হচ্ছে এবং মৃত্যু হচ্ছে, অনন্ত কোটি জীবের খাদ্যের সংস্থান হচ্ছে এই সকলের দিকে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় নিশ্চই একজন নিয়ন্ত্ৰা রয়েছেন। যার সুদক্ষ পরিচালনার ফলে সব কিছু এত সুন্দরভাবে পরিচালিত হচ্ছে। আমাদের জামাকাপড়, আসবাবপত্র, মোবাইল, কম্পিউটার যা কিছু দেখি না কেন এসবের একজন নির্মাতা আছেন। তেমনি এই বিশ্ব সংসারের যে একজন নিয়ন্ত্রা রয়েছেন তা উপলব্ধি করা বেশ কঠিন নয়। এখানে আমাদের দেখা না দেখার উপরে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নির্ভর করে না। আমরা না দেখেও যেমন রেডিও টিভির সংবাদ বিশ্বাস করি তাহলে ভগবান আছেন তা না দেখলেও কেন বিশ্বাস করব না।

ভগবান ও ঈশ্বরের
আমাদের চোখের একটা সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অধিক দরের কিংবা চোখের। একেবারে সামনের, অতি ক্ষুদ্র, অতি বড় জিনিস আমরা চক্ষু থাকলেও দেখতে পাই না চক্ষু থাকলেও আলোর অভাবে আবার দেখা যায় না। চোখের পেছনের বস্তুও দেখা যায় না। চোখে যদি ছানি পড়ে তবে চোখ থাকলেও দেখা যা তাই কেবল চোখে দেখা যায় না তাই বিশ্বাস করি না এই নীতি যথার্থ নয়। এর খুঁটিতে যে তার থাকে তাতে বিদ্যুৎ দেখা যায় না। এখন কেউ যদি বলে কই তারে তো বিদ্যুৎ দেখা যাচ্ছে না তাই আমি বিশ্বাস করি না এবং সে যদি তা স্পর্শ করে তবে এই রূপ কার্যের জন্য তার জীবনটাই হারাবে। এই ধরনের বিশ্বাসের কি মূল্য

Read more

যত মত তত পথ- ব্যাখ্যা- Click

না জানে বন্ধ্যা স্ত্রী প্রসব বেদনা। প্রসব বেদনা কীরূপ তা একজন বন্ধ্যা বুঝতে পারবে না। তেমনি ভগবান কেমন তা একজন সাধক ব্যক্তি যিনি শাস্ত্র প্রদত্ত নিয়মে ভগবানকে তপস্যা করে সন্তুষ্ট করে দর্শন পেয়েছেন তিনি তার বর্ণনা দিতে পারবেন। কিন্তু একজন কোনো রকম তপস্যা না করে, ভগবানকে কোনো রকম সেবা না করে কেমন ভাবে ভগবানকে দেখবেন। এই ব্যক্তি যদি বলে আমি ভগবানকে দেখিনি তাই ভগবান নেই তবে তা যুক্তিহীন বিশ্বাস। ভগদ্বভক্তরা ভগবানকে প্রত্যক্ষ করে ভগবানের রূপ, গুণ, লীলার বর্ণনা সূচক অনেক শাস্ত্রগ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। আমরা সেখান থেকে ভগবানের রূপ, কীভাবে ভগবানকে সন্তুষ্ট করা যায় এই সমস্ত বিষয় জ্ঞাত হতে পারি আর এই ভাবে অনুশীলন করে ভগবানকে প্রত্যক্ষ পর্যন্ত করতে পারি। কিন্তু যদি আমরা আমাদের জড় ইন্দ্রিয় দিয়ে গবেষণা করে প্রমাণ করতে চেষ্টা করি ভগবান আছেন, তবে তা হবে ভ্রান্তিপূর্ণ। কেননা আমাদের ইন্দ্রিয়গুলো সর্বদা অপূর্ণ অপূর্ণ ইন্দ্রিয় দিয়ে কীভাবে পূর্ণকে জানা যাবে।

আরোও জানুনঃ
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসাঃ এখানে ক্লিক করুন 
চুল পড়ার ১৫টি কারণঃ এখানে ক্লিক করুন 
শ্বাস নেওয়ার সময় বুক ব্যথার কারণঃ এখানে ক্লিক করুন 

বিষয় থাকলেই কেবল বিষয় গ্রাহ্য হয় না, যদি তা অনুভব করার মতো ইন্দ্রিয় বা যন্ত্র না থাকে। আবার বিষয় যে জাতীয় ইন্দ্রিয় বা যন্ত্র সেই জাতীয় হতে হবে। এক জাতীয় ইন্দ্রিয় দিয়ে বিজাতীয় বিষয় দর্শন করা কীভাবে সম্ভব শব্দ, রূপ, রস, গন্ধ, স্পর্শ এই পাঁচটি বিষয় আছে বলেই আমরা তা অনুভব করতে পারি তা নয়। আমরা এই গুলো অনুভব করতে পারি কারন তা উপলব্ধি করার মতো কান, চোখ, জিহ্বা, নাক ত্বক রূপ ইন্দ্রিয় আমাদের বিধাতা দিয়েছেন। কিন্তু আবার বিজাতীয় ইন্দ্রিয় যেমন নাক দিয়ে রূপ দর্শন করা যায় না। যিনি বধির তিনি কান থাকা সত্ত্বেও শব্দ শুনতে পান না। যিনি অন্ধ ব্যক্তি বস্তু থাকা সত্ত্বেও দেখতে পান না। সুতরাং জড় বিষয়ও যদি জড় ইন্দ্রিয় না থাকার দরুণ উপলব্ধি না করা যায় সেখানে অপ্রাকৃত বন্তু যে ভগবান তাকে আমারা কীভাবে এই জড় ইন্দ্রিয় দিয়ে দর্শন করতে পারব অতএব যে ইন্দ্রিয় বিকশিত হলে চিন্ময় বস্তু প্রত্যক্ষ করা যাবে সেই ইন্দ্রিয়ের অভাব হেতুই আমারা চিন্ময় বস্তু ভগবানকে প্রত্যক্ষ করতে পারি না তাই বলে ভগবান নেই এই ধারণা পোষণ করলে তা ভ্রমাত্মক।

ভগবান শব্দের অর্থ কি ভগবান ও ঈশ্বরের মধ্যে পার্থক্য কি ভগবান ও দেবতার মধ্যে পার্থক্য কি ভগবান ও ঈশ্বরের পার্থক্য ভগবান আছেন তার প্রমাণ কি ভগবান আল্লাহ ভগবান ইন্দ্র ভগবান ঈশ্বর ঈশান ভগবান ঈশ্বর ভগবান দেবতা ভগবান উক্তি ভগবান উপায় ভগবানের উপদেশ ভক্ত ও ভগবান ভগবান এবং ঈশ্বর ভগবান এর অর্থ কি ভগবান এবং ঈশ্বরের মধ্যে পার্থক্য কি
এই রূপ অবস্থায় কীভাবে প্রমাণ করা যাবে যে ভগবান আছেন? অন্ধ ব্যক্তি যে পর্যন্ত দৃষ্টিশক্তি না পান সে পর্যন্ত যেমন কোনো চক্ষুষ্মন ব্যক্তির শরণাপন্ন হয়ে পথ চলতে হয় তেমনি অপ্রাকৃত বিষয়ে অজ্ঞ অন্ধ আমাদের একান্ত কর্তব্য সেই বিষয়ে চক্ষুষ্মন কারও আশ্রয় গ্রহণ পূর্বক তার আদেশ, উপদেশ অনুযায়ী ভগভক্তির অনুশীলন করে দিব্য দৃষ্টি ফিরে পাওয়া। সেই চক্ষুষ্মন ব্যক্তি হচ্ছে বেদ এবং বেদের অনুগামী শাস্ত্রসমূহ

পিতৃদেবমনুষ্যানাং বেদশ্চক্ষুস্তবেশ্বর

শ্রেয়স্তৃনুপলক্কেহৰ্থে সাধ্যমনিয়োরপি

(ভাগবত ১১/২০/)

অর্থাৎ হে ঈশ্বর সাধ্য সাধনের অনুপলব্ধি স্থলে অর্থাৎ শ্রী ভগবানের স্বরুপ, বিগ্রহ বৈভব আদি অপরিগ্রহে পিতৃগণের, দেবগণের মনুষ্যগণের দর্শন সম্বন্ধে তোমার বেদই একমাত্র শ্রেষ্ঠ চক্ষু বেদ হচ্ছে অপৌরেষয়। অর্থাৎ কোনো মানুষ বেদ রচনা করেননি। সৃষ্টির প্রারম্ভে ভগবান স্বয়ং ব্রহ্মাজীকে এই বেদের জ্ঞান প্রদান করেছিলেন। বেদ হচ্ছে মানুষের চারটি ক্রটি ভ্ৰম, প্রমাদ, বিপ্রলিপ্স করণাপাটব দোষ রহিত। বেদকেই বা শ্রুতি শাস্ত্রকেই একমাত্র প্রমাণ বলে জানতে হবে। কারও পিতা কে তা যেমন মা ভালো বলেতে পারেন, তেমনি বেদ মাতাই বলতে পারেন প্রকৃতপক্ষে ভগবান কে, তার আকার আকৃতি কীরুপ।

ভগবান শব্দের অর্থ কি ভগবান , ঈশ্বর  মধ্যে পার্থক্য কি
ঋগ বেদে আছেওঁ কৃষ্ণো বৈ সচ্চিদানন্দঘন: কৃষ্ণ আদি পুরুষ: কৃষ্ণ: পুরুষোত্তম, কৃষ্ণো হা কর্মাদিমূলং কৃষ্ণ: সবৈকার্য: কৃষ্ণ: কাশংকৃদাদীশমুখপ্রভুপুজ্য:"- অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণই সৎ চিৎ আনন্দঘন বিগ্রহ, শ্রীকৃষ্ণই আদি পুরুষ, শ্রীকৃষ্ণই পুরুষোত্তম, শ্রীকৃষ্ণই সমস্ত কর্মের মূল, সর্বকার্যের উৎস, শ্রীকৃষ্ণই সকলের একমাত্র প্রভু। শ্রীকৃষ্ণই ব্রহ্মা, শিব আদি দেবতাদের প্রভু পুজ্য। এই বেদবাণীর দ্বারা ভগবান কে, তার বিগ্রহ কেমন, তার গুণসমূহ সবই চিহ্নিত হয়েছে। ভগবানকে কীভাবে দেখা যায় তা ব্রহ্মাজি ব্ৰহ্মসংহিতায় উল্লেখ করেছেন।প্রেমাঞ্জনচ্ছুরিত ভক্তিবিলোচনেন সন্ত: সদৈব হৃদয়েষু বিলোকয়ন্তি, যং শ্যামসুন্দরমচিন্ত্যগুনস্বরুপম গোবিন্দমদিপুরুষং তমহং ভজামিঅর্থাৎ জাগতিক কামনা বাসনাময় নেত্রে নয়, ভগবৎ প্রেমের অঞ্জনে রঞ্জিত ভক্তি নেত্রেই নিষ্ঠাবান সাধুগণ সর্বদা তাদের হৃদয়ে সেই অচিন্তগুণ বিশিষ্ট পরম সুন্দর শ্যামসুন্দরকে দর্শন করেন। সেই আদি পুরুষ গোবিন্দকে আমি ভজনা করি।
আরোও জানুনঃ
হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন 
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসাঃ এখানে ক্লিক করুন 
শিশু ও নবজাতকদের মধ্যে 10 রোগঃ এখানে ক্লিক করুন 

(ব্রহ্ম সংহিতা /৩৮) ভগবানকে যদি আমরা যথার্থই দেখতে চাই তবে ভগবান কৃপাপূর্বক নিজেকে আমাদের নিকট প্রকাশ করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আমরা যে ভাবে অর্থ চাই, রোগী যেভাবে আরোগ্য চায়, ক্ষুধার্ত ব্যক্তি যেভাবে অন্ন চায় সেভাবে আমারা কেউই ভগবানকে দেখতে চাইনা। গীতায় ভগবান বলেছেন,

নাহং প্রকাশঃ সর্বস্য যোগমায়া সমাবৃতঃ।

মূঢ়োহয়ং নাভিজানাতি লোক মামজমব্যয়ম ।। (গীতা-/২৬)

অর্থাৎ মূঢ় বুদ্ধিহীন ব্যক্তিদের কাছে কখনও প্রকাশিত হই না। তাদের কাছে আমি আমার অন্তরঙ্গা শক্তি যোগমায়া দ্বারা আবৃত থাকি। তাই তারা আমার অজ অব্যয় স্বরূপকে জানতে পারে না। তাই যদি আমরা আমাদের অহংকার ত্যাগ করে, ক্রটি পূর্ণ ইন্দ্রিয় দিয়ে গবেষণা না করে সরলভাবে ভগবানের দিব্য নামহরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে, হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরেধরে ছোট শিশু যেরূপ ভাবে তার মাকে ডাকে সেই রূপ নির্বন্ধ করে ভগবানকে ডাকি তবে আমরা ভগবানকে প্রত্যক্ষ পর্যন্ত করতে পারি।

1 মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

নবীনতর পূর্বতন