আমাদের ফেসবুক পেজে বিভিন্ন ভক্ত মেসেজে প্রশ্ন করেছে। সকল ভক্তের বিভিন্ন প্রশ্ন নিয়ে আমরা কয়েকটি অংশ বা পার্ট পরেছি। সকলের প্রশ্নর উত্তর দেওয়া হবে তবে একটু সময় লাগতে পারে। এখন থেকে যারা প্রশ্ন করবেন তারা ফেসবুক পেজের মেসেজে না করে এখানে কমেন্টে করার অনুরোধ রইলো।
যারা বিভিন্ন ব্রত নিয়ে প্রশ্ন করেছেন তাদের প্রশ্ন সাপেক্ষা দুইটি অংশ করা হয়েছে। এটি হল প্রথম অংশ। আপনাদের প্রশ্ন সাপেক্ষায় কয়েকটি প্রশ্ন আমরা নিজেরাই তুলে ধরেছি। যাদের প্রশ্নের উত্তর এখানে নেই তারা দ্বিতীয় অংশ দেখে নিন।
প্রশ্ন ১। ভগবান শ্রীনৃসিংহদেবের আবির্ভাব চর্তুদশী ব্রত পলন করলে সর্ববিগ্ন নাশ হয় এবং দীর্ঘ আয়ু লাভ হয়। আমি ও আমার স্বামী সারাদিন নিরম্বু উপবাস, রাত্রি জাগরণ করেছিলাম। গভীর রাতে কোনও রকম সাড়া না দিয়েই আমার স্বামী দেহ রাখেন। ব্রত ফলে যদি বিগ্ন ও আয়ু বৃদ্ধি হয়, তবে আমার স্বামীর আয়ু কোথায় গেল এবং আমার মঙ্গল কিসে হলো?
উত্তরঃ
এই জড় জগতে জন্ম নিলে অবশ্যই মৃত্যু হবেই হবে।
অনেকে রোগে
কষ্ট পেয়ে,
অপঘাতে, শোকে, অভশাপে, নির্যাতিত প্রভৃতি বিভিন্ন
অবস্থায় দেহ ত্যাগ করে। কিন্তু ভগবানের
তপস্যা বা ব্রত সাধন করতে করতে দেহ
ত্যাগ করেন কারা?
যারা অত্যন্ত সৌভাগ্যবান। আমাদের জীবনে কখন কি
বিঘ্ন আছে-
তা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না, বা বুঝতে পারছি না।
বিঘ্ন গ্রস্ত হলে তবেই তো আমরা বুঝতে পারি- “হায়, আমার কি দশা হল!” হয় তো জীবনে অনেক দুর্ঘটনা ছিল, অনেকবার ট্রেনে চড়া হয়েছে, কিন্তু সেই অবশ্যম্ভাবী
দটিনাগুলি ঘটেনি। তখন তো আমরা ভুলেও চিন্তা করব না যে, আমরা আজ দুর্দশা থেকে
মুক্ত হয়েছি। কেননা আমাদের দৃষ্টির অন্তরালেই আমরা দুর্দৈব থেকে রক্ষা পেয়েছি।
হরিনাম
জপ, ভগবৎ কথা শ্রবণ, সাধু সেবা, শ্রীবিগ্রহ পূজা, আরতি দর্শন, বার ব্রত উদযাপনের ফলে আমরা দুর্দৈব
থেকে রক্ষা পাই। এটি মিথ্যা নয়।
আপনার স্বামী নৃসিংহ-চতুর্দশী ব্রত পালন করেই দেহরক্ষা করেছেন। তার সমস্ত বিঘ্ন দূর হয়েছে এবং তার দীর্ঘ আয়ু কেন, তিনি অনন্ত আয়ু গ্রহণ করে বৈকুণ্ঠে পরমানন্দে বিরাজ করছেন। এই জড় ব্রহ্মাণ্ডে নানাবিধ উদ্বেগ উৎকণ্ঠার মধ্যে থেকে আয়ুবৃদ্ধিতে কাজ কি, বৈকুণ্ঠ জগতে নিত্য জীবনে ফিরে যাওয়াই তো কর্তব্য।
মৃত্যু কিভাবে হয় জানতে এখানে ক্লিক করুন
যে
কোনও ভক্তই মনের
কামনা বাসনা থাকে,
ভগবৎ চিন্তা করতে করতে, ভগবৎ ব্রত সাধন করতে
করতে এই জড় জাগতিক সকল চিন্তা বাদ দিয়ে
সরাসরি বৈকুণ্ঠ জগতে চলে যেতে। অনেকে কামনা করলেও সেই ভাগ্য হয় না, অথচ আপনার স্বামীর সেই
ভাগ্য অনায়াসে লাভ হয়েছে। অতএব তার সহধর্মিণী রূপে আপনারও কর্তব্য এই কুণ্ঠাময়
জগতে বেশি চিন্তা না করে ভগবৎ পাদপদ্মে মতি স্থির রাখা।
আরোও জানুনঃ
পিঠের উপরে ব্যথা প্রতিরোধ ও চিকিৎসা←এখানে চাপ দিন
শ্বাস নেওয়ার সময় বুক ও পিঠ ব্যথা←এখানে চাপ দিন
কাঁধ এবং বাহুতে ব্যথার কারণ ও পরামর্শ←এখানে চাপ দিন
প্রশ্ন ২। নীলাচলপুরীধামে শারদ উৎসবের এক নির্দিষ্ট দিনে মাঝরাতে গোপনে বিমলাদেবীর মন্দিরের দরজা বন্ধ করে মেষ বলি দেওয়া হয় কেন? (আমি কলকাতা থেকে প্রশ্ন করছি)
উত্তরঃ
বিমলাদেবী শ্রীজগন্নাথের মহাপ্রসাদ সেবন করেন। তিনি হচ্ছেন দুর্গা।
জগন্নাথের
ভক্তের কাছে তিনি যোগমায়ারূপে এবং অভক্তের কাছে মহামায়া রূপে প্রকাশিতা। তামসিক উপাসকেরা
সেই বিমলাদেবীকে উগ্ররূপা জ্ঞানে সারা বছরের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট দিনে সবার
অলক্ষ্যে দেবীকে উগ্রতারা রূপে সাজিয়ে পাঠা বলি দিয়ে থাকে। চক্ৰবেড়ের কোনও দ্বার
দিয়েও তারা প্রবেশ করতে পারে না। কেবলমাত্র পশ্চিম
প্রাচীরের একটি সুড়ঙ্গ পথে গোপনে আমিষ প্রবেশ
করিয়েই সেই পথে বের হয়ে যায়। তারপর মন্দিরের সবকিছু
ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়। পিশাচ সুলভ তান্ত্রিক
রক্ত-মাংসখেকো অভক্ত
বামুনেরা এভাবে মহামায়া উগ্রতারার উপাসনা করে
নিজেদের তামসিক প্রথাটিকে বজায় রাখার অনুমোদন পেয়ে এসেছে।
আরোও জানুনঃ
ব্রত ও তিথিঃ দ্বিতীয় অংশ এখানে ক্লিক করুন
শ্রাদ্ধ ও কুসংস্কারঃ বিভিন্ন প্রশ্ন ও যুক্তি এখানে ক্লিক করুন
তুলসী মাহাত্ম্য তুলসী কাষ্ঠমালা ধারণ বিধি এখানে ক্লিক করুন
যজ্ঞে পশু বলি দেওয়ার যে রীতি তা এই যুগে কতটুকু প্রযোজ্য এখানে ক্লিক করুন
বিমলাদেবী ও মহাদেব শ্রীজগন্নাথের মহাপ্রসাদে প্রীত হলেও তাদের পিশাচ ও রাক্ষস শ্রেণীর অনুচর অনুচ্রীর রক্তমাংস ভক্ষ্ণের বিশেষ প্রথা ভিত্তিক কৌশল ছাড়তে পারে না।
প্রশ্ন ৩। দুর্গাপূজা সারা দেশে
এত বড় উৎসব কেন?
উত্তরঃ ভগবতী দূর্গার প্রতি সেটি ছিল ভগবানের আশীর্বাদ। যশোদার
কন্যারুপে জন্মগ্রহণ করা, দেবকীর গর্ভস্থ
অনন্তদেবকে আকর্ষণ করে রেহিণীতে স্থাপন করে, কংসকে
বিভ্রান্ত
করা, এ সমস্তই ভগবানের নির্দেশে
তিনি সম্পদন তে ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাকে বলেছিলেন, জগতের ভোগাকাঙক্ষী মানুষদের জড়বানা
পূর্ণ করতে তোমার ক্ষমতা সর্বশ্রেষ্ঠ
বলে মানুষেরা পশুবলি দিয়ে এবং বিভিন্ন রকমের উপকরণ দিয়ে মহা সমারোহে তোমার পূজা করবে।
পৃথিবীতে বিভিন্ন স্থানে লোকেরা তোমার দূর্গা, ভদ্রকালী, বিজয়া, বৈষ্ণবী, কুমুদা, চণ্ডিকা, কৃষ্ণা, মাধবী, কন্যাকা, মায়া, নারায়ণী, ঈসানী, শারদা, অম্বিকা প্রভৃতি নামকরণ
করবে। (ভাগবত ১০/২/১০-১২) যারা পারমার্থিক উন্নতিতে
আগ্রহী নয়,
কেবল এই জগতে জড় সুখভোগের প্রতি আগ্রহশীল, তারা মায়াদেবীর পূজা
করে। সেই মায়াদেবী বারাণসীতে দুর্গা, অবন্তীতে ভদ্রকালী, উৎকলে বিজয়া, কোলাপুরে বৈষ্ণবী, মুম্বাইতে অম্বিকা, কামরূপে চণ্ডিকা, উত্তরভারতে শারদা, কন্যাকুমারিকায় কন্যকা- এভাবে বিভিন্ন স্থানে
বিভিন্ন নামে পূজিতা হচ্ছেন।
প্রশ্ন ৪। ভগবান রামচন্দ্র কেন
দুর্গাপূজা করেছিলেন?
উত্তরঃ
মূল রামায়ণে কোথাও শ্রীরামচন্দ্রের দুর্গাপূজার কথার উল্লেখই নেই। পঞ্চদশ
শতাব্দীতে রাজশাহী জেলার তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণের সভাকবি ছিলেন কৃত্তিবাস
ওঝা। তিনিই বাংলা পয়ারে রামায়ণের অল্পকিছু বর্ণনা দিয়েই তাতে দুর্গাপূজা বিষয়টিও যুক্ত করে দিয়েছেন।
প্রশ্ন ৫। আত্মীয় স্বজনদের কাছে
গয়াধামে যেতে বাধা আসছে তার বলছেন, যাদের পূর্বপুরুষেরা গয়াধাম দর্শন করেনি, তাদের বংশের কেউ গয়া
যাওয়া ঠিক নয়। এই রকম কথা কি যুক্তিযুক্ত?
উত্তর।
এ কথার কোনও যুক্তি নেই। গয়াধামে শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুর পিতৃপিণ্ড দনস্থলী শ্রীবিষ্ণুপাদ চিহ্ন, সীতাদেবীর শ্বশুর দশরথের
উদ্দেশ্যে পিণ্ডদানস্থলী ইত্যাদি দর্শন করলে পিতৃপুরুষেরা সুখী বৈ অসুখী হন না।
প্রশ্ন ৬। যমরাজকে তার বোন যমুনা কার্তিকী শুক্লা দ্বিতীয়াতে ভাইফোঁটা দিয়েছিলেন। কৃষ্ণলীলায় এরকম কোনও ভাইফোঁটা অনুষ্ঠান আছে কি ?
উত্তরঃ যমুনার একটি স্থান কালীদহ নামে পরিচিত। সেখানে
কার্তিকী শুক্লা দ্বিতীয়ায় সকালবেলায় শ্রীমতী
রাধারাণী সহ অন্যান্য গোপীরা স্নান করছিলেন। রাধারাণী শুনলেন সেদিন ভাইফোঁটা
উৎসব। কৃষ্ণের জ্যাঠামশাই উপানন্দের কন্যা সুনন্দা সেদিন কৃষ্ণ ও বলরামকে সুন্দর করে
সাজিয়ে তাদের ললাটে চন্দনের ফোটা দিয়ে নানাবিধ মিষ্টান্নাদি ভোজন করিয়েছেন।
কৃষ্ণ-বলরামও বোন সুনন্দাকে নতুন বস্ত্র ও অলংকার দান করেছেন।
একথা শুনে রাধারাণীও তাঁর দাদা শ্রীদামকে চন্দন ফোটা দিয়ে মিষ্টান্নাদি ভোজন করিয়ে প্রণাম করলেন এবং শ্রীদাম বোন রাধাকে বস্ত্র অলংকার
নিবেদন করলেন। এভাবে ব্রজের সমস্ত বোনেরা ভাইদের কপালে ফোঁটা দিতে লাগল।
প্রশ্ন ৭। একাদশী কিভাবে পালন করতে
হবে ?
উত্তর
: একাদশী ব্রত দিনে ভোরে উঠে শুচি শুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির কাছে প্রার্থনা করতে হবে, হে কৃষ্ণ, আজ এই একাদশী ব্রত যাতে
শুদ্ধভাবে পালন করতে পারি,
তুমি কৃপা করো।
কোনও
শস্য দানা আহার করা চলবে না। চাল, আটা,
ছোলা, বা ডাল জাতীয়, সরষে তেল ইত্যাদি
সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাত্রি জাগরণ করে হরিবাসরে হরিকথা আলোচনা গান কীর্তন করে
অতিবাহিত করা কর্তব্য। গায়ে তেল মাখা উচিত নয়, সাবান দেওয়াও নয়। ইন্দ্রিয় সংযম ও
আত্মসমীক্ষা,
আত্মসংশোধন ও কৃষ্ণভক্তি
বর্ধনের জন্য ভগবানের একাদশী তিথিরূপে প্রকাশিত দিনটি নির্ধারিত হয়। পরদিন একটি
নির্দিষ্ট পারণ সময় থাকে সেই সময়ের মধ্যে শ্রীহরির পূজার পর শস্যজাতীয় কোন
প্রসাদ সবাই মিলে গ্রহণ করতে হয়।
আরোও জানুনঃ
শিশু ও নবজাতকদের মধ্যে ১০ রোগ←এখানে চাপ দিন
শিশুর ডায়রিয়া প্রতিরোধ, চিকিৎসা←এখানে চাপ দিন
প্রিয় প্রশ্নদাতা আমরা ইতিমধ্যে একাদশী পালন নিয়ে বিস্তারিত পোস্ট
করেছি আপনি এখানে ক্লিক করে দেখে নিতে পারেন।
প্রশ্ন ৮। দীক্ষা নেওয়ার পর বৈষ্ণবমতে বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা করতে এবং আত্মীয়দের বাড়িতে কোনও অনুষ্ঠানে নিরামিষ আহার করতে পারব কি ?
উত্তরঃ
দেবদেবীকে পরম বৈষ্ণব-রূপে দর্শন করে কৃষ্ণপ্রসাদ নিবেদন করবেন, এবং পূজা অনুষ্ঠানের পর
আপনি সেই কৃষ্ণপ্রসাদই আহার করবেন।
প্রশ্ন ৯। আমিষভোজী পুরোহিত কি সার্বজনীন মহোৎসবে রাধাকৃষ্ণ বা গৌরনিতাই বিগ্রহ স্থাপনাদি করতে পারে?
উত্তরঃ
না, আমিষভোজীরা ভগবদ্ বিগ্রহ
স্থাপনের আদৌ অধিকারী নয়।
প্রশ্ন ১০। প্রসাদভোজী বৈষ্ণবের দেহত্যাগের পর শ্রাদ্ধ অনুষ্ঠান কতদিনে করতে হয় ?
উত্তরঃ সাধারণত ১১ দিনের দিন মহাপ্রসাদ দারা
পরলোকগতবৈষ্ণবের উদ্দেশ্যে পিণ্ড দান করতে হয়। বিশেষত বৈষ্ণবগণ হরিনাম গ্রহণ ফলে
নিত্য শুচি যে কোনও দিন মহাপ্রসাদ দিয়ে শ্রাদ্ধ করতে পারে। তা-ই
বৈষ্ণব শ্রাদ্ধ।
প্রশ্ন ১১। বসন্তকালে হোলি উৎসব কি? হোলির তাৎপর্য কি? কেন আবীর অন্যের গায়ে ছিটানো হয়? শ্রীকৃষ্ণ কেন এইরূপ উৎসব করলেন?
উত্তর
: ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তার অন্তরঙ্গা শক্তিবর্গের সঙ্গে আনন্দ কৌতূক করার জন্য হোলাহুলি বা হোলি উৎসব করেছিলেন।
ভগবান এবং তার পার্ষদগন সর্বদা আনন্দময় লীলাবিলাসে রয়েছেন। এইরূপ কথা
স্মরণ করে যে-কোন মানুষ ভগবানের সেই অপ্রাকৃত জগতের
প্রতি আকৃষ্ট হতে পারে,
তার লীলাবিলাসের প্রতি আকৃষ্ট
হতে পারে। যেহেতু আমরা
সকলে আনন্দ চাই,
প্রমোদ চাই, কিন্তু আমাদের মতো
বদ্ধজীবের আমোদ-প্রমোদ কৃষ্ণ-বহির্মুখ বা কৃষ্ণসেবানন্দ-বিমুখ
হওয়ার ফলে সেই আমোদ প্রনোদ হারিয়ে যায় কালের
স্রোতে।
ভগবানের
সঙ্গে যে আমোদ প্রমোদ, তা নিত্যধামে নিতাই চলছে। কেবলমাত্র ভৌম
বৃন্দাবন বিলাসে বসন্তকালে হোলি উৎসব প্রকাশমান হয়েছিল বলে লোকে সেই দিনক্ষণ স্মরণে হোলি বা রং খেলার দিন
হিসেবে ধার্য করেছে।
তাই
এইসব উৎসবের তাৎপর্য হচ্ছে,
যেন তেন প্রকারেন
কৃষ্ণভজনের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া, কৃষ্ণসেবা তথা কৃষ্ণভাবনামৃতে আকৃষ্ট হওয়ার শিক্ষা লাভ করা।
কিন্তু
আমরা যেভাবে যার তার গায়ে রং নিক্ষেপ করে যে মজা করে চলি ওটা কারও আনন্দের উদ্রেক
করে না, কেবল ভয়ের উদ্রেক করে।
রঙের ভয়ে লোকে বাইরে বেরোতে চায় না। যদি বেরোতে হয় তখন আজেবাজে ময়লা
কাপড় পরে বেরোয়। আন্তর্জাতিক
কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘে লোকের বিরক্তিজনক রং খেলা হয় না। যদি কারও শখ থাকে তবে শুদ্ধ আবীর শ্ৰীমন্
মহাপ্রভু ও নিত্যানন্দ প্রভুর চরণে ভক্তিভরে নিবেদন করতে পারে মাত্র।
প্রশ্ন ১২। এক প্রকার গোষ্ঠী একাদশীর দিনে নির্জলা ব্রত আর রাতে আমিষ বাজনাদি করে, কেউবা পিঠেপুলি ভোজন করে। তার কি ফল ?
উত্তরঃ একাদশী লঙ্ঘনে বিরুদ্ধ ফল লাভ হয়। একাদশী ব্রতের বিরুদ্ধাচরণ হেতু নানাবিধ দুর্ভাগ্যজনক
নারকীয় ফল সঞ্চিত হয়। সুযোগ বুঝে সেই গোষ্ঠীর ব্যক্তিদের
সাবধান করে দেওয়া আপনার কর্তব্য।
প্রশ্ন ১৩ । একাদশীর দিনে শ্রীকৃষ্ণকে অন্ন ভোগ দেওয়া হয় কেন? কেবল আন্যকল্প ভোগ দিলে ক্ষতি কি? শ্রীকৃষ্ণ পাপপুণ্যের উর্ধ্বে হলেও মা যশোদা অনেক নিয়ম, মন্ত্রাদি করে কৃষ্ণকে রক্ষা করবার চেষ্টা করতেন।
উত্তর
: ভগবানকে একাদশী কিংবা অন্য সব দিনেই অন্ন-ব্যঞ্জন ফলমূল ভোগ নিবেদন করার বিধি
রয়েছে। সাধারণ গৃহস্থ ব্যক্তিরা একাদশীতে কেবল একাদশী ভোগ নিবেদন করে থাকেন।
তাতেও ক্ষতি বা অসুবিধা নেই।
বালক
নিমাই একাদশীর দিন জগদীশ পণ্ডিতের বাড়ীতে বিষ্ণুযজ্ঞে গিয়ে অন্নভোজনের জন্যে কান্নাকাটি
শুরু করেন। তখন বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে রান্না করা অন্নব্যঞ্জন বিষ্ণুযজ্ঞ সম্পাদনের
পূর্বেই জগদীশ পণ্ডিত নিমাইকে প্রীতিভরে ভোজন করাতে লাগলেন। কারণ
তিনি জেনেছিলেন যে,
নিমাই স্বয়ংশ্রীবিষ্ণু এভাবে ভগবান একাদশীতে
অন্ন গ্রহণ করেছিলেন।
প্রশ্ন ১৪। পুরুষোত্তম মাসে মৌনব্রত পালনের কোনও নিয়ম আছে কিনা?
উত্তরঃ মৌনব্রত বলতে কারও সঙ্গে কোন কথা না বলে চুপচাপ বোবার মতো থাকাকে বোঝায় না। অন্যান্য গ্রাম্য বিষয় বার্তা বর্জন করে
বেশি সংখ্যক হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করতে বলা হয়েছে। তাতে ভগবান পুরুষোত্তম প্রসন্ন হন।
প্রশ্ন ১৫। বহুলাষ্টমী কি?
উত্তরঃ কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের
অষ্টমী তিথি
‘বহুলাষ্টমী’ নামে পরিচিত।
এই
তিথিতে ব্রজে উৎপাত-সৃষ্টিকারী বৃষরূপী
অরিষ্টাসুরকে শ্রীকৃষ্ণ বধ করেন। শ্রীরাধারাণী বৃষবধের
প্রায়শ্চিত্তস্বরুপ সর্বতীর্থে স্নান করা উচিত বলে জ্ঞাপন করে শ্রীকৃষ্ণ বামচরণের গোড়ালীর আঘাতে এক কুণ্ড প্রকাশ করেন।
তা শ্যামকুণ্ড নামে বিদিত। মধ্যরাত্রে শ্রীকৃষ্ণর
আহ্বানে পৃথিবীর সমস্ত তীর্থ
নিজ নিজ রূপ ধারণ করে এই স্থানে আগমন করেন। ক্ষীরসমুদ্র, লবণ সমুদ্র, পুষ্কর, প্রয়াগ ইত্যাদি বহু
তীর্থ এসে শ্রীকৃষ্ণ পাদপদ্মো প্রণতি নিবেদন করেছিলেন। তাই এই তিথিকে বহুলাষ্টমী বলা হয়।
প্রশ্ন ১৬। একাদশী করতে করতে মাঝে মাঝে যদি কোন কোনও একাদশী ব্রত না করা হয় তবে তার ফল কি হবে?
উত্তর:
একাদশী ব্রত ফলে পর্বতপ্রমাণ পাপরাশি নষ্ট হয়। যে যে একাদশীব্রত পালন করা হচ্ছে না, সে ক্ষেত্রে নতুন করে
অসংখ্য পাপরাশি যুক্ত হয়।
প্রশ্ন ১৭। একাদশী ব্রত পালন করলে কি লাভ হয় ? না করলে কি অপরাধ হয়?
উত্তর
: নারদীয় পুরাণে বলা হয়েছে-
যানি কানি চ পাপানি ব্রহ্মহত্যা সমানি চ ।
অন্নমাশ্রিত্য তিষ্ঠন্তি সংপ্রাপ্তে
হরিবাসরে ॥
“হরিবাসর বা একাদশী
সমাগত হলে ব্রহ্মহত্যাদি সমস্ত পাপ অন্ন শস্য মধ্যে অবস্থান করে, সেই জন্যে ঐ দিন অন্ন
শস্যাদি আহার করলে যাবতীয় পাপও গ্রহণ করা হয়ে থাকে।”
তাই
একাদশীতে মঙ্গলাকাঙক্ষী ব্যক্তিরা শস্য জাতীয় খাবার গ্রহণ করেন না।
স্কন্দ পুরাণে পার্বতীদেবীকে মহাদেব বলছেন- ‘একাদশীতে যে মানুষ অন্ন ভক্ষণ করে যমদূতেরা তার মুখে
তপ্ত লোহার অস্ত্র নিক্ষেপের
ব্যবস্থা করে রাখে।
একাদশী
ব্রত পালন করলে জীবনের অসংখ্য জানা-অজানা পাপকর্মের ফল ক্ষয় হয়ে যায় এবং ভগবান শ্রীহরি যিনি
স্বয়ং একাদশী তিথি রূপে প্রকাশিত হয়েছেন তিনি ব্রতকারীর প্রতি প্রীত হন।
আরোও জানুনঃ
হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসাঃ এখানে ক্লিক করুন
শিশু ও নবজাতকদের মধ্যে 10 রোগঃ এখানে ক্লিক করুন
প্রশ্ন ১৮। শ্রীশ্রীরাধামাধব কোন
দিন কি রঙের পোশাক পরিধান করেন?
উত্তর : সাধারণত রবিবারে লাল, সোনালী কিংবা চুনী রঙের। সোমবারে সাদা, রূপালী বা মুক্তা রঙের। মঙ্গলবারে লাল, গোলাপী বা প্রবাল রঙের। বুধবারে সবুজ বা পান্না রঙের। বৃহস্পতিবারে হলুদ, কমলা কিংবা পীতাভ নীলা রঙের। শুক্রবারে সাদা, রূপালী, যে কোনও রঙের কিংবা বহুবর্ণ কিংবা হীরার রঙের। শনিবারে নীল, বেগুনী, কালো কিংবা নীলাভ নীলা রঙের পোশাক পরানো হয়। একাদশাতে লাল কিংবা গোলাপী রঙের।
প্রশ্ন ১৯। মলমাসে
আমাদের কি করা উচিত?
উত্তর:
বেশী করে হরিনাম জপ ও কীর্তন করা উচিত।
প্রশ্ন ২০। পুষ্যাভিষেক উৎসব কি?
উত্তর
: বিশেষত নীলাচলপুরী ধামে পৌষমাসের পূর্ণিমা তিথিতে একশো আটাট তামার কলসীভর্তি
গব্য ঘূত দিয়ে শ্রীজগন্নাথদেবকে স্নান করানো হয়। এই অনুষ্ঠানকে পুষ্যাভিষেক বলা হয়।
অভিষেক অনুষ্ঠানের পর জগন্নাথকে রাজবেশে সজিত করানো হয়। এইদিন জগন্নাথকে
ঘি-ভাত, মুগডাল, ননী মিশ্রি সরবৎ, পিঠা ও পায়সান্নাদি ভোগ নিবেদন করা হয়।
এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার যদি
কোন মতামত বা জিজ্ঞাসা থেকে বা কোন বিষয়ে জানতে চান তাহলে কমেন্ট করে জানাতে দ্বিধাবোধ
করবেন না।
উপরিক্ত আলোচনা আপনার কাছে ভালো লাগলে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে (ফেসবুক, টিউটার, হোয়াটেপ্স ইত্যাদি) সেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন