আমাদের ফেসবুক পেজে বিভিন্ন ভক্ত মেসেজে প্রশ্ন করেছে। সকল ভক্তের বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে আমরা কয়েকটি অংশ বা পার্ট পরেছি। সকলের প্রশ্নর উত্তর দেওয়া হবে তবে একটু সময় লাগতে পারে। এখন থেকে যারা প্রশ্ন করবেন তারা ফেসবুক পেজের মেসেজে না করে এখানে কমেন্টে করার অনুরোধ রইলো।
যারা বিভিন্ন ব্রত নিয়ে প্রশ্ন করেছেন তাদের প্রশ্ন সাপেক্ষা দুইটি অংশ করা হয়েছে। এটি হল দ্বিতীয় অংশ। আপনাদের প্রশ্ন সাপেক্ষায় কয়েকটি প্রশ্ন আমরা নিজেরাই তুলে ধরেছি। যাদের প্রশ্নের উত্তর এখানে নেই তারা প্রথম অংশ দেখে নিন।
আরোও পড়ুনঃ
ব্রত ও তিথিঃ প্রথম অংশ - এখানে ক্লিক করুন
তিলক ধারণের আবশ্যকতা - এখানে ক্লিক করুন
নিত্যকর্ম কী এবং কী কী - এখানে ক্লিক করুন
ওঁ এর অর্থ কী? ওঁ উচ্চারণের দ্বারা কী প্রকাশ করা হয়? - এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন ১। শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাধারাণী ও শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু কোন কোন বারে জন্মলীলা করেছিলেন?
উত্তরঃ শ্রীকৃষ্ণ বুধবারে,
শ্রীমতি
রাধারাণী সোমবারে এবং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর শনিবারে জন্মলীলা প্রকাশিত হয়েছে।
প্রশ্ন ২। কখন কে দোল (রং) খেলেছিল?
উত্তরঃ বৃন্দাবনে শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে গোপসখা ও গোপিকারা পবিত্র সুগন্ধি আবির খেলা খেলেছিলেন। ভগবান ও ভক্তের
মধ্যে এরূপ আনন্দময় খেলা হয়। কিন্তু বর্তমান সমাজে
এই খেলা বিকৃত রূপ
নিয়েছে। আলকাতরা ও অন্য বাজে পদার্থ নিয়ে যুবক যুবতিদের মধ্যে একটা মজা কববার
ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বদ্ধ
জীবের পক্ষে রং খেলা একটি নীতি বিগর্হিত খেলা। রাধাকৃষ্ণের
মাধুর্যরসময় লীলাকে বদ্ধ জীবের কখনো
অনুকরণ করা উচিত নয়।
প্রশ্ন ৩।
অক্ষয়
তৃতীয়া কি?
চন্দন যাত্রা কি ? এই উৎসবের তাৎপর্য কি ?
উত্তর
: এই তিথি অক্ষয় তৃতীয়া নামে আখ্যাত। আরও বলা হয়েছে, “এই তিথিতে যব-হোম ও যব দ্বারা
শ্রীকৃষ্ণের পূজা করা কর্তব্য। ব্রাহ্মণ ব্যক্তিকে ঐ দিনে যব দান পূর্বক ভোজন রাতে হয়।"
পদ্ম পুরাণের বরাহ-পৃথিবী সংবাদে লিখিত আছে, “বৈশাখী শুক্লা তৃতীয়া তিথিতে সত্যযুগের উদয় হয়
এবং সেই দিন থেকেই ত্রিবেদের প্রতিপাদ্য ধর্মের প্রবর্তন হয়েছে। এই তৃতীয়াতে
গঙ্গাস্নান,
বৈষবকে দান, ভগবানের পূজা, জপ, শ্রাদ্ধ ও পিতৃতর্পণ
প্রভৃতি করলে অক্ষয় হয়। এই
অক্ষয় তৃতীয়া তিথি শ্রীহরির পরম প্রীতিকরী। যারা এই তিথিতে সযত্নে যব দ্বারা
শ্রীহরির অর্চনা করেন এবং যব-শ্রাদ্ধ ও যব দান করেন, তারা ধন্যবাদার্হ ও বৈষ্ণব বলে পরিগণিত
হন।”
আরোও জানুনঃ
পিঠের উপরে ব্যথা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা←এখানে চাপ দিন
শ্বাস নেওয়ার সময় বুক ও পিঠ ব্যথা←এখানে চাপ দিন
শিশু ও নবজাতকদের মধ্যে ১০ রোগ←এখানে চাপ দিন
উৎকলখণ্ডে
বর্ণিত আছে,
শ্রীজগন্নাথদেব মহারাজ
ইন্দ্রদ্যুম্নকে বৈশাখী শুক্লা অক্ষয় তৃতীয়তে সুগন্ধি চন্দন দ্বারা জগন্নাথের
অঙ্গে লেপন করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। সেদিন থেকে চন্দন যাত্রা উৎসব শুরু হল।
শ্রীচৈতন্যচরিতামৃতে দেখা যায়, বৈষ্ণব শ্রীমাধবেন্দ্র পুরীকে স্বপ্নে শ্রীগোপাল বলছেন, “আমার শরীরের তাপ জুড়াচ্ছে না। মলয় প্রদেশ থেকে চন্দন নিয়ে এসো এবং তা ঘষে আমার অঙ্গে লেপন কর, তবেই তাপ জুড়াবে।” তার পর পূর্বভারতে বৃদ্ধ মাধবেন্দ্র পরী নীলাচলে জগন্নাথ পুরীতে এসে সেবকদের কাছে মলয়জ চন্দন ও কর্পূর নিয়ে বৃন্দাবনে ফিরছিলেন। পথে রেনুণাতে শ্রীগোপীনাথ মন্দিরে আসেন। সেই রাত্রে সেখানে শয়ন কালে স্বপ্ন দেখেন, গোপাল এসে বলছেন, “হে মাধববেন্দ্র পুরী, আমি ইতিমধ্যেই সমস্ত চন্দন ও কপূর গ্রহণ করেছি। এখন কপূর সহ ঐ চন্দন ঘষে ঘষে শ্রীগোপীনাথের অঙ্গে লেপন করো। গোপীনাথ ও আমি অভিন্ন।
প্রশ্ন ৪। শ্রীনৃসিংহ চতুর্দশী ব্রত-উপবাসের মাহাত্ম্য কি?
উত্তরঃ শ্রীবৃহৎ নারদীয় পুরাণে ভগবান শ্রীনৃসিংহদেব তার পরম ভক্ত শ্রীপ্রহ্লাদের পূর্ব জীবনের কথা বর্ণনা করছেন। “পুরাকালে অবন্তী নগরে সর্বজন প্রথিত বসুশর্মা নামে এক বেদবিচক্ষণ সদাচারী ব্রাহ্মণ ছিলেন। সুশীল নামে, তার নিরস্তর সদাচারিণী ও পতি-পরায়ণা পত্নী ছিলেন। সেই দম্পতির ৫ পুত্র ছিল। চারজন পুত্র বিদ্যায় বিচক্ষণ, সদাচারী ও ভক্তিমান ছিল। কিন্তু কনিষ্ঠ পুত্রটি নিরন্তর বেশ্যাসঙ্গে, মদ নেশায় ও নানা পাপকর্মে লিপ্ত ছিল।
একদিন
বনমধ্যে সেই কনিষ্ঠটির সঙ্গে তার এক বান্ধবীর তুমুলে কলহ
বাধে। সেইজন্য দুইজনের মধ্যে
বিচ্ছেদ হয়। মনোমালিন্যের জন্য তারা সারাদিন
কিছু আহার করেনি। জল পানও হয়নি। উপবাস ও
মনোমালিন্যে সারা রাত ঘুমও
হয়নি। জীবনের বহু দিন নষ্ট হয়ে
গেছে পাপ কর্মের মধ্যে,
এই চিন্তায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে বিচ্ছিন্ন
তারা বিয়ে মনে মনে ভগবানের স্মরণ করতে লাগল। ভাগ্যক্রমে সেই দিনটি ছিল আমার আবির্ভাবের দিন (শ্রীনৃসিংহ
চতুর্দশী)।
হে
প্রহ্লাদ,
পূর্ব জন্মে তুমিই ছিলে
সেই কনিষ্ঠ ব্যক্তি। তোমার সেই উচ্ছৃঙ্খলপূর্ণ জীবনে সম্পূর্ণ অজ্ঞাতে এই একটি মাত্র বহু পুণ্যপ্রদ
ব্ৰত সম্পাদন করেছিলে। আর কোনও পুণ্য তোমার ছিল না।
হে
প্রহ্লাদ,
ব্রহ্মাও আমার ব্রত
সাধন করে আমার প্রসাদে সরাচর বিশ্বের স্রষ্টা হয়েছেন। শিব, বহু দেবতা, ঋষি এবং মহামতি রাজারা
এই বৈশাখ মাসের শুক্লপক্ষে চতুর্দশ ব্রত পালন করে তাদের সিদ্ধিলাভ করেছেন। আমার
কৃপায় তুমি এই ভক্তজন্ম লাভ করেছ। হে প্রহ্লাদ, এই চতুর্দশীব্রত সর্বো ত্রিভুবনে বিদিত। এই
পাপহরণকারী ব্রত অনুষ্ঠান করলে এই মৃত্যুময় সংসারে ফিরে
আসতে হয় না। যারা ভবভয়ে ভীরু,
তারা আমার প্রীতির
উদ্দেশ্যে প্রতি বছর এই বৈশাখী চতুর্দশী ব্রতের অনুষ্ঠান করবে। আমার এই দিনটি
জেনেও যদি কেউ অবজ্ঞায় লংঘন করে, তা হলে চন্দ্ৰসূর্যের স্থিতিকাল পর্যন্ত তাকে নরকবাস করতে হয়।”
প্রশ্ন ৫। অনেক সময় দেখা যায়, যেদিন একাদশী তিথি তার
পরদিন অনেকে উপবাস ব্রত পালন করেন। এর কারণ কি?
উত্তরঃ
বিশুদ্ধ একাদশী তিথিতে উপবাস কর্তব্য, তবে উপবাসের কতকগুলি বিধি রয়েছে।
শ্রীহরিভক্তিবিলাস গ্রন্থে বলা হয়েছে- একাদশী তিথির পরের দিন যদি মহাদ্বাদশীর উদয় হয়, তবে উপবাস দ্বাদশীর দিন
করতে হবে। আটটি মহাদ্বাদশী
রয়েছে।
তার মধ্যে উন্মীলনী, বথুলী, ত্রিস্পশা ও পক্ষবধিনী- এই চারটি মহাদ্বাদশী তিথি-ঘটিত এবং জয়া, বিজয়া, জয়ন্তী ও পাপনাশিনী এই চারটি মহাদ্বাদশী নক্ষত্ৰ-ঘটিত। একাদশীর
উপবাস ব্রত মহাদ্বাদশীতে
পালন করা হয় এবং ত্রয়োদশীতে সময়মতো পারণ করা উচিত।
আবার, সাধারণত বিষ্ণুতত্ত্বের আবির্ভাবের দিন উপবাস ব্রত পালনীয়। কিন্তু, ব্যতিক্রম হচ্ছে এই যে, কোনও বিষ্ণু-তত্ত্বের—যেমন বামনদেব, বরাহদেব ইত্যাদি
বিষ্ণুতত্ত্বের আবির্ভাব দ্বাদশী তিথিতে হয় এবং সেই দ্বাদশী যদি মহাদ্বাদশী না হয়, তবে পূর্বদিন একাদশী তিথিতেই
বিষ্ণু-আবির্ভাবজনিত উপবাস ব্রত পালন করা উচিত, এবং আবির্ভাবের দিন পরণ, বিগ্রহ অর্চনাদি পালন, প্রসাদ গ্রহণ বিধেয়।
আরোও জানুনঃ
পিঠ ব্যথাঃ উপশম ও ঘরোয়া চিকিৎসা←এখানে চাপ দিন
কাঁধ এবং বাহুতে ব্যথার কারণ ও পরামর্শ←এখানে চাপ দিন
বুকে ব্যথার কারণ, লক্ষণ ও চিকিৎসা←এখানে চাপ দিন
পুরাণাদি শাস্ত্রে সাবধান করে দেওয়া হয়েছে যে, কখনই দশমীযুক্তা একাদশীতে উপবাস করা উচিত নয়, একাদশীযুক্তা দ্বাদশীতে উপবাস করা কল্যাণকর। ভুলবশত দশমীযুক্ত একাদশীতে উপবাসী থাকার জন্য জনকনন্দিনী সীতাদেবীকে বহু দুঃখ ভোগ করতে হয়েছিল। এই কথা মহর্ষি বাল্মীকি উল্লেখ করেছেন।
কুর্ম পুরাণে লিখিত আছে, কখনই দশমী বিদ্ধা একাদশীতে উপবাস করবে না। একাদশীর বৃদ্ধি বা হ্রাস ঘটলে অথবা ত্র্যহস্পর্শ হলে কিংবা নানা বাক্যবিরোধে সংশয় উপস্থিত হলে দ্বাদশীতে উপবাস করে পরদিন পারণ কর্তব্য।
প্রশ্ন ৬। শ্রাবণ মাসে শাক খেতে নেই কেন?
উত্তর
: পুরাণের কথা-
শ্রাবণ মাসে
শ্রীব্রহ্মা শাকের মধ্যে অবস্থান করেন। শাক খেলে ব্রহ্মার চরণে
অপরাধ হয়। চিকিৎসা শাস্ত্রেও বলা হয়েছে, এই সময় শাক আমাদের শরীরে রোগ বৃদ্ধিকারক।
প্রশ্ন ৭। চাতুর্মাস্যর কোন্ মাসে কি দ্রব্য ভক্ষণ করতে নেই এবং কেন, জানাবেন।
শ্রাবণে বর্জয়েৎ শাকং, দধি ভাদ্রপদে তথা।
দুগ্ধম্ আশ্বযুজে মাসি, কার্তিকে চামিষং ত্যজেৎ।।
এই
কথা স্কন্দপুরাণে বলা হয়েছে—শ্রাবণ মাসে শাক,
ভাদ্রমাসে দই, আশ্বিন মাসে দুধ এবং
কার্তিক মাসে আমিষ বা অড়হর আদি ডাল বর্জন করতে হয়। কোনও শাস্ত্রে বলা হয়েছে, সেই সেই মাসে শাকের
মধ্যে ব্রহ্মা,
দইতে শিব, দুধে বিষ্ণু অধিষ্ঠান
করেন। সেই সব ভোজন করলে তাদের চরণে
অপরাধ ফলে ভক্তি নষ্ট হয়। চিকিৎসাশাস্ত্রে বলা হয়েছে, ওই সময়ে রোগজীবাণু বেশি ছড়ায়, ফলে শ্রাবণে শাকভক্ষণে
বেশি বদহজম হয়,
কার্তিকে কলাই, খেসারী ডাল শরীরের
পক্ষে খুবই ক্ষতিকর। অবৈষ্ণবদের প্রিয় খাদ্য মাছ আদিতে কলেরা, বসন্ত, টাইফয়েডের জীবাণু
সঞ্চারিত হয় যা শরিলের পক্ষে বিপদজনক।
প্রশ্ন ৮। মলমাস কাকে বলে?
উত্তরঃ যদি কোন মাসে দুইটি অমাবস্যা স্থায়ী হয় ও রবিসংক্রান্তি নেই বা ঘটে না, সেই মাসকে বলা হয় মলমাস। ব্রজধামে এই মাসকে পুরুষোত্তম মাস বলা হয়।
প্রশ্ন ৯। দেশের নানা জায়গায় চব্বিশ প্রহর নামযজ্ঞ হচ্ছে।
ইসকন ভক্তরা সেরকম অনুষ্ঠান করেন না কেন?
উত্তর
: ক্ষেত্র বিশেষে নামযজ্ঞ হয়ে থাকে। শ্রীমায়াপুরে অখণ্ড হরিনাম যজ্ঞঃ বহু বছর
ধরে চলে আসছে। কেবল ২৪ প্রহর কেন, অনবরত এটি চলতেই থাকবে যতদিন এখানে ভক্তরা থাকবে।
প্রশ্ন ১০। আমরা সর্ব কমতেই চন্দন
ব্যবহার করি। ঠাকুরের চরণে চন্দন অৰ্পণ করি। সর্বক্ষেত্রেই চন্দন কেন ব্যবহার করি?
উত্তর: সর্ব কর্মতেই কিংবা সর্বক্ষেত্রেই নিশ্চয়ই চন্দন ব্যবহার করা হয় না। স্কন্দ পুরাণে শ্রীব্রহ্ম নারদমুনিকে বলছেন, “শঙ্খে চন্দন নিয়ে শ্রীহরির অঙ্গে লেপন করলে শ্রীহরি পরম সন্তোষ অনুভব করে থাকেন।” গরুড়পুরাণে লিখিত আছে যে, প্রত্যহ শ্রীহরিচরণে তুলসীপত্র সঙ্গে চন্দন লেপন করলে অভীষ্ট সিদ্ধ হয়।
প্রশ্ন ১১। একাদশীতে উপবাস থেকে যদি কেউ ঘুমায়, তবে তার কি একাদশী ফল নষ্ট হয়?
উত্তরঃ
হরিভক্তিবিলাসে উল্লেখ আছে,
ব্রত উপবাস দিনে কেউ
যদি বারে বারে জলপান করে,
তাম্বুল (পান) খায়, দিবাভাগে ঘুমায়, মৈথুন কর্মে যুক্ত থাকে
তা হলে এই কম গুলি ব্ৰত দূষিত করে। ফলে
ব্রত-উপবাস করার ফল নষ্ট হয়ে যায়।
শ্রীহরির
নাম জপ, শ্রীহরি-কথা চিন্তন, হরিকথা শ্রবণ ও
কীর্তনাদিতে দিন অতিবাহিত করলে একাদশীর উপবাস সার্থক
হয়।
প্রশ্ন ১২। কার্তিক ব্রত না করলে কি
ক্ষতি হয়?
উত্তর:
বিষ্ণোঃ পূজা কথা বিষ্ণোবৈষ্ণবানাঞ্চ-দর্শনে।
ন ভবেৎ কার্তিকে যস্য হন্তি পুণ্যং
দশাব্দিকম্॥
যার পক্ষে কার্তিক মাসে বিষ্ণুপূজা, বিষ্ণুকথা ও বৈষ্ণবদের দর্শন না ঘটে, তার দশ বছরের অর্জিত
পুণ্য বিনষ্ট হয়।
প্রশ্ন ১৩।
একাদশী
ব্রত উপবাসের দিন অন্ন ভোজন করলে কি দোষ হয়?
উত্তরঃ স্কন্দ পুরাণে বলা হয়েছে-
মাতৃহাঃ পিতৃহাশ্চৈব ভ্রাতৃহা গুরুহাস্তথা।
একাদশ্যান্তু যো ভুঙক্তে বিষ্ণুলোকাচ্চুতো ভবে॥
একাদশী
ব্রতে অন্ন ভোজন করলে মাতা পিতা
ভ্রাতা ও গুরু হত্যা পাপ হয়। তাই অন্নভোজনকারী ব্যক্তি
বিষ্ণুলোকে গমন করতে সক্ষম হয়
না।
প্রশ্ন ১৪। মাঘী পূর্ণিমাতে প্রয়াগ
তীর্থে স্নান করবার জন্য প্রচুর লোকের ভীড় হয় কেন?
উত্তরঃ পুরাকালে মহর্ষি
গৌতমকে অঙ্গিরা ঋষি বলেছিলেন, প্রয়াগ তীর্থের মাঘীপূর্ণিমা তিথিতে ৩ কোটি ১০
সহস্র তীর্থের সমাবেশ ঘটে। যে ব্যক্তি পবিত্র চিত্তে এই দিনে এখানে স্নান
করবেন, তিনি সমস্ত পাপ থেকে
মুক্ত হয়ে স্বর্ণগতি লাভ করবে। (মহাভারত অনুশাসন-২৫) তাই সর্বপাপ মুক্ত
হওয়ার সুযোগ গ্রহণের জন্য প্রচুর লোকের ভীড় হয়।
প্রশ্ন ১৫। রাম-রাবণের যুদ্ধ বছরের
কোন সময়ে সংঘটিত হয়েছিল?
উত্তরঃ শোনা যায় মাঘ মাসের
শুক্লা দ্বিতীয়া থেকে চৈত্র মাসের কৃষ্ণা চতুর্দশী পর্যন্ত রাম-রাবণের
যুদ্ধ চলেছিল।
প্রশ্ন ১৬। জগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা
কেন অনুষ্ঠিত হয়?
উত্তরঃ
প্রথম মন্বন্তরে ব্রহ্মার পুত্র শ্রীস্বায়ম্ভুব মনু এক সময় পৃথিবীতে পরমেশ্বর
ভগবানকে দর্শন করবার অভিলাষে একটি মহাযজ্ঞ অনুষ্ঠান করেছিলেন, সেই যজ্ঞ প্রভাবে শ্রীজগন্নাথদেবের
আবির্ভাব। সেই দিনটি ছিল জৈষ্ঠ্যমাসের পূর্ণিমা তিথি। এইজন্য এইদিনকে বলা হয় শ্রীজগন্নাথদেবের
আবির্ভাব তিথি। শ্রীজগন্নাথদেব স্বায়ম্ভুব মনুকে বলেছিলেন, “হে বৎস, তোমার কল্যাণ হোক, তোমারা সবাই মিলে পবিত্র
জলে আমাকে স্নান করাও। তাতে তোমাদের মন-প্রাণ শুদ্ধ হবে, তোমাদের সদ অভিলাষ পূর্ণ
হবে।"
আরোও জানুনঃ
কাশি দূর করার উপায়: এখানে ক্লিক করুন
ঘুমনা আসার কারণ ও প্রতিকারঃ এখানে ক্লিক করুন
চুলকানি - চর্মরোগ উপশমঃ এখানে ক্লিক করুন
ভগবানের নির্দেশমতো ঐ দিবসে সুসজ্জিত স্নানবেদিতে শ্রীজগন্নাথকে আনয়ন করে। মহাসমারোহে স্নান অনুষ্ঠান উদযাপিত হয়। মহান ভক্ত শ্রীইন্দ্রদ্যুম্ন মহারাজ এই বিধানে। প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠ পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীজগন্নাথদেবের স্নানযাত্রা মহোৎসব করতেন। ভক্তিকামী জনগণ নিজহাতে প্রভুকে পবিত্র জলে স্নান করিয়ে সুকৃতি সঞ্চয় করে থাকেন।
প্রশ্ন ১৭। রাখী পূর্ণিমার দিন শ্রীশ্রীরাধামাধবকে রাখী পরানো হয় কেন?
উত্তরঃ শ্রাবণ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে শ্ৰীভাগুরী ঋষি নন্দভবনে বালক কৃষ্ণের মঙ্গল কামনা করে তার সুরক্ষার উদ্দেশ্যে হাতে রাখী বেঁধে দিয়েছিলেন। ভাগুরা ঋষির পত্নী আবার রাধারাণীর হাতেও রাখী বেঁধে দিয়েছিলেন। সেই স্মৃতি হিসাবে শ্রীশ্রীরাধামাধবের হাতে এই দিনে রাখী পরানো হয়।
প্রশ্ন ১৮। ঊর্জাব্রত বিধি কি কি?
উত্তরঃ
দামোদর মাসে বা কার্তিক
মাসে কায়িক,
মানসিক ও পারমার্থিক
কল্যাণ সাধনের জন্য
ধর্মপরায়ণ ব্যক্তিরা ঊর্জাব্রত বা কার্তিকব্রত পালন করেন।
এই ব্রত পারনের সাধারণতঃ নিয়মটি হল, হবিষ্য-অন্ন
শ্রীভগবানকে নিবেদন করে সেই প্রসাদ গ্রহণ
করা। অধিক নিদ্রা, আলস্য ও অবৈষ্ণববাচিত
ব্যবহারগুলি পরিহার করতে হবে। ক্ষৌরকর্ম বর্জন। নিত্যস্নান প্রভৃতি সংযমীর ধর্ম
সর্বতোভাবে পালন করা।
প্রশ্ন ১৯। অষ্টপ্রহর বা চৰ্বিশ
প্রহর নামকীর্তনের পর দধিমঙ্গল করা হয়। এই দধিমঙ্গল নিয়মটি কখন
থেকে এবং কেন করা হয়?
উত্তরঃ
শিশুপুত্র কৃষ্ণের জন্মের পরদিন পিতা শ্রীনন্দমহারাজ আনন্দ উৎসব আয়োজন করেছিলেন। সমস্ত অতিথিবর্গকে
যথোচিত দান-দক্ষিণা প্রদান, ভোজন, নৃত্য, নীত, বাদ্য, কীর্তন ইত্যাদি
অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। জয়ধ্বনি,
মঙ্গলধ্বনি, হরি ধ্বনি উঠতে লাগল।
শিশুপুত্রের মঙ্গল কামনা করেই পিতা এ সমস্ত বিশাল অনুষ্ঠান করেছিলেন। অনেকে মহোল্লাসে চাকাচাকা দধিতে
ভরা অনেক দধিপাত্র এনে সেই ভীড়ের মাঝে দধি নিক্ষেপ করতে লাগলেন। সমগ্র উৎসব
প্রাঙ্গণ,
আনন্দময় লোকদের চেহারা নতুনরূপ
ধারণ করে উৎসবটিকে আরও বেশি আনন্দময় করে তুলেছিল। গোকুলবাসীরা শিশু কৃষ্ণের মঙ্গল অনুষ্ঠানে এসে
দধি নিক্ষেপ করে আনন্দ পেয়েছিলেন বলে এই অনুষ্ঠানকে দধিমঙ্গল বলা হয়।
বর্তমান
মানুষ গোজাতির মর্যাদা রাখতেই
ঠিক পারে না। তাই সর্বত্র ছড়াবার মতো চাকা চাকা দই পাবে কোথায়? হরিকীর্তন অনুষ্ঠানে কোথাও কোথাও দেখা যায় একটি হাড়িতে কিছু দুধ বা দইজল
নিয়ে আমপাতা চুবিয়ে সেই ভেজা পাতাটি ধরে উপস্থিত জনগণের মাতায় জল ছড়িয়ে দেয়
মাত্র।
প্রশ্নঃ২০। গাভী প্রসবের পর একুশ দিন না পার হলে সেই গাভীর দুধ এনে পুজাকর্মে ব্যবহার করা বা সেই দুধ গ্রহণ করা যেতে পারে কি না?
উত্তরঃ প্রসবের পর গভীর থেকে যে দুধ ক্ষরিত হয়, সেই গাঢ় দুধকে শালদুধ বলা হয়। সেই দুধে কোলস্ট্রাম নামক হলুদ বর্ণের পদার্থ থাকে। প্রকৃতিগত কারণে সেই দুধ কেবল বাছুরের পক্ষে উপযুক্ত। মানুষের পক্ষে নয়, এবং কেবল পুষ্টি সাধনের ঐ দুধ নির্ধারিত। সাধারণত চৌদ্দদিন এই নিয়ম পালন করা ভালো। তারপর গাভীপূজা করে দুধ দোহন করে ভগবৎ উদ্দেশ্যে অর্পণ করাই বিহিতঁ হয়।
গাভীকে মা বলা হয় কেন জানতে এখানে ক্লিক ক্রুনঃ
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার যদি কোন মতামত বা জিজ্ঞাসা থেকে বা কোন বিষয়ে জানতে চান তাহলে কমেন্ট করে জানাতে দ্বিধাবোধ করবেন না।
উপরিক্ত আলোচনা আপনার কাছে ভালো
লাগলে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে (ফেসবুক,
টিউটার, হোয়াটেপ্স ইত্যাদি) সেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন