যে ব্যক্তি কায়, মন, বাক্য, প্রাণ ও ধন দ্বারা শ্রীগুরুদেবের সন্তোষ বিধান করেন, তিনি পরমা গতি লাভ করেন অর্থাৎ বৈকুণ্ঠে গমন করেন। (হরিভক্তিবিলাস ১/৬১/)
শিষ্যেরা যখন ভগবদ্ভক্তি চর্চা করে, তখন মাঝে মাঝে তারা ভাবে, “আমার গুরুদেবের জন্য আমি কত কিছু সেবা করছি! তার পোশাক পরিচ্ছদ পরিস্কার করে দিচ্ছি' কিংবা তার কথায় আমি গ্রন্থ বিতরণ করছি' অথবা তার নির্দেশে আমি মঠ মন্দির দেখাশুনা করছি কিংবা গুরুদেবের জন্য আমি এটা করছি, সেটা করছি এসব করা সত্ত্বেও আমাকে আরও কাজ করতে বলেন। আমার এত করে কি লাভ! কেন এত করব? এত সবকরে আমি কি পাচ্ছি?” কিন্তু তারা বোঝে না যে, ভগবদ্ভক্তিমূলক সেবার আসল উদ্দেশ্য হল আমাদের নিজেদেরকে কিভাবে পরিশুদ্ধ করে ভগবানের শ্রীচরণে আত্মসমর্পন করতে পারি।
আরোও পড়ুনঃ
সদগুরুর লক্ষণ ও যোগ্যতা এখানে ক্লিক করুন
ব্রত ও তিথি কি এখানে ক্লিক করুন
শ্রাদ্ধ ও কুসংস্কারঃ বিভিন্ন প্রশ্ন ও যুক্তি এখানে ক্লিক করুন
পাপপরিত্রাণ : স্বর্গ - নরক এখানে ক্লিক করুন
দেব দেবীপূজার রহস্য এখানে ক্লিক করুন
নিজেদের গড়ে তোলার উদ্দেশ্যই শিষ্যদের ভগবদ্ভক্তিমূলক সেবা অনুশীলন করা উচিত। একমাত্র গুরুদেবই জানেন কিভাবে ভগবদ্ভক্তি অনুশীলন করতে হয়। তাই শ্রীল প্রভুপাদ আমাদের আত্ম উপলব্ধির জন্য সর্বদা ভগবৎ সেবায় নিয়োজিত করতেন। বাস্তবক্ষেত্রে ভগবদ্ভক্তিমূলক সেবা অনুশীলনের মাধ্যমে আমাদের তা শিখতে হয়। এইভাবেই আমরা পরিশুদ্ধ হয়ে উঠি, আর সেবা উপলব্ধি নিয়ে সবকিছু বুঝতে শিখি কিন্তু কনিষ্ট শিষ্যরা মনে করে, “মন্দির থেকে কেন আমাকে এত কিছু করতে বলা হচ্ছে? অনেক কিছুই আমি করে দিয়েছি। কত জিনিস ত্যাগ করেছি। আর বেশি কিছু আমাকে নিশ্চয়ই করতে হবে না। মাঝে মাঝে শিষ্যরা মন্দির ত্যাগ করে চলে যায় এবং তারা ভাবে কত বৎসর তো মন্দিরের জন্য আমি কাজ করলাম কিন্তু কিছুই তো পেলাম না কিন্তু তারা বোঝে না সেবা করার প্রকৃত উদ্দেশ্যটা কী। তাই শ্রীল জীব গোস্বামী ভক্তিসন্দর্ভে উল্লেখ করেছেন-
নিষ্কপট শিষ্যগণের প্রীতির সহিত শ্রীগুরুদেবের সেবা করা উচিত,কেননা গুরুসেবার মাধ্যমে ভগবানকে লাভ করার একমাত্র উপায় কিন্তু যারা কপট ও অহঙ্কারী তারা গুরুসেবার অভিনয় করেও ভগবানের কৃপা লাভ করতে পারে না। (ভক্তিসন্দর্ভ ২০৯)
আরোও জানুনঃ
চুলপড়ার
১৫ টিকারণঃ এখানে ক্লিক করুন
হাঁপানি
থেকে মুক্তির উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন
উচ্চরক্ত
চাপ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসাঃ এখানে ক্লিক করুন
শিষ্যরা গুরুর সান্নিধ্যে আসে, আর তিনি যদি বাসনপত্র ধুতে, ঘর পরিস্কার করতে কিংবা গ্রন্থ বিতরণ করতে বলেন তাহলে তা-ই তাদের করা উচিত। আর এই ভাবেই অর্জন করতে হয় ভগবদ্ভক্তি অনুশীলনের মানসিকতা। পরমেশ্বর ভগবানকে বলা হয়েছে ‘ভাবগ্রাহী জনার্দন'। ভগবদ্ভক্ত যা নিবেদন করে তিনি তা গ্রহণ না করে বরং ভক্তের ভক্তিমূলক ভাব তথা মানসিকতাকেই মর্যাদা দিয়ে থাকেন। যদি কেউ সেবা নিবেদনের সাথে মনে করে, “আমি শ্রীকৃষ্ণকে কতকিছু দিচ্ছি” তবে বুঝতে হবে সে যথার্থ ভাব বা মানসিকতা অর্জন করতে পারেনি। | শিষ্য যদি মনে করে, গুরু আমাকে চাইছেন কিংবা ভাবে ‘আমি তো গুরুকে কত কিছুই না দিয়েছি, বা তা থেকে জাগতিক কি লাভ আমার হবে, তা হলে বুঝতে হবে লাভ, প্রতিষ্ঠা ও পুজার আকাঙ্ক্ষায় শিষ্য বিভ্রান্ত হচ্ছে। যথার্থ ভাব তথা মানসিকতা রক্ষা করতে পারছে না।
শ্রীল প্রভুপাদ বলতেন যে, শিষ্যেরই দায়িত্ব কখনও কোন অসুবিধায় পড়লে দীক্ষাগুরুর সাহায্য নেওয়া। কেননা জড়-জাগতিক বন্ধন মোচনের জন্য গুরুদেবই একমাত্র যোগ্য কর্ণধার। সে সম্পর্কে শ্রীমদ্ভগবতে বলা হয়েছে-
নৃদেহমাদ্যং সুলভং সুদুর্লভং
প্লবং সুকল্পং গুরুকর্ণধরিম্ ।
ময়ানুকূলেন নভস্বতেরিতং
পুমান ভবাদ্ধিং ন তরেৎ স আত্মহা।।
এই সুদুর্লভ নরদেহটি একটি নৌকা স্বরূপ এবং গুরুদেবই এর কর্ণধার । কৃষ্ণ কৃপারূপ অনুকূল বায়ুর দ্বারা চালিত এইরূপ নৌকাখানি প্রাপ্ত হয়েও যিনি এই সংসার সমুদ্র পার হতে চেষ্টা করেনা, তিনি আত্মঘাতী । (ভাগবত ১১/২০/১৭)
বহু নিম্নযোনি অতিক্রম করার পর যে মানব জীবন লাভ হয়েছে, তা এমন ভাবে সৃষ্টি হয়েছে যে, তার দ্বারা জীবনের সর্বোত্তম সিদ্ধি লাভ করা যায়। মানব জীবনের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবানের সেবা করা এবং সদ্গুরু হচ্ছেন সেই সেবার যথার্থ নির্দেশক। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের অহৈতুকী কৃপাকে অনুকূল বায়ুর সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে যা, দেহরূপ তরণীকে ভগবদ্ধামে পৌছাতে সাহায্য করে। বৈদিক গ্রন্থে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের যে নির্দেশাবলী রয়েছে তা তিনি সদ্গুরুর মাধ্যমে প্রকাশ করেন এবং তার নিষ্ঠাবান ভক্তের হৃদয়ে অবস্থান করে তিনি তাকে উৎসাহিত করেন, সতর্ক করেন এবং রক্ষা করেন। ভগবানের এই প্রকার কৃপাময় নির্দেশনা একজন নিষ্ঠাবান ভক্তকে দ্রুতগতিতে ভগবদ্ধামের পথে। পরিচালিত করে। কেউ যখন হৃদয়ঙ্গম করতে পারে না যে, এই মানব জীবনই হচ্ছে ভব সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার একমাত্র উপযুক্ত নৌকা, সে গুরু কর্ণধার গ্রহণ করার প্রয়োজন মনে করে না এবং ভগবানের কৃপারূপ অনুকূল বায়ুও গ্রহণ করে । তার মানব জীবনের লক্ষ্যে পৌছানোর কোন রকম সম্ভাবনা নেই। তার নিজের স্বার্থের প্রতিকূল কার্যকলাপের মাধ্যমে সে তখন ধীরে ধীরে আত্মঘাতী
হয়।
অনেক সময় দেখা যায় যে, শিষ্যরা স্বেচ্ছায় তাদের গুরুদেব এবং শ্রীকৃষ্ণের কাছে প্রতিজ্ঞা পালনে অবহেলা করছে এবং জল্পনা-কল্পনার মাধ্যমে তারা ক্রমেই পরম লক্ষ্য থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। এমনকি গুরুদেব যদিও কোন লোক মারফৎ চিঠি কিংবা ব্যক্তিগত সংযোগের মাধ্যমে শিষ্যকে সাহায্যে করতেএগিয়ে আসেন, তথাপি ঐ সব শিষ্যরা প্রায়ই প্রসারিত ফলস্বরূপ হাতটিকে জাপটে ধরে না এবং মায়ার কবল থেকে নিজেদেরকে তুলে আনতে দেয় না।
শ্রীল প্রভুপাদ শ্রীমদ্ভাগবতের ৩/২৪/১৩ শ্লোকের তাৎপর্যে উল্লেখ করেছেন যে, পুত্র অথবা শিষ্যের কর্তব্য হচ্ছে নির্দ্বিধায় গুরু বা পিতার আদেশ পালন করা। পিতা অথবা গুরুদেব যে আদেশই দেন না কেন, কোন রকম তর্ক-বিতর্ক না করে, যে আজ্ঞা দেয় তা স্বীকার করে নিতে হবে। শিষ্য অথবা পুত্রের কখনও এটা ঠিক নয়, আমি এটা পালন করতে পারব না এই রকম বলার কোন অধিকার নেই। সে যখন তা বলে, তখন তার অধঃপতন হয়। পিতা বা গুরুদেবের আদেশ নিৰ্দ্ধিধায় “হ্যা করব” বলে তৎক্ষণাৎ পালন করা উচিত। সেখানে কোন তর্ক বিতর্ক হতে পারে না। সেটাই হচ্ছে পিতা বা গুরুদেবের প্রকৃত সেবা। শ্রীল বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ঠাকুর উল্লেখ করেছেন যে, গুরুদেবের আদেশ হচ্ছে শিষ্যের জীবন এবং আত্মা সদৃশ। মানুষ যেমন তার দেহ থেকে আত্মাকে পৃথক করতে পারেনা, তেমনই শিষ্য তার জীবন থেকে গুরুদেবের আদেশ বিচ্ছিন্ন করতে পারে না। শিষ্য যদি সেই ভাবে তার গুরুদেবের আদেশ পালন করে, তাহলে অবশ্যই সে সিদ্ধিলাভ করবে। সেই কথা উপনিষদে প্রতিপন্ন হয়েছে।
আরোও জানুনঃ
চোখের ছানি হলে করনীয়: এখানে ক্লিক করুন
মস্তিষ্ক ঠিক ঠান্ডা রাখার উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন
পিঠ ব্যথা-কারণ সমূহ ও ঘরোয়া চিকিৎসা: এখানে ক্লিক করুন
এখানেই আজকের আলোচনা শেষ করছি। এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার
যদি কোন মতামত বা জিজ্ঞাসা থেকে বা কোন বিষয়ে জানতে চান তাহলে কমেন্ট করে জানাতে দ্বিধাবোধ
করবেন না।
উপরিক্ত আলোচনা আপনার কাছে ভালো
লাগলে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে (ফেসবুক,
টিউটার, হোয়াটেপ্স ইত্যাদি) সেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন