সদ্যগুরুর লক্ষণ ও গুরু হওয়ার যোগ্যতা সমূহ

গুরুর লক্ষণ ও যোগ্যতা

 পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কৃপা প্রাপ্ত গুরুদেবকে আমি সশ্রদ্ধ প্রণতি নিবেদন করি " পরম তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার জন্যে কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা শ্রীগুরুদেবের সেবার মাধ্যমে, তার কাছে আত্মসমর্পণ করা প্রতিটি শিষ্যের একমাত্র কর্তব্য।

তদ বিদ্ধি প্রণিপাতেন পরিপ্রশ্নেন সেবয়া

উপদেক্ষ্যন্তি তে জ্ঞানং জ্ঞানিনস্তত্ত্বদর্শিনঃ।।

সদ্গুরুর শরণাগত হয়ে তত্ত্বজ্ঞান লাভ করার চেষ্টা কর বিম্র চিত্তে তাকে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা কর এবং অকৃত্রিম সেবার দ্বারা তাঁকে সন্তুষ্ট কর; তাহলে সেই তন্দ্রষ্টা পুরুষ তোমাকে যথার্থ জ্ঞানোপদেশ দান করলেন। (গীতা /৩৪)

কিন্তু সদ্গুরুর কি লক্ষণ তা আমরা বৈদিক শাস্ত্র গ্রন্থ থেকে বুঝতে পারি

গুরুদেবের একটি প্রধান লক্ষণ হল এই যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যা বলেছেন গুরুদেবও ঠিক তাই বলেছেন। সেই জন্যই সদ্গুরু হচ্ছেন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের প্রতিনিধি অর্থাৎ গুরু হচ্ছেন একজন ডাকপিয়নের তো ডাকপিয়ন যেমন চিঠিপত্র এনে বাড়িতে পৌছে দেয়, ঠিক সেইভাবেই গুরু ভগবানের কাছ থেকে তাঁর দিব্য সংবাদ আমাদের কাছে পৌছে দেন। ডাকপিয়ন যদি চিঠিপত্র বাড়িতে নিয়ে গিয়ে সেগুলিকে খুলে চিঠিগুলির মধ্যে নিজের মতামত লিখে তারপর বিতরণ করে, তাহলে কেউই তার উপর খুশি হবে না বরং সেটা হবে অন্যায় এবং অবৈধ। তার কর্তব্য হচ্ছে চিঠির মধ্যে যেভাবে লেখা থাকতে ঠিক সেই ভাবেই প্রাপকের কাছে পৌছে দেওয়া। গুরুও ঠিক তদ্রুপ কৃষ্ণ যা বলেছেন তাই বদ্ধ জীবের কাছেপৌঁছে দেন।

আরোও জানুনঃ
তিলক ধারণের আবশ্যকতা  এখানে ক্লিক করুন
দীক্ষাকী : ভক্ত ও ভক্তিযোগ 
 এখানে ক্লিক করুন
গুরুরদায়িত্ব ও কর্তব্য 
 এখানে ক্লিক করুন
গুরু পুজাঃগুরুপুজার প্রয়োজনীয়তা 
 এখানে ক্লিক করুন
গুরু গ্রহণের প্রইয়োজনীয়তাঃ কেন গুরু গ্রহণ করব? 
 এখানে ক্লিক করুন

শ্রীল প্রভুপাদ বলেছেন যে, বদ্ধজীব তমসা বা অন্ধকারে আবদ্ধ হয়ে আছে, সেই জন্য তারা জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য জানে না। আর তারা এমন একজন গুরুকে গ্রহণ করে, যে সাধারণ মানুষকে প্রলোভনের দ্বারা বিপথগামী রে নিজের স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা করে। সম্পর্কে শাস্ত্রে বলা হয়েছে-

গুরবো বহবঃ সন্তি শিষ্যবিত্তাপহারকাঃ।

দুর্লভ: সদ্গুরুর্দেবি শিষ্যসত্তপহারকঃ।।

হে দেবী, (শিব পার্বতীকে বলেছেন) শিষ্যের বিত্ত অর্থাৎ ধন-সম্পদ অপহরণকারী বহু গুরু আছেন কিন্তু শিষ্যের সন্তাপ নাশক সদ্গুরু পাওয়া অত্যন্ত কঠিন। (পুরাণ বাক্য)

পরিচর্যা মোলাভলিপ্সু শিষ্যা গুরুর্ণ হি।

শিষ্যের নিকট হতে যিনি পরিচর্যা যশ লাভের আকাঙ্ক্ষা করেন, তিনি গুরু হবার যোগ্য নন।

স্নেহাদ্বা লোতো বাপি যো গৃহীয়া দীক্ষয়া।

তস্মিন্ গুরৌ সশিষ্যে তুদেবতাশাপ আপতে।

 স্নেহবশতঃ বা লোভের বশবর্তী হয়ে যে গুরু দীক্ষা দেন এবং ভালবাসার খাতিরে বা কোন জড় জাগতিক বস্তু লাভের আশায় যিনি দীক্ষা গ্রহণ করেন তারা উভয়েই দেবতার অভিশাপ প্রাপ্ত হন। (হরিভক্তিবিলাস /)

আরোও জানুনঃ
কাশি দূর করার উপায়: এখানে ক্লিক করুন
ঘুমনা আসার কারণ ও প্রতিকারঃ এখানে ক্লিক করুন
চুলকানি - চর্মরোগ উপশমঃ এখানে ক্লিক করুন

আবার অনেক সময় দেখা যায় যে, কোন ব্যক্তি কিছু যাদু দেখাতে পারে; যা বোকা লোকদের কাছে আশ্চর্যজনক। কোন কোন ক্ষেত্রে মূঢ় লোকেরা সেইসব জাদুর দ্বারা বিমোহিত হয়ে একজন অনুপযুক্ত ব্যক্তিকেই গুরুরূপে বরণ করে, কেননা সেই গুরু যো সিদ্ধি দ্বারা সোনা তৈরি করতে পারে। ধরণের শিষ্য স্বল্প বুদ্ধি সম্পন্ন। সে বিচার করতে পারে না যে, সোনা তৈরি করা গুরুর লক্ষণ কিনা। প্রকৃতপক্ষে একজন সদগুরুর লক্ষণ সম্পর্কে শাস্ত্রের দৃষ্টান্ত হচ্ছে-

কৃপাসিন্ধুঃ সুসংপূর্ণঃ সর্বসত্ত্বোপকারকঃ।

নিস্পৃহঃ সর্বতঃ সিদ্ধঃ সর্ববিদ্যাবিশারদঃ।।

সর্বসংশয় সংছেত্তাহনলসো শুরুরাহৃতঃ।।

একজন সদ্গুরু হবেন অপার কৃপাময়, সুসংপূর্ণ, সর্বপ্রকার সদ্গুণে বিভূষিত, সর্বজীবের হিতাকাক্ষী, নিষ্কাম, সর্বপ্রকারে সিদ্ধ, ভক্তিশাস্ত্রে পারদর্শী এবং শিষ্যের সবরকম সন্দেহ নিরসনে সমর্থ, এবং সতত ভগবানের সেবায় নিষ্ঠা পরায়ণ। (হরিভক্তিবিলাস /৩৫ শ্লোকধৃত বিষ্ণুস্মৃতি-বাচন)

পদ্মপুরাণে সদ্গুরুর লক্ষণ সম্বন্ধে বর্ণনা করে বলা হয়েছে-

মহাভাগবত শ্রেষ্ঠো ব্রাহ্মণণা বৈ গুরুণাম্।

সর্বেষামেব লোকানাম সৌ পূজ্যো যথা হরিঃ।।

মহাকুল প্রসূতোহপি সর্বজ্ঞেসূ দীক্ষিতঃ।।

সহস্র শাখাধ্যায়ী গুরুঃ স্যাদবৈষ্ণবঃ।।

গুরুকে অবশ্যই ভগবদ্ভক্তির সর্বোচ্চ স্তরে অধিষ্ঠিত হতে হবে। তিন প্রকার ভক্ত রয়েছেন এবং তাদের মধ্যে উত্তম অধিকারীকে গুরুরূপে বরণ করা কর্তব্য। উত্তম অধিকারী ভক্ত সর্বপ্রকার মানুষের গুরু হবার যোগ্য। (পদ্মপুরাণধৃত হরিভক্তিবলাস /৩৯-৪০)

আরোও জানুনঃ
চুলপড়ার ১৫ টিকারণঃ এখানে ক্লিক করুন
হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন
উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসাঃ এখানে ক্লিক করুন

কিন্তু যে শাস্ত্রের নির্দেশ অনুসারে আচরণ করে না, যার চরিত্র সন্দেহজনক ভগবদ্ভক্তি অনুশীলন করে না, অথবা ষড়রিপুর থেকে মুক্ত হতে পারেনি, সেরকম কোন মহা মুখকে কখনই গুরু বলে বরণ করা উচিত নয় জড় ইন্দ্রিয় সুখ উপভোগের টি বেগ যিনি দমন করতে সমর্প, তিনিই হচ্ছেন যথার্থ গুরু এবং তিনিই সমস্ত পৃথিবী জুড়ে শিষ্য গ্রহণ করতে পারেন

বাচোবেগং মনসঃ ক্রোধবেগ,

জিহ্বাবেগমুদরোগস্থ বেগম।

এতান বেগান যে বিষহেত ধীরঃ।

সৰ্বামপীমাং পৃথিবীং শিষ্যাৎ।।

যে সংযমী ব্যক্তি বাক্যের বেগ, ক্রোধের বেগ, জিহ্বার বেগ, মনে বেগ, উদর এবং উপস্থ ষড়বে দমন করতে সমর্থ, তিনি সমগ্র পৃথিবী গুরু হতে পারেন। (উপদেশামৃত ১ম শ্লোক)

কিবা বিপ্র, কিবা ন্যাসী, শূদ্রকেনে নয়

যেই কৃষ্ণতত্ত্ববেত্তা, সে-গুরুহয় ।।

যিনি কৃষ্ণবেত্তা তিনিইগুরুতা তিনি ব্রাহ্মণ হো, কিংবা সন্ন্যাসীই হো অথবা শূদ্রই হো, তাতে কিছু যায় আসে না। (চৈঃ চঃ মধ্য /১২৮)

ষটকর্মনিপুণো বিপ্রো মন্ত্রতন্ত্র বিশারদঃ।

অবৈষ্ণবো গুরুর্ণ স্যাদ্বৈষ্ণবঃ পচৌ গুরুঃ ।।

যজন, যাজন, অধ্যয়ন, অধ্যাপন, দান প্রতিগ্রহ- এই ছয়টি কমে পারদর্শী এবং মন্ত্রতন্ত্র বিশারদ ব্রাহ্মণ কখনও গুরু হতে পারেন না যদি তিনি শুদ্ধ কৃষ্ণভক্ত বা বৈষ্ণব না হন কিন্তু চণ্ডাল কূলে প্রকটিত হলেও কৃষ্ণ বা বিষ্ণুভক্তি পরায়ণ বৈষ্ণব, গুরু হবার যোগ্য। (হরিভক্তিবিলাস ধৃত পদ্মবচন)

গুরু গ্রহণের আগে স্থির নিশ্চিত হতে হবে যে, গুরু যথার্থই সৎ প্রকৃতির এবং পরম্পরা ধারায় অধিষ্ঠিত পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুদ্ধ ভক্ত কিনা, খনিকটা ভাবাবেগের উপর নির্ভর করে গুরু শিষ্যের সম্বন্ধ গড়ে ওঠে না, প্রকৃত সদ্গুরুর যথার্থ লক্ষণাদি বিচারের ভিত্তিতেই তা করতে হবে।

অনেক লো আছে যাদের দঢ় বিশ্বাস জন্মেছে যে, অমুক লোকটা সদ্গুরু কারণ তিনি তার ছবি থেকে ছাই বার করে লোকদের দেখাতে পারেন কিংবা হাওয়া থেকে রসগোল্লা তৈরি করে দিতে পারেন।

একবার এক বিখ্যাত জাদুকর মায়াপুর এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন যে, একদিন তথাকথিত ভূঁইফোড় অবতারের ভন্ডামি তিনি ধরে ফেলেছিলেন। আসলে লোকটা অবতার নয়, নিতান্তই এক জাদুকর মাত্র। জাদুকর মহাশয় সাধারণ মানুষের তথাকথিত অবতার লোকটির কাছে গিয়ে বললেন, “প্রভু হে, আমি একজন দুশ্চিন্তাগ্রস্থ রোগী, আশীর্বাদ করুন যাতে শান্তি পাই।তখন অবতারটি বাতাসে হাতখানি নেড়ে একটা রসগোল্লা এনে তাকে দিলেন। তখন যাদুকর মহাশয়ও তার হাতখানা বাতাসে নেড়ে একখানা স্যান্ডউইচ রুটি কোথা থেকে হাজির করে এনে বললেন, “আমিও ওরকম ভেল্কি দেখাতে পারি কিন্তু তা সত্ত্বেও শান্তি পাচ্ছি না। নিন এই স্যাণ্ডউইচ রুটিখানা।

জাদুকর মহাশয় তখন তাকে আড়ালে ডেকে নিয়ে গিয়ে বললেন, “এইসব করছেন কেন বলুন তো? শুধুই তো জাদুর খেলা দেখাচ্ছেন, অথচ নিজেকে একটা অবতার বলে জাহির করছেন। আমি তো অন্তত সভাবে জাদুকর বলেই খেলা দেখাই।

ভাওতাবাজ অবতারটি মিনতি করে বললেন, “কিছু মনে করবেন না, ভাই কাউকে বলবেন না। জানেন আমি কিছু ধর্ম প্রচার করে ভাল কাজ করতে চেস্টা করছি। এতে লোকে বেশ উৎসাহ পাচ্ছে। দয়া করে আমার কাজ ভণ্ডল করে দেবেন না।

আরোও জানুনঃ
চোখের ছানি হলে করনীয়: এখানে ক্লিক করুন
মানসিক চাপ, অশান্তি দূর করার উপায়: এখানে ক্লিক করুন
মস্তিষ্ক ঠিক ঠান্ডা রাখার উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন

এখন কলিযুগে এসব ব্যাপার চলছে। এই ধরণের জাদুকরদের উপর মানুষের বিশ্বাস আছে, কারণ তারা কিছু ভেল্কি দেখাতে পারে। ধরনের উঁইফোর গুরুদের কোনও পরম্পরাধারা থাকে না বা অন্য কোনও লক্ষণাদিও থাকে না। কেবল ভাবাবেগ বিচারেই তাদের সবাই মেনে নেয়।বেশ বেশ। লোকটা গুনীজন, নিশ্চয়ই অবতার।ভাবাবেগ থাকতেই পারে তবে সে ভাবাবেগের ভিত্তি হওয়া উচিত সাধু, শাস্ত্র এবং গুরুবাক্য।

শ্রীল ভক্তিবিনো ঠাকুর মহাশয় তাই সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে দিয়ে তাঁর হরিনাম চিন্তামণি গ্রন্থে বলেছেন যে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুদ্ধ ভক্ত ব্যতিত অন্যকে শুরু করিবে না-

যে অন্যায় শিখে, যেই শিক্ষা দেয় আর
উভয় নরকে যায়, না পায় উদ্ধার ।।
শুদ্ধভক্তি ছাড়ি, যিনি শিখিলেন বাদ।
তাহার জীবনমাত্র বাদ বিসংবাদ।।
সে কেমন শুরু হবে, উদ্ধারিবে জীবে।
আপনি অসিদ্ধ অন্যে কিবা শুভ দিবে।।
অতএব শুদ্ধভক্ত যে সে কেনে নয়
উপযুক্ত শুরু হয়, সর্বশাস্ত্রে কয়।।

(হরিনাম চিন্তামনি ষষ্ঠ পরিচ্ছেদ)

সাধারণ মানুষের ধর্ম বিষয়ক এই দুর্বলতার সুযো নিয়ে এইসব তথাকথিত অবতার বা গুরুরা তাদের স্বার্থসিদ্ধি করে মানুষকে বিপথগাম করে। সে সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে-

অচক্ষুরন্ধস্য যথাগ্রণীঃ কৃত।

স্তথা জনস্যাবিদুষো বুধো শুরু।

ত্বমকদৃক সর্বদৃশং সমীক্ষণো

বৃতোগুরুর্ণঃ স্বগতিং বুভুৎসতাম্।

 (মহারাজ সত্যব্রত মৎস্যাবতারের উদ্দেশ্যে স্তবস্তুতি করছেন) একজন অন্ধ যে নিজেই দেখতে পায় না, সে যেমন আর একজন অন্ধকে পথপ্রদর্শকরূপে গ্রহণ করে, তেমনি যে সমস্ত লো জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য জানে না, তারা একজন অসৎ মৃঢ় ব্যক্তিকে তাদের গুরুরূপে বরণ করে কিন্তু। আমরা আত্মজ্ঞান লাভে আগ্রহী, তাই সকল ইন্দ্রিয়ের অধীশ্বর আপনাকে গুরুরূপে বরণ করলাম। যেহেতু আপনি সূর্যের তো সর্বদর্শী এবং সর্বঃ তাই  আপনার শ্রীচরণে এবং আপনার শুদ্ধ ভক্তের চরণে আমরা আশ্রয় গ্রহণ করেছি। (ভাগবত /২৪৫০)

গুরুর প্রাথমিক যোগ্যতা কি?

শ্রীল প্রভুপাদ এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন যে, গুরুর প্রথম যোগ্যতা হচ্ছে, যে তিনি হলেন তার গুরুদেবের একজন আদর্শ শিষ্য প্রথমে নিষ্ঠাবান শিষ্য না হলে কেউ গুরু হতে পারে না। যদি কেউ তার গুরুর প্রতি শ্রদ্ধাবান না হয়, তাহলে কি করে সে গুরুর প্রতিনিধি হবে? কেউ যদি তার গুরুদেবের কাছ থেকে সবকিছু বিনয় বা নম্রতা সহকারে শেখে, তাহলে কিভাবে সে ঐসব ধ্যান-ধারণার কথা যথাযথভাবে উপস্থাপন করবে এবং তার ফলে কেমন করে গুরু পরম্পরার ধারা অক্ষুন্ন থাকবে?

যস্য দেবে পরা ভক্তিৰ্যর্থ দেবে তথা গুরৌ

তস্যৈতে কথিতা হ্যর্থা: প্রকাশন্তে মহাত্মনঃ ।।

ভগবানের ন্যায় যার গুরুতেও ঐকান্তিক ভক্তি আছে, সেই গুরুনিষ্ঠ মহাত্মার হৃদয়ই শাস্ত্ৰৰ্থ প্রকাশিত হয়। (শ্বতাশ্বতর উপনিষদ /২৩)

যখন শ্রীল প্রভুপাদকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, তার এই প্রচার কার্যে সাফল্যের রহস্যটি কি? তখন তিনি এই কথাগুলি বলেছিলেন, “আমি সর্বদাই আমার পারমার্থিক দীক্ষাগুরুর সন্তোষ বিধানের চেষ্টা করতাম। যদি আমি কোন একটা কাজ সঠিকভাবে করে থাকি তবে সেটা হল তার (শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের) মুখনিঃসৃত কৃষ্ণকথা খুব যত্ন সহকারে শ্রবণ কর।একমাত্র শ্রবণের দ্বারা গুরু কৃপার মাধ্যমে মানুষ কৃষ্ণভাবনার দার্শনিক তত্ত বক্স পারে। আর তা থেকেই পরম্পরা ধারাক্রমে সে অন্যের কাছে সেই তত্ত্বজ্ঞান পৌছে দিতে পারে।

তস্মাদ গুরুং প্রপদ্যেত জিজ্ঞাসুঃ শ্রেয় উত্তমম্।

শাব্দে পরে নিষ্ণাতং ব্রহ্মাণপশমাশ্রয়ম ।।

যিনি উত্তম শ্রেয় বস্তু আগ্রহী তিনি অবশ্যই এমনই একজন গুরুর চরণাশ্রয় করবেন যিনি শাস্ত্ৰসিদ্ধান্তে সুনিপুণ ভগবৎ অনুভূতি লাভ করেছেন এবং প্রাকৃত কোন ক্ষোভের বশীভূত নন(ভাগবত ১১//২১)

 শ্রীল প্রভুপাদ ছিলেন একজন বিশেষ নোযোগী শ্রোতা। তিনি উল্লেখ করেছিলেন কিভাবে তিনি শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের কথা শোনার জন্য বসে থাকতেন। একদিন ভক্তরা যাচ্ছিলেন নবদ্বীপ মন্ডল পরিক্রমায়। তারা বহু পূণ্যতীর্থ দর্শন করেছিলেন এবং শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। তার মধ্যে একটা জায়গা (সেটা কোনটা আমি ভুলে গেছি) ছিল যেখানে খারাপ পথে যেতে হবে, আর তাই ভক্তদের পছন্দ করতে বলা হয়েছিল। অর্থাৎ ভক্তদের ইচ্ছা হলে তারা পরিক্রমা দলের সঙ্গে গিয়ে সেই পুণ্যস্থানটি দর্শন করে পরদিন ফিরে আসতে পারেন কিংবা মূল শিবিরে অবস্থান করে শ্রীল ভক্তিসিদ্ধান্ত সরস্বতী ঠাকুরের প্রবচন শ্রবণ করতে পারেন। শ্রীল প্রভুপাদ ভাবলেন কোন একটা পুণ্যভূমি শুধুমাত্র দর্শন করতে যাওয়ার চেয়ে বরং গুরুবাক্য শ্রবণ করাই বেশি দরকার। তাই তিনি গুরুদেবের প্রবচন শ্রবণের জন্যেই রয়ে গেলেন।

শ্রবণায়াপি বহুভির্যো লভ্যঃ
শৃম্বন্তোহপি বহবো যং বিদ্যুঃ।
আশ্চর্যো বক্তা কুশলোহস্য লব্ধা
আশ্চার্যো জ্ঞাতা কুশলান্তশিষ্টঃ।।

সেই পরমতত্ত্ববিধায়ক জ্ঞানের কথা অনেকেরই শ্রবণগোচর হয় না, শ্রবণ করেও অনেকেই তাকে অনুভব করতে পারে না, কারণ তত্তবিৎ উপদেষ্টা দুর্লভ। যদিও আবার উপদেষ্টা লাভ হল কিন্তু শ্রোতা অতি দুর্লভ। (কঠোপনিষদ //)

মানুষ যদি শ্রদ্ধাসহকারে তত্ত্বজ্ঞান না শোনে আর নিজের মনগড়া ধ্যান - ধারণার রোপিত করে, তা হলে তো আসল ধ্যান-ধারণার পরম্পরানুক্রমে পৌছে দেওয়া যাবে না। সেটা বিকৃত হয়ে অন্য রকমের একটা কিছু হয়ে পড়বে। শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু ছিলেন এরই বিরোধী, আর তাই তিনি মহা পণ্ডিতকে বলেন, তুমি খুব বিদ্বান হতে পার কিন্তু যেহেতু তুমি আদি ভাষ্যকারকে অবহেলা করেছ, তাই তুমি বিচ্যুত। তারা যা ব্যাখ্যা করেছেন তা আমাদের অবশ্যই রক্ষা করতে হবে। আর সম্ভব হলে তার চেয়েও বেশি কিছু ব্যাখ্যা আমরা করলেও করতে পারি। কিন্তু তাদের মর্যাদা হানির মাধ্যমে মনগড়া ব্যাখ্যা করা। তাদের ধ্যান-ধারণার পরিপন্থী আমাদের মনগড়া, শাস্ত্র বর্হিভূত ধ্যানধারণাগুলি উপস্থাপন করি, তা হলে আমরা যথাযথ হলাম কি করে

আরোও জানুনঃ
চুলপড়ার ১৫ টিকারণঃ এখানে ক্লিক করুন
হাঁপানি থেকে মুক্তির উপায়ঃ এখানে ক্লিক করুন
উচ্চরক্ত চাপ নিয়ন্ত্রণ  চিকিৎসাঃ এখানে ক্লিক করুন

আজ থেকে প্রায় পাঁচ হাজার বৎসর পূর্বে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভগবদগীতার জ্ঞান প্রদান করেছিলেন কিন্তু পরে বিভিন্ন লো তাদের বিভিন্ন প্রকার মতবাদ গীতার ব্যাখ্যার মধ্যে জুড়ে দেওয়ায় গীতার আসল উদ্দেশ্য বিকৃত হয়ে পড়ে। তারফলে মানুষ বিভ্রান্তিতে পতিত হয়। তাই ভগবানের ভক্তের আকুল প্রার্থনায় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ স্বয়ং শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুরূপে এই ধরাধামে অবতরণ করলেন, নীতা ভাগবতের বাণী মানবকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য। বিদ্যালয়ে যেমন শিক্ষক নিজহাতে কলম নিয়ে ছো ছো ছেলে মেয়েদের শিক্ষা দেয়, তঁদ্রুপ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভুরূপে অবতীর্ণ হয়ে আমাদের শিক্ষা দিলেন, কিভাবে ভগবানকে ভালবাসতে হয়। সেই জন্য আসল গুরুর কাজ হচ্ছে তার শিষ্যকে ভগবানের কাছে আত্মসমর্পণ করার জন্য উপদেশ দেওয়া এবং এটাই শুরুর প্রকৃত লক্ষণ। এই একই উদ্দেশ্যে শ্রীচৈতন্য মহপ্রভু শিক্ষা দিলেন-

যারে দেখ, তারে কহকৃষ্ণ’ - উপদেশ।

আমার আজ্ঞায় গুরু হাঙ্গা তার এই দেশ।।

যার সঙ্গে তোমার সাক্ষাৎ হয়, তাকেই তুমি ভগবদগীতার শ্রীমদ্ভাগবতের প্রদত্ত শ্রীকৃষ্ণের উপদেশ প্রদান কর। আমার আজ্ঞায় এই গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করে তুমি এই দেশ উদ্ধার কর। (চৈঃ চঃ মঃ /১২৮)

যে গুরু কৃষ্ণভাবনায় যুক্ত নন, তাকে গুরুরূপে গ্রহণ করা উচিত নয়। যারা ভগবানের ভক্ত নয়, যারা নিজেদের যশ, মান, প্রতিষ্ঠা বা নিজেদেরকে ভগবানের অবতার বলে জাহির করতে চায়, তারা কখনই শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্ৰত্ত হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র-

হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
কীর্তন করার পক্ষপাতী নয়।

 এখানেই আজকের আলোচনা শেষ করছি এই পোস্ট সম্পর্কে আপনার যদি কোন মতামত বা জিজ্ঞাসা থেকে বা কোন বিষয়ে জানতে চান তাহলে কমেন্ট করে জানাতে দ্বিধাবোধ করবেন না

উপরিক্ত আলোচনা আপনার কাছে ভালো লাগলে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে (ফেসবুক, টিউটার, হোয়াটেপ্স ইত্যাদি) সেয়ার করে অন্যকে জানার সুযোগ করে দিবেন 

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন